somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাওলানা মুফতি আপনারা কি কোরআন অবমাননা করছেন না?

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যে বাসায় থাকতাম সেখানে প্রায় প্রতি শুক্রবার ওয়াজ মাহফিল এর আয়োজন করা হত। রাস্তাঘাট বন্ধ করে সবাই ওয়াজ মাহফিল এর প্রস্তুতি করতে শুরু করতেন। সোজা পথে কোথাও যাওয়ার জন্য বের হলে অনেকটা ঘুরে প্রধান সড়কে গিয়ে রিক্সা নিতে হত। সে এক মহা মহোৎসব। মাওলানা মুফতি সাহেবরা আসতেন শুরু হত সন্ধ্যা থেকে সারারাত ব্যাপী এই ওয়াজ মাহফিল। কখনও চলতো সাতদিন ধরে।

ওয়াজের সবচেয়ে আশ্চর্য জনক আর মুল আকর্ষণ ছিল ওয়াজ এর মধ্যে বিশাল এক সময় ধরে বাংলাদেশের হিন্দু খ্রিস্টান, বৌদ্ধদের ঘটা করে গালি দেওয়ার পর্ব। বয়স তখন কম ছিল এত ভাল করে বুঝতাম না যে মাওলানা মুফতি সাহেব কি সুন্দর সুর করে করে হিন্দু মেয়েদের ,খ্রিস্টান মেয়েদের, বৌদ্ধ মেয়েদের কে তার মুখ থেকে বের হওয়া অত্যন্ত রসালো বাক্য ব্যবহার করে বলাৎকার করতেন সারারাত ব্যাপী।

খুব আনন্দের সাথে বলতেন শাড়ি পরে মেয়েরা কপালে এয়া বড় বড় টিপ পরে পুরুষদের আহ্বান করে। শরীরের ভাঁজ দেখিয়ে পুকুর পাড়ে বুকের আঁচল নামিয়ে, হাঁটুর উপরে কাপড় তুলে গোসল করে এমনভাবে যেন মুসলমান পুরুষগণ রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে তাদের নজরে পরেন। পুরুষটার কী দোষ! তেঁতুল দেখলে যেমন জিভে জল আসে সেটা সবাইকে তখন আবার মনে করিয়ে দিতেন মুফতি সাহেব।তারপর আবার সুর করে করে বলতেন , ‘এইবার বলেন খৎনা দেয়া অঙ্গটা এই দৃশ্য দেখিয়া যদি নিচ থাইকা সালাম দেওয়ার জন্য দাঁড়াইয়া যায় তখন কি করবেন?’। সুবহানাল্লাহ।

মুফতি সাহেবদের এমন কোন গালি নেই যে ওই ওয়াজে কানে আসে নাই। দুঃখ হয়, ওই সকল নারীদের জন্য যারা নিজেদেরকে এই রকম জঘন্য লোভাতুর দৃষ্টি থেকে আড়াল করতে পারেন না। মাঝে খাবার টেবিলে জানতে চাইতাম এই সুন্দর শব্দগুলো যা আগে কখন শুনি নাই (গালাগালি) ইহার সহি মানে কি? বাবা আর মা তখন চুপ করে খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার কথা বলতেন।
রাতে ঘুমাবার সময় এপাশ ওপাশ করতাম কিন্তু ঘুম বাবাজির দেখা পেতাম না। কানে আসত হিন্দুরা কি করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। ফ্ল্যাট বা বাড়িতে অথবা গ্রামে, ঘরের জানালা খুলে রেখে পর্দা সরিয়ে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়। আসে পাশের পুরুষদের কে খোলামেলা ভাবে দেখার সুযোগ করে দেয়। মুফতি সাহেব আরও বলতেন, মেয়েরা মিলনের সময় মুখ দিয়ে সুর করে করে আওয়াজ করে। উনিও শুনতাম সুর করে করে ঠিক ওই সব আওয়াজ এর হুবহু নকল করে ওয়াজ স্টাইল এ মাইকে সবাইকে শুনাচ্ছেন আর সাথে অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছেন।

