একদল মানুষ সুর করে করে মন্ত্রের মত কি যেন পাঠ করছে। সময়টা ভর দুপুর। সূর্য মানুষকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। ঠিক সেসময় আমি মানুষটাকে দেখলাম। মানুষটা দাড়িয়ে আছে। পৃথিবীটা ঘুরছে। পৃথিবী সূর্য পূজারি। মানুষটা গাছের মত। দেখে মনে হয় বোধহীন। এই বোধহীন মানুষটাকে কেন্দ্র করে একদল লোক নাচছে। এবং মন্ত্রপাঠ করছে। তারা কি বলছে বুঝার জন্য আমি কাছে গেলাম।
যে বৃক্ষে জ্ঞান ঝুলে থাকে, সে বৃক্ষ পাহারা দেয় এক বিষধর সাপ। সে সাপের বিষে যাদের নেশা হয় তারা জ্ঞানপাপী হয়ে ফিরে আসে। মানুষটার নেশা হয়েছে। সেও জ্ঞানপাপী হয়ে ফিরে এসেছে। রোদ আরো তীব্র হচ্ছে। স্যুরিয়্যল ভাবনা চিন্তা বন্ধ করে একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি খাওয়া দরকার। তারপর এক কাপ গরম চা।
আমি চা পান করতে করতে মুঠোফোনে কবিতা লিখে ফেললাম। স্যুরিয়্যল ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে একদম ডাইরেক্ট এ্যাকশন টাইপ কবিতা!
কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ।
মুচকি হাসেন বুদ্ধ।
কৃষ্ণপ্রেমে মাতোয়ারা
খুনিরা সব শুদ্ধ।
শান্তিবাদি গান্ধীজীও
কৃষ্ণকথায় মুগ্ধ।
অতিসরলিকরন হয়ে গেল মনে হয়। ডাইরেক্ট এ্যাকশন টাইপ ভাবনা চিন্তার আউটকাম এমনই হয়। তার চেয়ে আরো গভীর যুক্তির কাছে ফেরা যেতে পারে। একটা সিগারেট হলে মন্দ হত না। তবে ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি। তার চাইতে বরং একটা মিষ্টি পান চাবাতে চাবাতে ভাবা যাবে। টঙ্গটা ভালো। দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসার সুবিধা আছে!
ইম্যাজিনড রিয়্যালিটি
ধরা যাক আমার আস্তিক সত্ত্বা নাস্তিক স্বত্বার অতিসরলিকরন কবিতায় মর্মাহত। সেও তার প্রতিক্রিয়া জানাল। সে বলে বসল নাস্তিকতাও একটা বিশ্বাস। অন্ধ বিশ্বাস। আমার নাস্তিক সত্ত্বা নড়েচড়ে বসল। সে ফিরে গেল বিশুদ্ধ যুক্তির কাছে। সে এ বিষয়ে কি ধরনের লেখা লিখে ফেলতে পারে তার একটা খসরা মনে মনে বানিয়ে ফেলা যায়। একটা টোকাই বেশকিছুক্ষন ধরে পা ধরে বসে আছে। সে বিরক্ত করার চেষ্টা করছে। সে জানে হয় লাথি খাবে নাহয় টাকা পাবে! এটা অনেকটা জুয়া খেলার মত। পকেটে পাঁচ টাকার একটা কয়েন আছে। দিয়ে দিলাম। সে জুয়া খেলায় জিতে গিয়ে আমার পা ছেড়ে দিল। আমি মুঠোফোনে আবার লিখতে শুরু করলাম।
নাস্তিকতাকেও একটা অযৌক্তিক বিশ্বাস মনে হতে পারে যদি সেটা একটা সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাসের বলয়ে থেকে সেটার আলোকে ভাবা হয়। তবে কেউ যদি সত্য আবিষ্কার করতে চায় তবে তাকে ইতিহাস থেকে ঘুরে আসতে হবে। ইতিহাসের আলোকে সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান, মানুষের মাঝে গড়ে ওঠা বিভিন্ন রকম অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি, বিকাশ এসব যদি সে বুঝে তবে খুব সহজেই সে বুঝতে পারবে পরম সত্য বলে কিছু নেই। তবে পরম সত্যের অনেকগুলো ধারনা সে পাবে।