কবি জীবনানন্দ দাশের মত সফল হইতে পারার সামান্য ইশারাও যদি পাই তাইলে আমি সবকিছু ছেড়ে দিয়ে রাস্তার ফকির হয়ে যাইতে রাজি আছি। যারা তারে ব্যর্থ বলেন তাদের ল্যান্সে দেখলে আপনেও তারে ব্যর্থ, হতাশ ছাড়া কিছুই ভাববেন না। এই ল্যান্সটাতো হইলো বর্তমান সময়ের মোটিভেশন ব্যাবসায়ীদের চোখ কিংবা তথাকথিত অর্থবিত্ত-চাকরি-ক্ষমতার প্রতি লোভ আর এইসব ভোগ করে আত্মশ্লাঘায় ভুগতে থাকা লোকজনের চোখ।
.
জীবনবাবুর পরে বাংলা ভাষায় যত মানুষ কবিতার একটা লাইনও লেখার চেষ্টা করছে তারাই বুঝবে জীবনবাবু আসলেই কী আছিলেন!
জীবিতাবস্থায় তরুণ কবিদের কোনরকম পত্রিকার সম্পাদক, কোন সাহিত্য গোষ্ঠীর নেতা না হইয়াও যেভাবে আকর্ষণ করছেন এবং মৃত্যুর এই এত বছর পরেও এত এত লোকজন যে তার কবিতায় খায়, ঘুমায়, বাইচা থাকে; তার কবিতার নেশায় ডুইবা থাকে তার মাঝে কী কাউরে ডাইকা বলা লাগছে যে আমি জীবনানন্দ আপনেরা আমার কবিতা পড়েন? কিংবা এমন কোন দল/সংগঠন কী আছে যারা জীবনানন্দরে প্রমোট করছে? কিংবা সরকারিভাবেই তার জন্ম-মৃত্যু দিবসে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীর মত কোন অনুষ্ঠান কিছু আছে? নাই। তারপরেও সবাই এরকম পাগলের মত এই ব্যর্থ হতাশ কবির কবিতা পড়ে কেন? যদি পড়েই থাকে সেইটা নিশ্চই শুধুমাত্র তার কবিতার টানেই! একজন কবি কবিতা লেখা ছাড়া আর কিছু না করেই, কোন সাপোর্ট না পেয়েই এই সময়ের লোকজনরে নিজের কবিতার দিকে যদি এভাবে মোহগ্রস্ত করে রাখতে পারে, সেই কবিরে আপনি তার ব্যক্তিজীবন দিয়াই খালি লুজার ক্যাম্নে বলেন মিঞা! আপনে নিজেই তো একটা বিরাট লুজার যে এমন প্রভাবশালী এমন মদির নেশায় ডুবায় রাখা কবিরে চিনতে পারলেন না, ব্যর্থ বলে চালায় দিলেন!
.
আবার রবীন্দ্র-নজরুলের ধর্মীয় পরিচয় নিয়া, হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়া, আল মাহমুদের অবস্থান নিয়া যখন কেউ আমারে কেউ কিছু বলে আমার উত্তর হয় যে একজন কবিরে যখন আপনে বিচার করতে যাইবেন তখন তার কবিতা দিয়াই বিচার করা উচিত। রবীন্দ্র-নজরুল ধর্মপ্রচার করেন নাই, কবিতা লিখছেন। জীবনানন্দও শুধুমাত্র একজন কবিই, পার্টটাইম কবি না, ফুলটাইম কবি। যেইজন্য অন্য আলবাল কিছু তারে দিয়া হয়নাই। হুমায়ূন আহমেদ, আল মাহমুদের বেলাতেও পার্থক্য নাই কোন।
.
এই জীবনানন্দ হয়তো কম খাইছেন, কষ্ট পাইছেন, শান্তি পান নাই, কিন্তু তার নিজের তৈরি যে কি একটা শান্তির জগত আছিলো! সেটা তিনি নিজে একলা ভোগ না কইরা কবিতায় উন্মুক্ত কইরা দিছেন! চারিদিকে বিরাট বিশাল ক্যাওসের মধ্যে থেকে আপনে তার এই আশ্চর্য জগতে ঢুইকা শান্তিতে আরামে, নির্লিপ্তিতে থাকতে পারবেন। আর এই নেশার টানেই তো আজকালকার অনেকেই দেখি এই আরামের ফাদে পইরা জীবনবাবুরে হৃদয়ের অধীশ্বর বানায় লইছেন! সাধে নেন নাই। আশর্য, আজব, মোহনীয় জগতের লোভেই।
.
জীবনানন্দ কইছিলেন -
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
.
আমিও মনে মনে সফলতার প্রতি এই নির্লিপ্তিটার মোহে পইরা যাই। গভীরভাবে অচল মানুষ হয়া থাকতে চাই। জীবনানন্দের মত, আমার প্রিয় মৃত্যুর জীবনদেবতার মত আমি ব্যর্থ হবার স্বপ্ন দেখি! আমার মতন পাগল অনেক আছে। তাইলে এইটা একজন কবির বিরাট সাফল্য না! একটাই আফসোস এইটা জীবনবাবু দেইখা যাইতে পারলেন না।
১৭-০২-২০২১
ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২৭