
নীনা মিথ্যে বলেনি। সত্যিই ওর এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে। আমাকে ফোন করে এটেন্ড করতে বলেছিল। ইচ্ছে করছিল না তাই আর যাওয়া হয়নি। কিছুদিন পরে ভার্সিটিতে এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে। বিয়ের কার্ড হাতে দিয়ে ছল ছল চোখে বলেছিল,”তুই আসবি কিন্তু।” আমি শুধুই হেসেছিলাম। শেষটায় চোখের জল আর রাখতে পারেনি। কাঁদতে কাঁদতে বললো,”নিজের খেয়াল রাখবি”
“হুম”
“ঠিক ভাবে থাকবি”
“হুম”
“হুম হুম করছিস কেন গাধার বাচ্চা? এখন তো আর আমি থাকবো না। তোকে কে দেখে রাখবে? নিজে যেটা ভালো বুঝিস সেটা করবি না, একটু ভেবে কাজ করবি। আর শোন, আমি তোকে আর কখনো ফোন করবো না। যেদিন আমার প্রথম সন্তান হবে সেদিন তোকে ফোন করবো। সেদিন কিন্তু তোকে আসতে হবে। আর শোন আমার ছেলে হলে তোর নামে নাম রাখব ‘রিক’, আর মেয়ে হলে ‘মিমি’, আর তোর মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দেব”
“অসম্ভব, তাহলে আমার মেয়ের প্রবলেম হবে, বাবার নাম আর জামাইয়ের নাম এক হয়ে যাবে।“
“চুপ কর গাধা, এমন ইমোশনাল মুহূর্তে তুই আমাকে হাসাতে চেষ্টা করছিস?”
“হুম”
“চল আমার হবু বরের সাথে তোকে পরিচয় করিয়ে দেই”
নীনার হবু বর ইশতিয়াক আহমেদ ভীষণ স্মার্ট। নীনার সাথে দারুন ম্যাচ করেছে। ইংল্যান্ডের হাডারসফিল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করে এখন দেশে বাবার ব্যাবসা দেখছেন। চমৎকার মিশুক একজন মানুষ। যাওয়ার সময় নীনার হবু বরকে বললাম,”আমার এই বন্ধুটা একদম পাগলী, কিন্তু ও দারুন ভালোবাসতে জানে। আমার প্রিয় এই বন্ধুটিকে কখনো কষ্ট দিবেন না প্লিজ। উইশ ইউ বোথ এ হ্যাপি লাইফ।“
নীনা হয়ত আর যন্ত্রনা করবে না। আমাকে আর বিরক্ত করবে না। আবার এমনো হতে পারে ফোন করে বলবে,”শোন গাধার বাচ্চা, আমার ছেলে তোকে দেখতে চাচ্ছে, এক্ষুনি চলে আয়। ওকে নিয়ে ইডেন কিংবা ভিকারুন্নিসার সামনে থেকে ঘুরে আয়। আমার ছেলে আবার মেয়েদের দেখলে লজ্জায় ঠান্ডা হয়ে যায়, একদম তোর মত স্বভাব।“
বাবার একটা মাইনর এট্যাক হয়েছে। অধিকাংশ সময় বাসায় রেস্টে থাকতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে আমাকে ডেকে বলে তোমার শরীর খারাপ হচ্ছে কেন? আমি শুধুই হাসি, বাবাও হাসে আমার সাথে। কিছুক্ষন আব্বুকে ধরে শুয়ে থাকি। আব্বুর গায়ের গন্ধটা ছোটবেলা থেকেই বিমোহিত করে। হয়ত কিছুদিন পরে এই গন্ধটা হারিয়ে যাবে। তাই যতটুক পারি আব্বুর কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করি।
মিমির বাবা মিমির বিয়ে ঠিক করেছেন তার সেই হায়দার চাচার ছেলের সাথে। বাবার কথার বাইরে যাওয়া তার জন্যে কখনই সম্ভব নয়। মিমি তার বাবার কাছে আমার জন্যে সুপারিশ করেছে সেটাও আমি জানি। কিন্তু ভদ্রলোক হয়ত আমাকে পছন্দ করেননি।
মিমি এসেছে শেষ বারের মত আমার সাথে দেখা করতে। দু’চোখের নীচে কালো দাগ পরেছে। হয়ত নির্ঘুম সারারাত জেগে থাকে। ওর চোখ ফুলে আছে। হয়ত অনেক কেঁদেছে। আমি সামনে ঝুঁকে বললাম মিমি কবিতা শুনবে? মিমি অবুঝ শিশুর মত মাথা নেড়ে সায় দিল, আমি শুরু করলাম জীবনানন্দের “তুমি কেন বহুদূরে”
তুমি কেন বহু দূরে_ঢের দূরে_আরও দূরে,
নক্ষত্রের অস্পস্ট আকাশ
তুমি কেন কোনদিন পৃথিবীর ভিড়ে এসে বলো নাকো একটিও কথা
আমরা মিনার গড়ি_ভেঙ্গে পড়ে দুদিনেই_
স্বপনের ডানা ছিড়ে ব্যাথা
রক্ত হয়ে ঝরে শুধু এইখানে_ক্ষুধা হয়ে ব্যাথা দেয়_নীল নাভিশ্বাস;
মিমি মাছের মত স্বচ্ছ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কবিতা শুনছিল। আমি বললাম,”মিমি রাত হয়েছে, বাসায় যাবে না?”
