১
জাকির নায়েক মানুষটা স্মার্ট, উচ্চশিক্ষিত, অসাধারন বিতার্কিক এবং একজন দক্ষ সংঘটক, এই ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। এসব গুনাবলি তার মধ্যে আছে সেটা তিনি প্রমান করতে পেরেছেন। এসব গুনাবলি দিয়ে তিনি একজন দক্ষ ব্যবসায়ীতে পরিনত হতে পেরেছেন। আমরা জানি এই আধুনিক বিশ্বে যেকোন পণ্য কিংবা সেবার মার্কেটিং করে ব্যবসায়িক ভাবে সফল হওয়া সহজ কোন কাজনা। তবে জাকির নায়েক নিজের স্কিলগুলোকে কাজে লাগিয়ে খুব দ্রুত একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি সাধারণত মানুষকে ইসলামিক সেবা দিয়ে থাকেন। যাদের মনে ইসলাম নিয়ে সংশয় আছে এবং যারা ইসলামকে আঁকড়ে ধরে শান্তি পেতে চায় তাদের মন থেকে তিনি সংশয় দূর করে দেন। খুব দক্ষতার সাথেই তিনি এখন পর্যন্ত এ সেবা দিয়ে আসছেন। পরিসংখ্যান বলে তার দেওয়া ইসলামিক সেবায় সবচেয়ে বেশী উপকৃত হয়েছে আমাদের দেশের জনগন। তাদের মনে যে এত অশান্তি ছিল আগে কে জানত! তাদের জন্য তাদেরই টাকায় পিস টিভি নামক এক শান্তি বিতরণী ডিভাইস তৈরি করে দেওয়া হয়। যদিও আমাদের দেশের মানুষ মুনাফা না পেলেও ভোক্তা হিসাবে এই পিস টিভি নামক ডিভাইস থেকে নিয়মিত শান্তি পেয়ে থাকেন।
তবে ব্যবসা করতে নামলে প্রতিপক্ষ থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। জাকির নায়েকের প্রতিপক্ষ হিসাবে আবির্ভূত হয় একদল মুক্তমনা যারা সাধারণত বিজ্ঞানমনস্কতার মার্কেটিং করে থাকেন। তারা যুক্তির আলোয় মানুষকে আলোকিত করার সেবা দিয়ে আসছে। তার বিনিময়ে তারা কেউ কেউ সেলিব্রেটি হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই তারা জাকির নায়েকের ব্যবসায় লালবাত্তি জ্বালানোর জন্য উঠে পরে লাগে। তারা গবেষণা করে কিছু জিনিস আবিষ্কার করে ফেলে। সেসব হচ্ছে,
১) জাকির নায়েক ব্যবসার কৌশল হিসাবে অনেক খানি সত্য ইনফোর সাথে কয়েক ফোঁটা মিথ্যা ইনফো মিশিয়ে খুব আকর্ষণীয় ভাবে সেটা পরিবেশন করেন। এমন ভাবে সেটা তিনি করে থাকেন যেন মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়।এই লিঙ্কে
২) তিনি বিজ্ঞান, মেটাফিজিক্স এবং ধর্মীয় মতবাদ মিলিয়ে এমন এক ককটেল তৈরি করেন যা খেয়ে বিশ্বাসীদের খুব দ্রুত পিনিক হয়ে যায়। তারা তখন আর কোন কিছু থেকেই কোন কিছু আলাদা করতে পারেননা। তবে যারা অন্ধবিশ্বাসী না তাদের চোখে এসব খুব সহজেই ধরা পড়ে।এই লিঙ্কে এবং এই লিঙ্কে
৩) আধুনিক বিশ্বে সব প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার সাথেই রাজনীতির একটা সম্পর্ক আছে। জাকির নায়েকও কোন একটা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে আসছে। এটা ইহুদি নাসাদের ষড়যন্ত্র বলেও অনেকে মনে করে থাকেন। আবার অনেকের ধারনা ইহুদি নাসারা তাকে দিয়েই বিষে বিষ ক্ষয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।( এটা বাম এডিক্টদের ধারনা, দুষ্টরা আদর করে যাদের বামাতি বলে অভিহিত করে থাকেন)
