একটি নিতান্তই সাদামাটা গল্প বলি ।
ঘটনাটি এমন গুরুতর নয় । আমার এক বন্ধুবর , বড়ই দুশ্চিন্তাপ্রবন । নির্বাচনের আগে নেতাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অন্ত হইতে পারে,কিন্তু তার দুশ্চিন্তার কোন অন্ত নাই । কিছুদিন আগের কথা । ঘুরতে যাব এক জায়গায় তাকে নিয়ে । মনে বড়ই আনন্দ নিয়ে কমলাপুর গিয়ে হাজির । আজ্ঞে না, আপনি যেই কমলাপুর রেলস্টেশনের কথা ভাবছেন সেইখানে না । আমার বন্ধুটির একটু সমস্যা আছে । বাসের ভেতর একটু পর পর কমলালেবুর গন্ধ না শুঁকলে তার বমি পায় । যদি শুধু শুঁকলেই কাজ হত,তাহলেও কথা ছিল । কমলা শুঁকার সাথে সাথে সেটি খেয়ে না ফেললে নাকি ব্যপারটা কেমন লাগে । তাই কোথাও বেড়াতে গেলেই আমরা প্রতিবার ওই জায়গাটি থেকে বিপুল পরিমাণ কমলা কিনি ।আমরাই জায়গাটার নামকরণ করেছি কমলাপুর । যাই হোক,নির্দিষ্ট সময়ে নৈশ বাস ছাড়ল(আসলে,ওই বাসের কাউন্টার থেকে এক কাপ করে চা খাওয়ানো হয়েছিল, তাই আর আসল কথাটি বললাম না যে,আমাদের বাস পুরো দুই ঘন্টা দেরিতে ছাড়ছে !) । গাড়ির চাকা ঘুরতে শুরু করার সাথে সাথেই আমার বন্ধুটির দুশ্চিন্তার যেন রীতিমত রেস শুরু হল ।বাসের ড্রাইভারের হাব-ভাব, চালানোর ভঙ্গি, চালানোর গতি,পেছনের সিটে বসা যাত্রী-কোনো বিষয় নিয়েই তার দুশ্চিন্তার দূর হচ্ছেনা । বাস যতবারই দ্রুতগতিতে বাঁক নেয়, সে আঁতকে উঠে এই ভেবে যে বাস বুঝি খাদে পড়ছে । যতবারই বাস ঝাঁকি খায়, সে ঝিমুতে ঝিমুতে ‘লা ইলাহা......’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে । আমি তার আচরনে অভ্যস্ত, তাই কানে হেডফোন গুঁজে দিলাম । ঝিমুনি-টিমুনি নয়, এইবার লক্ষ সরাসরি ঘুম । আমি যে একান্তই নির্ভার মানুষ, তা কিন্তু নয়(প্রায় ৮০ কেজি ওজনের বিশাল বপুর গর্বিত অধিকারী) । তবুও, আমার দুশ্চিন্তার কোন প্রভাব দেশের কর্মকাণ্ডে পড়বেনা নিশ্চিত হয়ে নির্ভার হওয়ার ভান করি আর কি ! সেই যাত্রায় তেমন কিছু হয়নাই । কোন এক জায়গায় আমাদের বাস ও বিপরীত দিক থেকে আসতে থাকা একটি ট্রাকের চাকা রাস্তার মাঝে সৃষ্ট একটি গর্তে একই সাথে পড়ে ও সংঘর্ষ বাঁধে । ট্রাকের সামনের দিকের লোহা ভেদ করে যায় আমার বন্ধুটির হাঁটু । ছোট্ট একটা সড়ক দুর্ঘটনায়(পরবর্তী দিন একটি জাতীয় দৈনিকের ছোট কলামে সেটিকে ছোট্ট দুর্ঘটনাই বলা হয়েছিল) আমি হারালাম আমার দাঁত আর আমার বন্ধুটি হারাল তার পা । কিন্তু বাদ দিন তো, এই দেশে এর চাইতে ঢের বেশি জরুরী ঘটনা ঘটে। তাই আমরা ধরে নিতেই পারি খারাপ রাস্তা অথবা এই খারাপ রাস্তার কারনে দৃপ্তময় জীবনগুলোর পঙ্গুত্ববরণ- কোনোটাই তেমন গুরুতর কিছুই নয় । শুধু সীমাহীন দুশ্চিন্তা যে সেই অর্থে ফলপ্রসূ কোনো সমাধান নয়,প্রমানিত হইল ।
একটি (দুঃ)স্বপ্ন দেখছিলাম ( দেখুন ,লেখকদের আবাস ভাবের জগতে। গল্প শেষের দাবিতে লেখকরা চাহিদামত লেখায় বিরতি দিয়ে দু-একটা স্বপ্ন দেখে নিতেই পারেন ।দ্যাটস নট অ্যা বিগ ডিল ) । স্বপ্নটি এরকমঃ আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছি । রাস্তাটা বেশ ফাঁকা । কিছুক্ষন আগেই গুরুত্বপূর্ণ একটি মীটিঙে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ওই রাস্তা দিয়ে গেছেন । হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ল একদম ছোট পার্স সাইজের ব্যাগ । কি মনে করে উঠিয়ে নিলাম । কিছুক্ষন তাকিয়ে ভাবলাম, না খুলে তো আর এর মালিকের খোঁজ করা যাবেনা । খুলে দেখি ভেতরে “ছুপার কনফিডেনশিয়াল” লেখা একটি ডিভিডি । আমিও তো মানুষ বই আর কিছু নয়, তাই বোধহয় ‘কনফিডেনশিয়াল’ লেখাটি দেখে ডিভিডি-টি একবার চালিয়ে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না । মানবিক তাড়নার প্রবল চাপে , বাসায় এনে চালানোর শুরুতেই তো আমি এক্কেবারে “হতবাকম্ভিত”(হতবাক,বাকরুদ্ধ ও স্তম্ভিত’র যৌগিক রুপ আর কি ) ! দেশের মন্ত্রীপরিষদের সকলের আয়-ব্যায়ের যাবতীয় তথ্য আমার হাতে(সাদা-কালো সহ আরও যেন কীসব রঙের টাকা থাকে,সব কিছুর হিসেব সহ)। তারপর অতি দ্রুত একসময় দরজায় কড়াঘাত পড়ল । সরকারের বিশেষ বাহিনী আমাকে গ্রেফতার করে গোপন হেফাজতে নিল । রাষ্ট্রদ্রোহ এবং দেশীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি ও পাচারের অভিযোগ আনা হল আমার বিরুদ্ধে । আমার পেছনের বিদেশী মদদদাতা চক্র এবং বিরোধীদলের ইন্ধন আছে কী না খতিয়ে দেখা শুরু হল । আমার মুক্তির দাবিতে অনেক গুলো ফেসবুক ইভেন্ট, গ্রুপ, পেইজ খোলা হল । মানবাধিকার সংস্থাগুলো যখন সরকারের বিভিন্ন মহলের কাছে আমার ব্যাপারে জবাব চেয়ে চাপাচাপি করতে থাকল, তখন সংশ্লিষ্ট মহল একটি কথা বলেই মাইক্রোফোন অফ করে চলে যেতে লাগল । কথাটি ছিল-“ এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যপার । এ ব্যাপারে এখনি কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছিনা ।”
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল (ভেঙ্গে দিলাম আর কি!)। এই স্বপ্ন আর দেখতে ভাল্লাগছিলনা । তার চাইতে কিছুক্ষন প্রান খুলে হাসুন তো । আমার কথা শুনে কেন অযথা হাসবেন-এটা নিয়ে আবার শুধু শুধু ভাবনা না করে প্রান খুলে হাসতে থাকুন।
আচ্ছা একটা পার্সিয়ান জোকস বলিঃ এক তুর্কিশ ভদ্রলোক গ্রাম পরিদর্শনে গেছেন। আচমকা তুমুল বৃষ্টিপাত শুরু হল । থামার নাম নেই । ভারি বর্ষণ রুপ নিল বন্যায় । সেই তুর্কিশ ভদ্রলোক তার হাঁটু সমান পানি নিয়ে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ালেন । এক ফায়ারসার্ভিস কর্মী তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ালেন । কিন্তু তুর্কিশ ভদ্রলোক বললেন, “আমার খোদা আমায় বাঁচাবেন ।” ফায়ারসার্ভিস কর্মী চলে গেলেন । পানি কোমড় সমান হল । পাশ দিয়ে এক মাছ ধরা নৌকা যাচ্ছিল । সেই মাঝি চাইল তাকে সাহায্য করতে । কিন্তু সে তুর্কিশ ভদ্রলোক আবার বললেন, “আমার খোদা আমায় বাঁচাবেন ।” পানি বাড়তেই থাকল । তুর্কিশ ভদ্রলোক বাধ্য হলেন, একটি বাসার ছাদে উঠতে । এগিয়ে এল একটি হেলকপ্টার । কিন্তু তুর্কিশ ভদ্রলোক সাফ জানিয়ে দিলেন, “আমি তোমাদের ওখানে উঠছিনা, আমার খোদা আমাক বাঁচাবেনই।” কিন্তু, তার নির্বুদ্ধিতার পরিনাম হল বন্ন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু । মৃত্যুর পর তাকে তার খোদার কাছে নিয়ে যাওয়া হল । সেই তুর্কিশের প্রথম প্রশ্ন, “হে খোদা, তুমি আমায় বাঁচালে না কেন ?” খোদা উত্তরে বললেন, “আমি তিনবার চেষ্টা করেছিলাম,একবার ফায়ার সার্ভিস কর্মী, পরের বার জেলে ও সব শেষে একটি হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ।”