সত্য আবিস্কার করতে গিয়ে দেখবে সময়ের সাথে রিলেটেড অনেক রকম আপেক্ষিক সত্যের ধারনা। জ্ঞানের যেহেতু কোন সীমা নাই বা সেটার সীমা সম্পর্কে আমাদের জানা নেই, তাই মানুষ সব যুগেই নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন রকম ধ্যান ধারনার জন্ম দিয়েছে। মতবাদের জন্ম দিয়েছে। আবার সময়ের প্রয়োজনে সেসব ভেঙ্গেও ফেলেছে। বিজ্ঞান দিয়ে মানুষ ক্রমাগত নিজেকে এবং প্রকৃতিকে বুঝার চেষ্টা করেছে। এখনো করছে। এখনো থিয়োরি অব এভরিথিংক বলে কিছু পাওয়া যায়নি বিজ্ঞানেই। বরং কোয়ান্টাম মেকানিক্স এসে আরো জটিল করে দিচ্ছে সব!অমরত্ব নিয়ে গবেষণা চলছে। কি হবে ভবিষ্যতই বলে দিবে। তবে বিজ্ঞান প্রমানে বিশ্বাস করে। অন্ধ বিশ্বাসের কোন জায়গা বিজ্ঞানে নেই। বিজ্ঞানের সবচেয়ে বেসিক কনসেপ্ট থেকেই ধর্মীয় কনসেপ্ট বাতিল হয়ে যায়। সেটার জন্য বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার হয়না। প্রাথমিক জ্ঞান থাকলেই সেটা বুঝে ফেলা যায় যদি কেউ বুঝতে চায় আরকি। এখন বিজ্ঞানকেও বাদ দিলাম। মানুষের মাঝে কল্পনাশক্তি বলে একটা ব্যাপার আছে। এই কল্পনাশক্তি থেকেই যুগে যুগে সাহিত্য, দর্শন, মতবাদ, ধর্মের জন্ম হয়েছে। নিজের কল্পনাশক্তির সাথে মানুষ তার পারিপার্শ্বিক যাপিত জীবনকে রিলেট করে অনেক রকম ধ্যান ধারনার জন্ম দিয়েছে। এখনো দিচ্ছে। ভবিষ্যতেও দিবে। বিভিন্ন ধর্মীয় কনসেপ্টগুলোও এভাবে সৃষ্টি হয়েছে। কিছুটা কল্পনা এবং কিছুটা তৎকালীন সময়ের পর্যবেক্ষণ থেকে। যেমন ধরা যাক আমি যদি বলি যে আমি কাল চাঁদে ছিলাম। কেউ যদি যুক্তি দিয়ে বিচার করে তবে তা বিশ্বাস করবে না। বিশ্বাস করতে হলে তাকে অন্ধ বিশ্বাসী হতে হবে। ধর্মের ব্যাপারটাও এমন। যেমন ধরা যাক আমি যদি বলি হ্যারি পটারের কি কোন অস্তিত্ব আছে? আছে। হ্যারি পটার নামক এক বইয়ে সে আছে। তাকে ঘিরে অনেক কাহিনী আছে। সেসব কি সত্য? হ্যাঁ সেসব কাল্পনিক সত্য যার জন্ম হয়েছে জে কে রাওলিং এর কল্পনা থেকে। এটাই যৌক্তিক ভাবনা। ধর্মপ্রচারকরা কি সত্য? তারা কেউ কেউ পৌরাণিক চরিত্র আবার কেউ কেউ ঐতিহাসিক চরিত্র। তাদের ভাবনা চিন্তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরেক কাল্পনিক সত্য। অন্ধবিশ্বাসীরা এমন একটা কল্পনার বলয়ের মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ করে রাখে। যেমন ধরা যাক, জিউস এবং থর দুজনই মিথ। কিন্তু কেউ জিউসকে বাদ দিয়ে থরের কাছে গেল। বা ভাইস ভারসা! এ বেছে নেওয়ার ব্যাপারটা আসে অন্ধ বিশ্বাস থেকে। যে মানুষ যুক্তি দিয়ে বিচার করবে দুটোই তার কাছে কাল্পনিক মিথ হিসাবে আবির্ভূত হবে যার জন্ম মানুষের কল্পনা থেকে। এখন মানুষের কল্পনারও অস্তিত্ব আছে। তবে সেটা কল্পনা হিসাবেই। সেটা পরম বা একমাত্র সত্য না। এটাই যৌক্তিক ভাবনা। কিন্তু আস্তিকরা যেটা করবে সেটা হচ্ছে প্রশ্নাতীত ভাবে কনসেপ্টগুলোকে একমাত্র পরম সত্য হিসাবে বিশ্বাস করবে। তারা ধর্মপ্রচারকদের কাল্পনিক বলয়টাকেই একমাত্র পরম সত্য মনে করবে। বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, যাপিত জীবন, মানুষের ইতিহাস সবকিছুই এই মনে করাটাকে যৌক্তিক ভাবে বাতিল করে দেয়। তবুও মানুষ মনে করে। কার্ন একমাত্র অন্ধবিশ্বাসী হলেই এমনটা মনে করা যায়। যেমন