টোব্যাকো বিজনেস কোন ভাবেই কোন কিছুর জন্যই ভালো ফলাফল বয়ে আনেনা। তবুও এই বিজনেস টিকে আছে। এই বিজনেসকে টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক জ্ঞানী গুনি লবিস্ট দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমন অনেক উদাহরন আছে। এসব বিজনেস টিকে আছে শুধু মুনাফার জন্য। এ মুনাফার ভাগ ক্ষমতাসীনরাও পেয়ে থাকেন। এখন আমাদের দেশ ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করার জন্য খুব উপযুক্ত একটা টার্গেট মার্কেটে পরিনত হয়েছে। অনেক ভোক্তাও তারা তৈরি করে ফেলেছে। ইসলামকে তারা অনেকটাই ড্রাগের মত করে ব্যবহার করছে। জাকির নায়েকও খুব দক্ষ বিজনেসম্যানের মত এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন।
২
১৯৭১ সালে পাকি সেনাদের বর্বর আক্রমণের জবাবে এ দেশে যদি গান্ধীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ধারন করা হত তাহলে ব্যাপারটা কেমন হত? ধরা যাক বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিলেন তোমাদের যার যা কিছু আছে তা দিয়ে শত্রুকে ভালোবাসতে হবে। আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধারা সেই ডাক শুনে যদি পাকি সেনাদের ভালোবেসে জীবন দিয়ে দিতেন তবে কি হত? তারা যদি ভালোবেসে পাকিদের আর তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ না হতেন তবে কি হত? খুব করে ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত?
আমাদের পরম সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধু তেমন কোন ভাষণ দেন নাই। তিনি বরং বলেছিলেন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। তিনি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। আমাদের অসীম সাহসি মুক্তিযোদ্ধারা তার সেই ডাকে সারা দিয়ে নয়মাস জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। অনেক মূল্য দিতে হয়েছিল। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, দুই লক্ষ মা বোনের ত্যাগের বিনিময়েই জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ নামক এ রাষ্ট্রটির।
আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কেন যুদ্ধ করেছিলেন? সময়ের প্রয়োজনে যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় যুদ্ধ করেছিলেন। প্রিয় স্বদেশ এবং স্বদেশের প্রিয় মানুষকে ভালোবেসে তাদের রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। পাকিদের ধর্মের নামে সধারন মানুষ হত্যার বুলিতে তারা বিভ্রান্ত হয়নাই। এদেশের রাজাকার আলবদরা মানুষকে ধর্মের নামে, ধর্মের অজুহাত দেখিয়ে মানুষ হত্যার সমর্থন আদায় করতে চেয়েছিল। উল্টা নিজেরাই ধর্মের নামে মানুষ হত্যার জন্য কচুকাটা হয়েছিল।
আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কোন নিরশ্ত্র নিরীহ পাকি নারী পুরুষদের হত্যা করেনাই। কোন সধারন পাকি নাগরিককে হত্যা করেনাই। যারা কাপুরুষের মত মানুষ হত্যার খেলায় সামিল হয়েছিল সেসব মানুষরুপি জানোয়ারদের হত্যা করে মনুষ্যত্ব রক্ষা করেছিল।