“আর কিছুক্ষন তোমার পাশে বসে থাকবো”
“বৃষ্টি নামবে মিমি”
“আমি কি তোমাকে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে রাখবো?”
“আজ আকাশেরও মন ভালো নেই”
মিমি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। ওর চোখের কাজল মাখা জলে দাগ ফেলে যাচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝুম বৃষ্টি। আজ মেঘও কেঁদে যাবে অবিরত। পথিকেরা শুষ্ক ছায়ার খোঁজে ছুটে যাচ্ছে। গাছেরা শির উঁচু করে বৃষ্টিবিলাসে মত্ত। বৃষ্টিতে ভিজছে ছোট একটি মেয়ে। পৃথিবীর বিষাদ তাকে ক্লিষ্ট করেনা। বৃষ্টির বেগ আরও বেড়েছে। ডালের উপরে সারি হয়ে বসে আছে কাকের দল। মিমি এখনো কাঁদছে।
রোদের পরে মেঘ কেঁদেছে, ইচ্ছে তোমায় ছুটি।
রোদের পরে মেঘ কেঁদেছে, ইচ্ছে তোমায় ছুটি- (দ্বিতীয় পর্ব)
রোদের পরে মেঘ কেঁদেছে, ইচ্ছে তোমায় ছুটি - (তৃতীয় পর্ব)
উৎসর্গঃ হুমায়ুন আহমেদ স্যার। মানুষের চরিত্র, আবেগ, অনুভুতি খুব নিপুন ভাবে ফুটিয়ে তুলতে তার জুড়ি নেই। তিনি একজন সাহিত্য পিতা, যে জন্ম দিয়েছে হাজারো নবীন লেখকের। আমার এলোমেলো লেখাগুলি একটি ছকের মধ্যে আনতে পেরেছি তার ভক্ত হওয়ার কারনেই। স্যারের সুস্থতা কামনা করি।
প্যারিস, ফ্রান্স
০৭/১০/২০১১ ইং
___________
গল্পটি গত অক্টবর মাসের সাত তারিখে ভীষন মানসিক চাপে থাকাকালীন অবস্থায় এক বসায় লেখা। আমার একটা অভ্যেস হচ্ছে মন খারাপ থাকলেই লেখালেখি করি। যাস্ট মন ও চিন্তা একটি গল্পের ছকে আবদ্ধ করা। এই গল্পটি লেখার পর মন ভালো হয়ে গেলো। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের তখন ক্যানসার ধরা পরে। তার কথা মাথায় রেখেই লেখা শুরু করলাম। দেখলাম গল্পটি আমার লেখা সবথেকে সুন্দর গল্প হয়ে গেছে। একটা নরমাল পিডিএফ ভার্শন করে ফেললাম। সেই ভার্শন পাঠিয়ে দিলাম ব্লগার দাইফ ভাই, বন্ধু শশী হিমু আর নীরব ভাইয়ের কাছে। তারা পড়েও বললো এটা নাকি আমার লেখা বেষ্ট গল্প। তারপরে সময়ের অপেক্ষা গল্পটি প্রকাশ করার জন্যে।
সম্ভবত জানুয়ারীতে শোশমিতা আপু ই বুক সৃজনের জন্যে লেখা চেয়ে আমাকে ইনবক্স করলেন। বললাম বিশাল একটা গল্প ছারা আমার ড্রাফটে আর কিছু নেই। নতুন করে লেখার সময় হয় না। শোশি আপু বললেন তাই চলবে। দিয়ে দিলাম।
এরপরে সুদীপ্ত আর নীরব ভাইয়ের ই-বুক মুঠো ভরা রোদের লেখা বাছাইয়ের জন্যে আমাকে বিচারক দেয়া হলো। পড়লাম বিপদে, সময় সংকটের মাঝেও একদিন সময় নিয়ে বসে বাছাই করলাম সব গল্প কবিতা। শেষে আরেক মুসিবত, বিচারকদের নাকি লেখা দিতে হবে। নীরব ভাইকেও বললাম এটা ছারা আমার আর কিছু নাই নতুন। নীরব ভাই বললেন ২৫০০+ ওয়ার্ড। তোর এই গল্প দিমু না। শেষে যেয়ে মত পরিবর্তন করে ই-বুকের নিয়ম ভেঙে ঠিকি দিয়ে দিলেন। সাথে দিলেন প্যারিসের চিঠি সিরিজের কিছু কবিতা।
আমার করা পিডিএফ ভার্শন ছিল এটা: http://www.mediafire.com/?th5naahxj81myxf
ই-বুক সৃজনে ভাষার মাসে অনেক ভালো ব্লগারদের লেখা নিয়ে চমৎকার একটি ভার্শন সাজানো হয়েছে। সেখানে এই গল্পটিও রয়েছে।
সৃজন ডাউনলোডের লিন্ক : http://www.mediafire.com/?0p063aibz8lh23x
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ই-বুক মুঠো ভরা রোদে এটার পাশাপাশি প্যারিসের চিঠি সিরিজের কিছু কবিতাও আছে। চমৎকার ভালোবাসার গল্প এবং কবিতা পড়তে ডাউনলোড করুন মাত্র ২৫ মেগাবাইটের মুঠোভরা রোদ।
ডাউনলোড লিন্ক: http://www.mediafire.com/?1aslz4kjju4er6x
ছবিঃ আমার ওয়ালস্ট্রিট ফটোগ্রাফি এন্ড গ্রাফিটি এ্যালবাম থেকে।