১) মাছ:
আমি ছোট বেলায় মাছের আঁশটে গন্ধ আর গলায় কাঁটা আটকে যাবে এই ভয়ে মাছ খেতাম না। আব্বাজান কত রকমের মাছ নিয়ে আসতেন- আম্মাজানে কত সুন্দর করে রান্না করতেন, কিন্তু কিছুই খেতাম না। এই জন্য তাদের কম দু:খ ছিল না। আজকে এই সব ভাবলে কত খারাপ লাগে –কেন যে মাছ খাইনি? এখন অবশ্য মাছ খাই- আর সবাইকে মাছ খাওয়ারও জন্য বলি।
কারণ
আপনি যদি নন-ভেজেটেরিয়ান হন এবং মাছ খেতে ভালবাসেন, তবে সেটা খুবই ভাল। কারণ মাছে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড, যা আপনার মস্তিষ্কের এবং স্নায়ুতন্ত্রের উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তাই মাছ খেলে কোন লস নাই- পুরাটাই লাভ। আমার মত কেউ ভুল করবেন না।
২) ডিম:
বাসায় ১০-১২টা মুরগী ছিল। প্রতিদিন ৬-৭ ডিম পাইতাম। কিন্তু সেই ডিম না খেয়ে চুরি করে ৮টাকা হালি করে বেঁচতাম। আর সেই টাকা দিয়ে চানাচুর-আলুর পাপড় কিনে খেতাম। আবার কখনও সিনেমা হলে গিয়ে বাংলার নায়ক জসিমের সিনেমা দেখতাম। তখনও বুঝিনি ডিম না বেঁচে খাওয়া উচিত ছিল। এখন বুঝতেছি ৪৪ টাকা হালি হলেও ডিম কিনে খাওয়া দরকার।
কারণ
শুধু মাছ নয়, ডিমেও ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড থাকে, যা মস্তিষ্কের কোষের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহজতর একটা উৎস। আপনার খাদ্য তালিকায় এই উচ্চ প্রোটিন এবং ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ ডিমকে রাখা হবে অত্যন্ত বুদ্ধিমানের কাজ।
৩) সালাদ ও সবুজ শাকসবজি:
ছোটবেলায় জানতাম শাকসবজি শুধু গরিবী খাওয়া। মাছ-মাংস হচ্ছে বড়লোকদের খাওয়া। এই বড়লোকি খাবার খেলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে। এই ভুলটা ভাঙল বিটিভির মা ও শিশু উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান দেখে।
বর্তমানে আমাদের মা-বোনেরা ডায়েট কন্ট্রোল করার জন্য নিয়মিত শাকসবজি খান। শুধু মা-বোনই না বাপ ভাইদেরও নিয়মিত শাক-সবজি খাওয়া উচিত।
কারণ
সবুজ শাক-সবজি যেমন-লেটুস, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং বিভিন্ন ধরনের শাক আপনার মস্তিষ্কের উন্নয়নের জন্য অনেক ভাল খাবার।
এই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস থাকে ; ভিটামিন-সি; ভিটামিন-ই ,যা আপনার মস্তিষ্ককে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
৪) আলমন্ড বা কাঠবাদাম :
আগে শুধু নামই শুনতাম। কিন্তু ইন্টারনেটে এর সম্পর্কে জানার পর, দোকানে গেলাম কাঠবাদাম কেনার জন্য। কেন গেলাম?