আমার প্রশ্ন হল, মুফতি সাহেব কি করে জানেন তার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা লালিত এই রকম অভিনব তথ্য? ওনার কাছে মানুষের ঘরের এত হাঁড়ির খবর কি করে আসে? এগুলো তো অতি ব্যক্তিগত। তাহলে ঐ যে পুরুষ, যে গাছের আড়াল থেকে শরীরের / বুকের গভীরতা ভাঁজ দেখত, সেই অপ্রত্যাশিত/ অসভ্য পুরুষ কি তবে মুফতি নিজেই? কাম সাগরে বান ডাকলেই কি তেঁতুলের মতো জিভে জল চলে এসে সালাম ঠুকত?

এত কিছু থাকতে এই রকম সুনির্দিষ্ট বিষয়ে উনি এত কিছু জানতেন কি করে? ভদ্র পরিবেশে মানুষ হয়েছি বলে আমার নজরে এরকম কখন কিছু আসে নি। তাহলে একজন মাওলানা মুফতি উনি এত কিছু জানেন কি করে? অথবা কি কৌশল তিনি এত তথ্য তার লালিত মনে লালন করেন? উনি মুফতি বলে?, মুফতিদের ভাষ্য মতে মুফতিরা মহা জ্ঞানী মানুষ। তাদের অনেক জ্ঞান না থাকলে মুফতি হওয়া যায় না। একেবারে বুঝে শুনে প্রয়োগ করেই না একজন একেবারে ঝানু মুফতি উপাধিতে ভূষিত হন। তাই নয় কি?
আমার জানা মতে প্রত্যেকটি ধর্ম গ্রন্থে বলা আছে তোমরা অন্য ধর্মের মানুষদের সম্মান দিয়ে চল। আমার প্রশ্ন হল ‘কুরআন’ কি বলে এই বিষয়ে? ‘কুরআন’ এ কি কোথাও লেখা আছে যে তোমরা বিধর্মীদের গালাগালি করো? তাহলে সোয়াব পাবে? স্বর্গের পথ সুগম হবে? হিন্দু , খ্রিস্টান, বৌদ্ধ বা অন্যান্য ধর্মের মানুষদের গালাগালি করো? যদি লেখা থাকে, আমাকে দয়া করে কোন অধ্যায় এর, কোন আয়াত এ বলা আছে রেফারেন্স দিয়ে স্পষ্ট করে জানাবেন । বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি না থাকে তাহলে আপনারা ধর্ম নিয়ে পাক্কা ব্যাবসা করেন। মানুষের দুর্বল জায়গায় আঘাত করে উস্কানিমূলক কথা বলে মানুষদের একে অপরের শত্রু করেন। আপনারা হলেন ইসলামের শত্রু/ ইবলিশ শয়তান।

আর যদি কোরআন এ থেকে না থাকে তাহলে কোন অধিকারে মুফতি মাওলানারা ওয়াজ মাহফিল এ এই রকম অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে? কোন অধিকারে অমুসলিম মেয়েদের এভাবে অকথ্য ভাষায় ভরা মজলিসে রসালো সুরে গোসলের বর্ণনা দিয়ে নিজেকে দুশ্চরিত্র প্রমান করছেন? একটা ভরা মজলিসে সকল কে নিয়ে এই রকম অমুসলিম মানুষদের গালাগালি দিচ্ছেন, একবার ও চিন্তা করেন না যারা অন্য ধর্মীয় মানুষ ওদের কেমন লাগে? ওরাও তো মানুষ। ওরাও তো আপনাদের মতই রক্ত মাংসে গড়া সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টি। যদি মেনেই থাকেন মানুষকে স্বয়ং আল্লাহ্তালা সৃষ্টি করেছেন তাহলে উনার সৃষ্টি কে এভাবে লাঞ্ছিত করে স্বয়ং সৃষ্টি কর্তাকে লাঞ্ছিত করছেন। যদি তাই করে থাকেন তাহলে,আল্লাহ্তালা যে কোরআন কে নাজিল করেছেন সেই কোরআন আপনারা অবমাননা করছেন না?

যদি তাই করে থাকেন তাহলে, আপনারা কোরআন অবমাননা করছেন না? তাহলে, আপনারা কি ধরনের মুসলিম? কে বলে আপনারা মুসলিম? ধর্মের শিক্ষা নামে ধর্ম রক্ষার নামে আপনারা ধর্মকে কলঙ্কিত করছেন। সবার আগে তো আপনাদের বিচার হয়া উচিৎ। আপনাদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি হয়া উচিৎ। আপনাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের বাবস্থা করা উচিৎ। আপনারা কোন অধিকারে নাস্তিকদের কে নাস্তিক বলেন? আপনারাই তো হচ্ছেন সবচেয়ে বড় নাস্তিক। আপনারাই তো ইসলামের কলঙ্ক। আপনাদের মতো শয়তান এই পৃথিবীতে যতদিন থাকবে ততদিন ইসলাম কলঙ্কিত হবে। আপনারা নিজেরাই কোরআন অবমাননা করছেন। নিজেরাই দেশের শান্তি নষ্ট করছেন।

"মানুষ মানুষের জন্য" কথাটি বদলে দিয়ে আজকাল "মানুষ ধর্মের জন্য" রাখা উচিত। আপনাদের কাছে মানবিক অনুভুতির চেয়ে এখন ধর্মীয় অনুভুতি অনেক বিশাল। প্রতিবাদ ধর্মের বিরুদ্ধে না হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত তা মোটামোটি আমরা সবাই ভুলে গেছি। হায়রে ধর্ম! আমরা কবে যে মানুষ হবো?
একটা বিষয় আপনারা সকলেই ভুলে যান। সকল ধর্মের প্রাথমিক শিক্ষাগুলা কিন্তু এক। খেয়াল করে দেখবেন, প্রত্যেক ধর্মই সদাচার, সত্য বলা, পিতামাতাকে সম্মান করা, সৎ পথে চলা, ন্যায়ের পক্ষে থাকা, পর স্ত্রীতে লোভ না করা,অন্যায় না করা, মিথ্যা না বলা, পাপ না করা ইত্যাদি এই বিষয় গুলোর কথাই বলে। আর আপনারাও যদি সেটাই খুঁজে পান আর তাই যদি হয়, তাহলে ধর্মের সঙ্গে সংঘর্ষটা আমাদের কোথায়? প্রত্যেক ধর্ম অবশ্যই একটি ব্যক্তিগত আচার, যার ইচ্ছা পালন করবেন যার ইচ্ছা পালন করবেন না , পুরোটাই সম্পূর্ণ ব্যক্তির উপর নির্ভর করে, সে কি করবে। এবং এটা একটা বিশ্বাসের ব্যাপার।বিশ্বাস আসে অন্তর থেকে। সেই বিশ্বাসটা আপনার বা আমার জোর করে চাপায়া দেওয়ার না। নিজেদের অন্যায় অন্যর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে যে অন্যায় আপনারা করছেন তা অত্যন্ত ভয়াবহ। অন্য ধর্মীয় মানুষদের হৃদয় ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন।রাতের ঘুমটুকু কেড়ে নিচ্ছেন।কষ্টে আর যন্ত্রনায় গলা দিয়ে খাবারটুকু নামাতে পারছে না।

এ মহা পাপ। এ অন্যায়। এ অবিচার। অন্যান্য দেশে কি হয় না হয় সেটা আমার বা আপনার দেখার বিষয় নয়। বরং আমাদের দেশে যদি অন্যায় হয় সেটা বন্ধের দায়িত্ব আমার, আপনার এবং এই গোটা সমাজের। একবার ভেবে দেখুন। মানুষ হয়ে ভেবে দেখুন। মানুষ এর একটা হৃদয় আছে, সেই হৃদয়ের অনুভুতিও আছে। ধর্মীয় অনুভুতিকে ঝেড়ে ফেলে দয়া করে মানুষের অনুভুতি দিয়ে ভেবে দেখুন, দেখবেন মানব ধর্মকে খুঁজে পাবেন। আর মানব ধর্মই পরম ধর্ম।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:০১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×