somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নরসুন্দরের কাছে যা শিখলাম

০৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহল্লার সেলুনের সামনে গিয়ে দেখি। পুরো দোকান খালি! ফ্লোর পর্যন্ত পরিষ্কার, যেন এখানে আজ কেউ চুলই কাটেনি।

ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলাম—

— কী রে ভাই, সেলুন এত ঝকঝকে কেন? একটা চুলও দেখা যাচ্ছে না! ঘটনা কী?
— ভাই রে ভাই, ধান্দা নাই রে ভাই ধান্দা নাই। মানুষের পকেটে টাকা নাই, চুলও কাটে না।
— কী বলো! মানুষ চুল কাটে না?
— কাটে, কিন্তু অনেক কম। সব ব্যবসায় একই অবস্থা!

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইলাম। একটা সময় এই সেলুনগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও জায়গা পাওয়া যেত না। এখন একদম ফাঁকা!

— তোমার কাস্টোমার নিয়ে আইলাম, দাও আমার চুল কয়টা একটু ছেঁটে দাও।
— বসেন ভাই।

চেয়ারে বসতেই সে গায়ে কালো কাপড়টা জড়িয়ে দিল। তারপর চুলে/মুখে পানি স্প্রে করতে লাগলো। চোখে পানি পড়তেই আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। সারাদিন রোজা রেখে শরীর এমনিতেই একটু ক্লান্ত লাগছিলো। একটু ঘুম ঘুম আসছিলো তাই আর চোখ খুললাম না। চোখ বন্ধ করে ভাবছিলাম এই মহল্লার সেলুনেই ছোট বেলা থেকেই চুল কাটতাম। তখম আব্বু হাত ধরে নিয়ে আসতো সেলুনে। পুরোনো দিনের ছবিগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

তখন চেয়ারের ওপরে কাঠের একটা তক্তা বসিয়ে দিত, যেন উচ্চতা ঠিক থাকে। আব্বু কোল তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিতেন আর দোকানিকে বলতেন, “একদম ছোট ছোট করে কেটে দিও! চামচাটা করে দাও!” মানে চুল এতটাই ছোট করে দিতো, যেন চামড়ার সঙ্গে লেগে থাকে। সেই দিনগুলো ছিল সুন্দর। চুল কেটে বাসায় আসার সময় কোন একটা খেলনা বা খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ে আসতাম।

তখন এই সেলুনগুলো কখনোই খালি দেখতাম না। এখন এত ফাঁকা দেখে কেমন জানি একটু কষ্ট লাগলো

আমার ভাবনার মাঝে নাড়া দিয়ে ছেলেটা বললো—
— বুঝছেন ভাই, প্রথম রোজার দিন খুব কষ্ট হইছিলো! প্রেশার একদম ডাউন হয়ে গেছিলো। তারাবীহও পড়লাম পুরো ২০ রাকাত, শরীর আরও খারাপ লাগলো।
— তুমি স্যালাইন খাও নি?
— না ভাই, খাইলে কী হবে? আমার তো সবসময় প্রেশার লো থাকে। রাতে বাসায় যাওয়ার সময় হাঁসের ডিম নিয়া গেলাম, রাতে আর সেহরিতে খাইলাম। সাথে খেজুরও খাইলাম। দেখলাম, খেজুর খাইলে ভালো লাগে!

আমি মাথা নাড়লাম।
— হ্যাঁ, খেজুর তো অনেক উপকারী! আমিও খাই।
— এবারের খেজুরের দামও কম।
— কম? কই, যা আছে মোটামুটি!
— হ, কম না হলেও বাড়েও নাই!

এমন সময় কাঁচের দরজা ঢেলে ঢুকলো ছেলেটার বড় ভাই। সেও এই সেলুনেই কাজ করে। মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। বললো—
— কাস্টমার নাই! কী যে হবে! চলবো কিভাবে?
ছেলেটা বললো—
— হবে আর কী, এখন তো মাত্র রোজা শুরু!

তারপর হঠাৎ মাথা নিচু করে বললো—
— আল্লাহ কখন যে এই নাপিতের কাজ থেকে মুক্তি দিবো!

বলেই দোকান থেকে বের হয়ে গেল।

আমি চুপচাপ বসে ছিলাম। কিন্তু ঠিক তখনই ছেলেটা আমাকে এমন একটা প্রশ্ন করলো, যা শুনে আমি থমকে গেলাম।

— ভাইয়া, যদি দুনিয়ায় সব সুখ পেয়ে যাই, তাহলে পরীক্ষা কিসের হবে?

আমি একদম থেমে গেলাম।

— মানে?
— ধরেন, আমার অনেক টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, সুখ-শান্তি সবই আছে। এরপর আমি আল্লাহর ইবাদত করলাম, ভালো কাজ করলাম, ঈমান নিয়ে মারা গেলাম। তাহলে আমার পরীক্ষা কিসের হলো?

