
ভার্সিটি থেকে রাত নয়টায় ক্লাস শেষ করে ফেরার পথে বৃষ্টি-পরবর্তী বাতাসে আমি উষ্ন হচ্ছিলাম। একেকটা নাম ভালোবাসার ওম নিয়ে এসে আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। সেই ওম বৃষ্টির শীতলতাকে ছাপিয়ে আমাকে দিচ্ছিলো উষ্নতার আলিঙ্গন। একেকটা নাম…একেকটা সম্পর্ক; শ্রদ্ধার…বন্ধুত্বের…স্নেহের…দুষ্টুমীর; প্রত্যেকটি সম্পর্কের সাথে জড়িয়ে আছে সীমাহীন ভালোবাসা…অন্তহীন আবেগ।
“যাত্রা যখন শুরু হলো শূণ্য ছিলো সকল পাতা,
তোমায় কাছে পেয়ে দেখি পূর্ণ আমার লেখার খাতা”
ভাই-বোনরা সবাই লিখিয়ে। ছোটবেলা তাদের গল্প কবিতা পড়ে মুগ্ধ আমি। কত পেন্সিল ভোতা করতে করতে নাই করে ফেলেছিলাম, অথচ একটা অক্ষর বের হয়নি আমার ভেতর থেকে। আজ ব্লগে আমার দুই বছর হয়ে গেছে। সেই কবে ঘটা করে নিজের জন্মদিন পালন করেছি মনে পড়েনা। ভার্সিটি লাইফ শুরু হবার আগেই হবে সেটা। তখন জন্মদিন মানেই কেক কাটা, বন্ধুদের নিয়ে হুল্লোর করা্। আস্তে আস্তে দিনগুলো সব এমন হয়ে যায় যে নিজের জন্মদিনতো মনে থাকেইনা, অন্যদেরটাও ভুলে যাই। অন্যদেরটা আমি ইচ্ছা করে ভুলে যাইনা। ব্যস্ততা আমাকে ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু নিজেরটা আমি মনে রাখতে চাইনা বলেই একসময় থেকে ভুলতে শুরু করি। নিজের জন্মদিন আসলেই আমার কান্না পেতে শুরু করে। বয়স বেড়ে গেল! আর কিছুদিন পরেই চোখের নীচে বলিরেখা পড়তে শুরু করবে। কিন্তু সেটা যারা আমাকে ভালোবাসে তারা বোঝেনা। তারা আমাকে দিনটা মনে করিয়েই দেবে। মজার মজার উইশিং ম্যাসেজ, শুভকামনা আমাকে মনে করিয়ে দেয় সেই কথাগুলিই …. “যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে/ কেঁদেছিলে, হেসেছিলো সবে”। আমার বয়স বেড়ে গেলে কার কি!!

অথচ এই বয়স বাড়াটাই মাঝে মাঝে কি আনন্দদায়ক হতে পারে সেটা কি জানতাম আমি!! জানলাম ব্লগে এসে। আমি ব্লগিং করি; আমি একজন ব্লগার…ভাবতে যেমন ভালো লাগে, বলতেও ভালো লাগে। কেউ যখন বলে “তুমি ব্লগিং করো?” তখন কি এক ভালো লাগায় ভরে যায় আমার মন। আমার মনে হয় তার কন্ঠে কিছুটা হলেও বিষ্ময় মাখা আছে। বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলি “হ্যাঁ”। ভাবখানা এমন ভারী এক নামী দামী ব্লগার আমি।



কিন্তু তারপরেও খুবই স্বাভাবিকভাবে এখানেও আমি আমার জন্মদিন ভুলে যাই। ব্লগে ঢুকেই আমি প্রথমে চলে যাই আগের দিন যেসব পোস্টে কমেন্ট করেছি সেসবে। উত্তরগুলো দেখার জন্য। আমার কথার উত্তর কেউ না দিলে আমার খুব খারাপ লাগে। মন খারাপ হয়ে যায়। সেই মন খারাপ সহজে ভালো হতে চায়না। সারাদিন আমার মাথার মধ্যে ঘোরে “আমাকে ইগনোর করেছে”। এই ব্যাপারটা ব্লগে এখনও ঘটেনি। কেউ আমাকে ইগনোর করেনি কখনো। তাইতো বলি এই্ সম্পর্কগুলো কেবলই আত্নার সম্পর্ক। এখানে অনেক চাওয়া থাকে। কিন্তু সেই চাওয়াগুলো থাকে দ্বিধাহীন; সেখানে কোন স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্য কাজ করেনা। আর তাই চাওয়াগুলো পূর্ন হয়ে যায় সময়ের আগেই। এত প্রাপ্তি যেখানে, সেখানে সময়ের হিসেব কি করে থাকে! আমি কখনো দেখিনা কতদিন এখানে আমি কাটিয়ে ফেললাম। ওখানে আমার চোখ কখনই যায়না। দুই বছর হয়ে গেল সেই খবর আমাকে দিলো ত্রাতুল। ত্রাতুলের নামটা যখন বললাম তখন আরেকটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে এই ছেলেটার সম্পর্কে (ও যে ছেলে ব্লগের সবাই সেই খবর জানে কিনা আল্লাহ মালুম; নাইলেতো গোমর ফাঁস


দুই বছর উপলক্ষে কোন লেখা দিলামনা কেন সেটাই জানতে চাইছিলো ত্রাতুল। তখনি এসে দেখলাম “২ বছর ৪ দিন”। কিন্তু মনে হচ্ছে লেখার ক্ষমতা আর নেই আমার (আগে মনে হয় ছিলো!!

“ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে,
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে,
এবারই প্রথম তুমি৷”
কি এক অধিকার আমার উপর ওদের; ওদের উপর আমার। পরোক্ষ কিছু সম্পর্ক ছাপিয়ে যায় সবকিছুকে…সব সম্পর্ককে। মাঝে মাঝে কেউ কেউ সাময়িক প্রস্থান করে। করি সেটা আমিও। তার মূল কারনটাই থাকে ব্যস্ততা। আবার ফিরে আসি অমোঘ টানে। মনে করিয়ে দিতে চাই আ্মাকে নতুন করে। এসে বলি…
“এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব ? পাচ্ছো না ?
একটু দাঁড়াও আমি তৈরী হয়ে নিই ।“
ভালোবাসি তোমাদের ………………… খুউব খুউব খুউব ভালোবাসি।
ভালো থেকো সবাই………….সারাবেলা…………………..সারাক্ষন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:৪৩