কেউ যিশুর পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে কিন্তু অলিম্পাস পাহাড়ে জিউস আছে এটা করে না। এই করা না করায় যুক্তি নাই। আছে বিশ্বাস। আর আমি এই সব কয়টাকেই কাল্পনিক সত্য হিসাবে দেখি যা মানুষের কল্পনা থেকে এসেছে। এটাই নাস্তিকতা। এবং এভাবে ভেবে দেখলে দেখা যাবে নাস্তিক হওয়াটাই যৌক্তিক। যা কোন বিশ্বাস না। যা প্রাপ্ত জ্ঞানের আলোকে নেওয়া একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। আস্তিকতার সিদ্ধান্ত আসে অন্ধ বিশ্বাস থেকে।
এখন প্রশ্ন হলো ধর্মপ্রচারকদের কনসেপ্ট কি আমি গ্রহন করব না বাতিল করব? একজন নাস্তিক হিসাবে আমি জানি, ধর্মপ্রচারকরা তার চারপাশ কে জেনে বুঝে মানুষের জন্য একটা পরম সত্য সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। ইতিহাসের প্রথম থেকেই মানুষ এটা করে আসছে। সব কনসেপ্টের সাথেই একই সাথে পর্যবেক্ষণ এবং কল্পনা মিশে থাকে। মার্ক্সের ব্যাপারও তাই। আবার গত শতকের নিতশের ব্যাপারও তাই। তবে ধর্মের বেলায় যেহেতু একটা পরম এবং একমাত্র সত্যের ব্যাপার আরোপ করা থাকে তাই এটা একটু বেশি বিপদজনক। যাইহোক, আবার যৌক্তিক ভাবে ভাবলে ধর্মপ্রচারকদের দেওয়া অনেক সমাধান আমার কাজে লাগতে পারে। আবার সময়ের প্রয়োজনে যা বাতিল করা দরকার তা বাতিলও করা যায়। এটাই যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি যা নাস্তিক হওয়ার যৌক্তিক সিদ্ধান্ত থেকে আসে।
ফেবু স্ট্যাটাস হিসাবে লেখাটা খারাপ হয় নাই। তবে দেওয়া যাবেনা। দিনকাল খারাপ। যদিও উদাহরন হিসাবে জিউস আর থরকে এনেছি তবুও বলা যায়না! তার চেয়ে বরং অন্যরকম কিছু ভাবা যাক!
মায়াবাস্তব ভ্রম
রোদ কিছুটা কমে এসেছে। ঘাম শুকিয়ে কেমন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে। এই সময়টাকে রাত ভাবলে কেমন হয়। একটা ভ্রমের জন্ম দেওয়া যায় কনসাসলি। যেমন এখন আসলে ভর দুপুর না। এখন রাত। এমন রাত যে রাতে চাঁদ ডুবে গেছে। জোনাকি পোকারা নেমে এসেছে। আর আমি কবিতা লিখছি,
চাঁদ ডুবে গেলে
জোনাকি পোকাদের উৎসব শুরু হয়।
সময়বন্দি মানুষের অসময়ে।
ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ভেঙ্গে যায় শূন্যতা
এক অদ্ভূত আঁধার ভেসে থাকে
ভেসে ভেসে খুব কাছে দিয়ে যায়
সমুদ্র এবং মদ এবং নারী ও জ্যেৎস্না।
আমি নেশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি!
তারপর হাটি অন্যকোথাও—অদেখা ভুবনে!
নেশার কাছে ফিরে আসা যাবে, যেকোন সময়!
ভর দুপুরের গল্প শেষ করে বাসায় যাওয়া দরকার। বরফপানিতে গোসল করে এক কাপ ধূমায়িত কফি নিয়ে গেম অব থ্রোনসের নতুন পর্বগুলো দেখা শুরু করা যেতে পারে। পথে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম এক জন্মান্ধ ফকির বসে মনের সুখে বিড়ি টানছে।তার পাশে একজন মানুষ মরে পরে আছে। মানুষটার চোখ দুটো খোলা । তবে তারা কেউ কাউকে দেখছে না।
সমাপ্ত......
প্রিয় ব্লগার শায়মা আপুকে জানাচ্ছি জন্মদিনের শুভেচ্ছা। যদিও জন্মদিন কাল। কিন্তু আজকেই জানিয়ে দিলাম। শুভজন্মদিন শায়মা আপু।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