কারণ
কাঠবাদাম স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল। কাঠবাদাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস সমৃদ্ধ এবং এছাড়াও ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। আপনার খাদ্য তালিকায় এই কাঠবাদাম সামান্য পরিমাণে রাখতে পারেন।
৫) গম ও অন্যান্য শস্য জাতীয় খাবার:
কমবেশি সবার বাসায় সকাল আর রাতের খাবার এই গমের রুটি। আমাদের বাসায় তো নিয়মিত হয় বিশেষ করে শীতকালে। কিন্তু আমি ভাতের বিশেষ ভক্ত বলে প্রতিদিন রুটি খেতে ভাল লাগত না। তবে এখন অবশ্যই প্রতিদিন খেতে চাই- কারণ
গম, যব ইত্যাদি শস্য খাবারে গ্লুকোজের চাহিদা মিটাতে পারেন। আপনার মস্তিস্ক ঠিকভাবে কাজ করার জন্য গ্লুকোজ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের একটি। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই কমপক্ষে ১০০ গ্রাম শর্করা জাতীয় খাবার থাকা উচিত।
এইসব শস্যে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস আছে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি এবং ভিটামিন –ই যা আপনাকে আপনার শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখার জন্য সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। তখন বাংলার ছবির ভিলেন মাথায় আঘাত করলেও আপনার স্মৃতি হারাবেনা- এমনকি বাংলার বিশেষ ত্রিভুজ প্রেমও সৃষ্টি হবেনা।
৬) দুধ ও দই:
দই – এই নামটা শুনলে কারও জিহ্বায় পানি না আসলেও আমার আসে। আমার খুব প্রিয় একটি খাবার।
অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ দই আপনার স্মৃতিশক্তি উন্নয়নে সাহায্য করে। দই এর সাথে ফলও যোগ করতে পারেন।
৭)ব্লুবেরি:
বাংলা অভিধান খুঁজে এর বাংলা করতে পারিনি। ব্যাচমেট- জুনিয়র-সিনিয়র সবাইকে জিজ্ঞাসা করলাম- কেউ বলতে পারল না – যাহোক না পারলেও সমস্যা নাই।
ব্লুবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস সমৃদ্ধ একটা নর্থ আমেরিকান চমৎকার একটি ফল এবং মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার ব্লুবেরিকে বিবেচনা করা হয়।
৮)ব্ল্যাকবেরি বা কালোজাম:
প্রথমে ভাবছিলাম স্মার্ট ফোনও কি খাওয়া যায় না কি? পরে এর বাংলা অর্থ জানলাম , ব্ল্যাকবেরি মানে কালোজাম। কত ঢিল মাইরা চুরি করে পাইরা খাইছি। বান্ধবীদের জন্য স্কুলে নিয়ে গেছি; প্রেম-ভালবাসাও পাইছি। আহা কত সুখ ছিল!!! কিছুক্ষণের জন্য স্মৃতির জগতে ফিরে গেলাম। স্মৃতি শেয়ার না করে কালোজামের কথা শেয়ার করি-
আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ নিজে একে অপরের সাথে কথা বলে, তথ্য আদান-প্রদাণ করে। আর এভাবে মস্তিষ্কে বিভিন্ন তথ্য আসে।আমাদের যখন বয়স বাড়তে থাকে তখন কোষগুলো ধীরে ধীরে কাজে কিছুটা আলসে হয়ে যায়। ফলে বৃদ্ধ বয়সে মানুষের মস্তিষ্কে খুব ধীরে তথ্য যায় এবং অনেক দেরীতে বুঝতে পারে। আর ছোট ছেলে-মেয়েদের কোষগুলো একটু বেশি চঞ্চল থাকে, তাই তাদের মস্তিষ্কে খুব দ্রুত তথ্য যায় এবং তারা খুব সহজে এবং দ্রুত সেগুলো বুঝতে পারে। কালোজামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস নিউরনের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এবং সহজেই তথ্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
৯)অলিভ ওয়েল বা জলপাই তেল:
অলিভ ওয়েল নামটা ছোটবেলা থেকে টিভির রান্নাবান্নার অনুষ্ঠানে শুনে আসতাম। যারা রেসিপি দিতেন তারা প্রায় এই তেলের নামটা বলতেন। তখন মনে করতাম দামী দামী খাবার বানাতে গেলে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করে। আজ আমার এক বন্ধুতে জিজ্ঞাসা করলাম- অলিভ ওয়েলের দাম কত? তার আনুমানিক দাম শুনে ছোটবেলার চিন্তার সাথে মিলে গেছে।
যাহোক
জলপাই তেল ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য যেমন খুব উপকারী, তেমনি আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী। ভার্জিন অলিভ ওয়েলে অলিওক্যানথাল রয়েছে। এই অলিওক্যানথাল
ADDL বিরুদ্ধে খুব কার্যকর। ADDL - অ্যাল্জায়মার এর কারণ এবং মস্তিষ্কের কোষের জন্য বিষাক্ত। ADDL মস্তিষ্কের কোষকে আক্রমণ করে এবং কোষগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যহত ঘটায়। তাদের স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায় । তাই আপনাকে বলছি সম্ভব হলে জলপাই তেল ব্যবহার করুণ আর ADDL এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এর থেকে নিরাপদে থাকুন।
১০) কফি:
প্রতিদিনই কাশেম মামার দোকানে খাই। ইদানিং কাশেম মামা কফির দাম বাড়িয়ে দিছে, তাই মামার কাছে কফির সাথে গরম পানি বাড়িয়ে নিই। যেন আপাতত দৃষ্টিতে দামের সাথে পরিমাণের একটা ভারসাম্য থাকে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে,
কফির মধ্যে যে ক্যাফিন থাকে তা অ্যাল্জায়মার রোগের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর। তাই প্রতিদিন এক কাপ কফি খাওয়া আপনার জন্য ভাল একটা পরামর্শ হতে পারে।
১১) আপেল :
মধ্যবিত্তদের জন্য রোগীদের ফল। যার অসুখ হয়, তার জন্য আনা হয়। এমনি সময় চিল্লালেও খাওয়ার সুযোগ সহজে হয় না। কিন্তু অসুস্থ থাকলে খাওয়ার রুচি আসেনা। তাই বাসায় কারও অসুখ হলে তার পাশেই থাকি যেন- আপেল খাওয়ার সুযোগ হয়। ক্যাম্পাসে আসার পর আম্মা প্রতিমাসে আপেল-আঙুর খাওয়ার জন্য ৫০০টাকা বেশি দেন। কিন্তু সেটা অন্য দিকে ব্যয় যায়। কিন্তু আর নয় অন্য দিকে ব্যয়- আপেল কিনে নিয়মিত খেতে চাই।
কারণ-
আপেলের মধ্যে কূয়্যারসেটিং (quercetin ) নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের মস্তিষ্কের কোষ রক্ষা করতে সাহায্য করে। আর কূয়্যারসেটিং আপেলের খোসার মধ্যে পাওয়া যায়। তাই আপলে খাওয়ার সময় খোসা ফেলে খাবেন না খোসাসহ খাবেন এটা আপনার ব্যাপার।
১২ ) কলা:
বাজারে কোন ফল চোখে পড়ুক আর না পড়ুক কলা কিন্তু ঠিকই চোখে পড়ে। বাংলার সিনেমার নায়ক- নায়িকার ছেলেবেলার হারিয়ে যাওয়ার স্মৃতিতে থাকে এই কলা (সাথে পাউরুটি।)। এই কলা পাউরুটি আনতে গিয়ে তারা হারিয়ে যায় আর শেষ দৃশ্যে গানের মাধ্যমে আবার তাদের দেখা হয়।ছাত্রজীবনে এর ব্যাপক ভূমিকা। ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ ছেলে বাইরের তেলের জিনিস খেয়ে পেটের বারোটা বাজিয়ে দেয়। তখন ক্যাম্পাসের হাসপাতালে কথিত কসাই ইউসুফ আর ডা. মতুর্জা ছাত্র-ছাত্রীদের তেলের জিনিস খেতে নিষেধ করেন। ফলে বিকল্প খাবার হিসেবে আমাদের চোখে ভাসে কলা-পাউরুটি। আপনাদেরও চোখে ভাসা উচিত, কারণ
কলা ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল। এত রয়েছে পটাশিয়াম, মিনারেলস, ভিটামিন বি৬। কলা মস্তিষ্কে ঠিকঠাক মত অক্সিজেন সরবরাহ করে। ভিটামিন বি৬ এর অভাব হলে মাথাব্যাথা হয়,যেটা আপনি কলার মধ্যে পাবেন। তো নিয়মিত কলা খাবেন, যদিও দাম বাড়ছে সমস্যা নাই, দামী ফাস্ট ফুডের চেয়ে কলা হাজার গুণে উত্তম।
এরাই ছিল মস্কিষ্কের জন্য নির্বাচিত প্রার্থী। এদের কেউ প্রার্থীতার অযোগ্য হলে অবশ্যই জানাবেন। ইচ্ছা করলে যে কেউ যেকোন সময় আরও প্রার্থী যোগ করতে পারেন।
(বি:দ্র: তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত। লিংকগুলো দিতে না পারায় আন্তরিকভাবে দু:খিত। কোন ভুল হয়ে থাকলে- ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।)