স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জীবনের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে ভুঁড়ি। যারা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন তারা অল্প একটু ভুঁড়ি হলেই কোমর বেঁধে নেমে যান তা দূর করতে ! আবার আরেক শ্রেণীর মানুষ, যারা সাধারণতঃ আলসে বলে পরিচিত, তারা আবার ভুঁড়ি আভিজাত্যের প্রতীক (!!) এই অজুহাতে এই অভিজাত বস্তুটিকে আরও সুন্দর করতে উঠে পড়ে লেগে যান
কিন্তু এই অভিজাত বস্তুটি যে আপনার আভিজাত্যকে এক সময় ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারে তা মাথায় রাখা জরুরী। ভুঁড়ি হওয়া আপনার দেহের ইঙ্গিত যে এই দেহযন্ত্রটি আপনার ঠিকমত চলছে না এবং তা অতিসত্বর ঠিক করা দরকার। ভুঁড়ি হৃৎপিণ্ড, শ্বাসযন্ত্র, গলব্লাডার এমনকি মস্তিস্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। ভুঁড়ি হার্ট এ্যাটাক, ডিমেনশিয়া (মস্তিস্কের রোগ), ডায়াবিটিস, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের অন্যতম কারণ। তাই সুস্থ ও সবল থাকতে হলে ভুঁড়ি দূর করা যারপরনাই জরুরী।
ভুঁড়ি দূর করা কিন্তু খুব কঠিন কোন বিষয় না। খুব সহজেই এই বিড়ম্বনাকে তাড়ানো যায়। শুধু দরকার ইচ্ছা ও অধ্যবসায়। প্রথমেই খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। অতিরিক্ত শর্করা, রেড মিট প্রভৃতি ভুঁড়ি হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই ভুঁড়ি কমাতে হলে খাদ্যতালিকা থেকে এসব ছাঁটাই করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হবে। ডায়েট করা মানে কিন্তু এই না যে খাওয়া-দাওয়া সব বাদ দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়া। বরং ডায়েট হচ্ছে শরীরকে সুস্থ সবল করে তোলার একটা পদ্ধতি। ভুঁড়ি কমাতে হলে ভাত, মিষ্টি, আলু প্রভৃতি যাবতীয় শর্করা জাতীয় খাওয়া কমিয়ে দিন। একসাথে বেশি খাবেন না। বরং কিছুক্ষণ পর পর অল্প অল্প করে খান। কখনোই পেট কানায় কানায় ভর্তি করবেন না খেয়ে। ক্ষিদে মেটাতে যতটুকু খাওয়া দরকার ঠিক ততটুকুই খাবেন রাতে ভাত খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করুন, রুটি খাওয়া শুরু করুন।
ভাত, রুটি এসব কম করে খাবেন, তরকারী, সালাদ, মাছ এসব বেশি করে খান। গরুর মাংস,খাসির মাংসের পরিবর্তে মুরগীর মাংস খান। খেয়েই শুয়ে যাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। খাওয়ার পর বাসাতেই ১০-১৫ মিনিট মাঝারি গতিতে হাঁটুন। এতে হজম দ্রুত হবে এবং চর্বি জমার হার কমবে। ওহ ! আর চর্বি জাতীয় খাদ্যও কমিয়ে দিন। রান্নায় তেল কম ব্যবহার করুন। সকালের নাশতা ভালো করে করুন কিন্তু দুপুর, বিশেষ করে রাতে কম খান। দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করুন। একটি প্রবাদ আছে ইংরেজিতে, যার অনুবাদ হচ্ছে -
“সকালের নাশতা খাও রাজার মত, দুপুরের খাবার কেরানীর মত ও রাতের খাবার ভিখারীর মত।”
শুধু খাদ্যাভাস পরিবর্তনেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসবে না, এটির সাথে নিয়মিত ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজও করতে হবে। এসব এক্সারসাইজের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। কয়েকটি হচ্ছে -
# সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাঁটু ভাঁজ না করে পায়ের পাতা ছোঁয়া – এটি প্রত্যহ ১০ বার করুন।
# মেঝেতে ম্যাট বিছিয়ে তার উপর শুয়ে পায়ের পাতা ছোঁয়া – এটি প্রত্যহ ৫ বার করুন।
# জায়গায় দাঁড়িয়ে জগিং – এটি ২ মিনিট করুন।
# বুকডন – দিনে ১০টা করে বুকডনও দিতে পারেন।
# লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। সময় থাকলে ৫ মিনিট সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করুন।
এছাড়া সাইক্লিং, সাঁতার প্রভৃতি করার সুযোগ থাকলে তা নিয়মিত করুন।
এসব ব্যায়াম নিয়মিত করলে ও যথাযথ খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে পারলে ভুঁড়ি দূর হতে বাধ্য! সেই সাথে আপনি আরও সুস্থ, সবল, সতেজ ও কর্মদ্যম হয়ে উঠবেন। আর শরীর সুস্থ থাকলে মন সুস্থ থাকতে বাধ্য, তখন জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠবে