।
( জীবনানন্দের প্রতি প্রণতি)
--------------------------
বুড়ি চাঁদ মৃত্যুর প্রহর গোণে,
থুত্থুরে অন্ধপেঁচাটাও দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে,
অনেকদিন কেটে গেলো শিশিরের শব্দের মত সন্ধ্যা নামতে দেখিনা;
বনলতা সেনের চোখে তাকিয়ে দেখি পাখির নীড়ের ভেতরে জন্ম লয় সহস্র নক্ষত্রেরা,
সুরঞ্জনা একাকীত্বের কষ্টে শেষে ওই যুবকের সাথে চলে গিয়েছে,
তাঁদের সুখি দাম্পত্য জীবনে জীবনানন্দ
মৃত্যুর জীবনদেবতা হয়ে বেঁচে রয়েছেন।
হাওয়ার রাতে ধূসর পান্ডুলিপি হাতে নিয়ে হাজার বছর ধরে হেটে চলেছি-
বিশ্বসাহিত্যের অলিগলি,রাজপথে,
কখনোবা দিগন্তবিস্তৃত মাঠের মধ্য দিয়ে কোনো মেঠোপথ ধরে,
নিত্য আবিষ্কার করছি অজস্র নির্জন স্বাক্ষর,
পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে গেলে পর অশত্থের কাছে মৃত্যুপ্রার্থনায় নত হতে চেয়ে,
নক্ষত্রের রাতে ঘাসের বুকে ঝরে পরি।
তখনও হ্যারিসন রোডে ভিখিড়ির সাথে দেখা হয়,
বেহুলার পায়ের ভাঁট ফুলের কান্নাগুলো জেগে থাকে বিশালাক্ষীর চোখসমুদ্রপদ্মের ভেতরে।
ততদিনেও জীবনানন্দ বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাননি,
মৃত নক্ষত্রের জ্বলন্ত ছাইয়ের ভেতর চাপা স্ফুলিঙ্গের নাম জীবনানন্দ,
শিশিরের বিন্দুর ভেতর জমে থাকা বিষন্নতার নাম জীবনানন্দ,
হাজার বছরের অক্লান্ত পথ হেটে চলা আর বনলতা সেনের চোখ তুলে তাকানো দেখতে পাবার নাম জীবনানন্দ,
শিকাড়ির ক্যাম্পে মৃত ঘাইহরিণির রক্তমাখা দেহ,
অস্থির পোট্রোল ঝেড়ে ফেলা মোটর কারের ধোয়া,
আততায়ী ট্রামের চিৎকার, আর
পাজরভাঙা কবির কোষের ভেতরে জ্বলে ওঠে নক্ষত্রআলোক;
তখনই মনে পরে যায়-একদিন এই বাতাসে শ্বাস নিয়ে,
এই আকাশের নিচে বিচরণ করে বেঁচে ছিলেন এক শুদ্ধতম কবি।
সুদর্শন ওড়ে ওড়ে তারাদের প্রতিবেশী হয়,
আবার ধাঁনসিঁড়িটির তীরে ফিরে আসা প্রতিটি শঙ্খচিল,শালিক,
আমাদের চেতন-অচেতন বোধির মধ্যে জেগে থাকা বোধ,
তারাটির সাথে তারাটির কথা না হওয়ার গ্লানি,
লাশকাটা ঘরে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা লোকটির বিপন্ন বিস্ময়ে মুহূর্তের মধ্যেই
হৃদয়ের গভীরে তোলা তুমুল আলোড়ন,
এ সবকিছুতে শুধু একটি নামই জ্বলজ্বল করে-জীবনানন্দ দাশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৩০