আমি একটু ভেবে বললাম—
— আসলেই তো! দুঃখ-কষ্ট, অভাব যদি না থাকে, তাহলে আমরা কিভাবে আল্লাহর কাছে পরীক্ষা দেব? হয়তো এজন্যই আমাদের জীবনে নানা সমস্যা থাকে, যেন আমরা আল্লাহকে ডাকি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই। কঠিন সময়গুলো আমাদের পরীক্ষা নেয়, আর আমরা তখন বুঝতে পারি, সত্যিকারের বিশ্বাস কী! এটাই হয়তো ঈমানি পরিক্ষা।

ছেলেটা মাথা ঝাঁকালো। তারপর বললো—
— দেখেন ভাই, ধরেন, মারা যাওয়ার পর আমরা ছোট জান্নাত মানে জান্নাতুল খুলদ বা যেটাকে "চিরস্থায়ী জান্নাত" বলে ঐটা যদি তখন আফসোস লাগবে, কেন আমরা আরও ভালো কাজ করলাম না! করলে আর একটু বড় জান্নাত মানে আল-মাকামুল আমিন পেতাম যা নিরাপদ জান্নাত, যেখানে কোনো বিপদ থাকবে না। বুঝচ্ছেন ভাই জান্নাত পেয়েও আমাদের আফসোস হতো!

আমি তার কথায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সত্যিই তো!

আমরা যা পাই, তা নিয়ে কেন খুশি থাকি না? ১০০ থাকলে ২০০ চাই, হাজার থাকলে লাখ চাই। এই অদৃশ্য চাহিদার মাঝে আমরা এতটাই হারিয়ে যাই, যে কখনো বুঝতেই পারি না, আমাদের আসল প্রয়োজন কী। আমরা যা কিছু পাই, তার পরেও মনে হয়, আরও কিছু পাওয়া বাকি আছে। এই অবিরাম চাওয়ার ফলে কখনোই আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারি না, আর আমাদের মনের মধ্যে এক অস্থিরতা লেগে থাকে। আমরা সবসময় সামনের দিকে তাকিয়ে থাকি, অতীতের শান্তি আর অর্জনগুলো ভুলে যাই। অথচ, একে একে যখন আমাদের চাহিদা পূর্ণ হতে থাকে, তখনও মনে হয়, আরো কিছু চাই, যেন কখনো থামতে না হয়। এই পরিস্থিতি আমাদের জীবনের স্বস্তি কেড়ে নেয়, কারণ কখনো আমরা অনুভব করি না, যেটুকু আছে, সেটিই যথেষ্ট। আমাদের বলতে হবে আলহামদুলিল্লাহ। আমার চাহিদার শেষ এখানেই
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:০৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সামনে বিপুল, বিশাল চ্যালেঞ্জঃ মোকাবেলায় কতটুকু সক্ষম বিএনপি?

লিখেছেন শেহজাদ আমান, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



১. ভুল রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, দূরদর্শিতার অভাব

বিএনপি বাংলাদেরশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। লোকবল ও জনপ্রিয়তায় তাঁর ধারেকাছেও নেই অন্যকোনো রাজনৈতিক দল। মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক ধারায় আছে বলেই বাংলাদেশের মধপন্থী ও উদারপন্থী... ...বাকিটুকু পড়ুন

চিঠি।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৩০



চিঠি: এক হারিয়ে যাওয়া অনুভূতির নাম

চিঠি—শুধু একটুকরো কাগজ নয়, এটি আবেগের স্পর্শ, অপেক্ষার মধুরতা, ভালোবাসার নিঃশব্দ উচ্চারণ। এক সময় মানুষের ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল এই চিঠি। স্বামী লিখতেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ডিফেন্স গ্যালারী Defence gallery

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:০১

মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটির মরদেহ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হেলিকপ্টার যোগে নিয়ে যাওয়া হলো নিজ বাড়িতে
ঢাকা ১৩ মার্চ ২০২৫ (বৃহস্পতিবার): মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ ১৩ মার্চ ২০২৫ তারিখ দুপুর ০১:০০ টায় সম্মিলিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমা করবেন আরেফিন সিদ্দিক স্যার..

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭


আরেফিন সিদ্দিক স্যারের লাশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসের সাথেই সংযুক্ত হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রাখা। শহীদ মিনারেও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেবে না, ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে হবে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাথর চোখের কান্না- ৩

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১

অন্ধকারের ভাবনা.....

চোখের সমস্যার জন্য নানাবিধ টেস্ট করিয়েছি। যার মধ্যে অন্যতম Ophthalmoscopy, Funduscopy, Optic fundus, OCT (Optical Coherence Tomography এছাড়াও যেহেতু মাথায় যন্ত্রণা থাকে সেজন্য CT Scan এবং MRI করতে হয়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×