ভাঙ্গা রেকর্ডের মত এসব কথা বলার একটা কারন আছে। আমাদের দেশে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাব হয়েছে। তাদের কেউ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিকে অমানবিক মনে করে। তাদের কেউ কেউ হেফাজতের আন্দোলনকে সেক্যুলার আন্দোলন বলে প্রমান করার চেষ্টা করে। আবার কেউ কেউ জঙ্গিদেরকেও ভালোবাসতে হবে এমন ধারনা প্রচার করেন। এদের অনেকেই আবার ইসলাম এবং নবীর সমালোচনা এবং ফতোয়া দিয়ে মানুষ হত্যাকে একই টাইপ অপরাধ বলে অপরাধীদের পরোক্ষভাবে আরো উৎসাহিত করে ফেলে। এদের যুক্তি হচ্ছে ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করে ফেলতে হবে। এক গালে থাপ্পর দিলে আরেক গাল পেতে দিতে হবে। এরা একাত্তরে পাকিদের হাতে পড়লে কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর হাতে পরলে কি করত এটা নিয়ে একটা ডার্ক কমেডি লিখে ফেলা যেতে পারে। তবে তারা যতই ভালোবাসার কথা বলুক জঙ্গিরা এদেরকেও সহি মুসুলমান মনে করেনা।
আবার আরেক দল আছে। তারা যেকোনো ইস্যুতে কেটে ফেলা মেরে ফেলা সমাধানে বিশ্বাসী। এদের কথা হচ্ছে ছেলে চুরি করলে বাবার হাতও কেটে দিতে হবে। মা অপরাধ করলে মেয়েকেও পাথর মারতে হবে এই টাইপ সমাধান। এদের ডিভাইস হচ্ছে ঘৃণা। এরা পাকিস্থানে শিশু এবং নারী বোমা হামলায় নিহত হলেও উল্লসিত হয়ে স্ট্যাটাস দেয়। এদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ফ্যাসিস্ট দৃষ্টিভঙ্গির অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়!
এখন আপনাদের মনে হতে পারে আমি কোন দলে আছি! আমি এদের কোন দলেই নেই। ভালোবাসা এবং ঘৃণা মানুষের সহজাত অনুভুতি। তবে সেটা কখন, কোথায় কার প্রতি কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে সেটা একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। সেটা সঠিক সময়ে যৌক্তিক ভাবে প্রয়োগ করাই একজন প্রকৃত নেতা কিংবা বুদ্ধিজীবীর কাজ। এই জন্যই বঙ্গবন্ধু ভালোবাসার ডাক না দিয়ে যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন আবার মাদার তেরেসা ঘৃনার পথ পরিহার করে সবাইকে ভালোবাসতে বলেছিলেন। তারা দুজনই সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করেছিলেন।
৩
আমাদের দেশে ভারত বিদ্বেষীর সংখ্যা অনেক। তবে এদের মধ্যে দুইটা টাইপ আছে। এক দল রাজনৈতিক কারনে ভারত বিদ্বেষী। আরেক দল ধর্মের কারনে ভারত বিদ্বেষী।
যারা রাজনৈতিক কারনে ভারত বিদ্বেষী তারা আসলে রাজনৈতিক দূরদর্ষিতার কারনেই ভারতের সাম্রাজ্যবাদী টাইপ আগ্রাসনকে ক্ষতিকর বলে মনে করে। এদের তথ্য সমৃদ্ধ বিশ্লেষণ পড়লেই সেটা বুঝা যায়। তবে এসব বিচক্ষন মানুষদের সাথে মিশে গিয়ে অনেকেই অনেক সময় ভারতের বিরুদ্ধে প্রচারনায় নেমে পরে। তবে একটু সচেতন ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝে ফেলা যায় যে এরা আসলে ভারতের সাম্রাজ্যবাদী বাজার দখলের নীতি নিয়ে চিন্তিত না। এদের সব দরদ কিংবা বিদ্বেষের কারন হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতি। তবে এদেরকে কিন্তু খুব সহজে আলাদা করে ফেলা যায়। কিছু পয়েন্ট নিচে উল্লেখ করা হলো।
১) সরাসরি মালাউন কিংবা মালাউনের জাতি বলে গালি দিয়ে ফেলা। এরা ভারত প্রসঙ্গ আসলেই খুব বেশীক্ষণ মালাউনদের প্রতি ঘৃণার ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারেনা।
২) ভারতকে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর না মনে করে ইসলামের জন্য ক্ষতিকর হিসাবে উপস্থাপন করার প্রবনতা এদের মধ্যে আছে।
৩) যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে ভারতের ষড়যন্ত্র হিসাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।
৪) যারা গুলশানে জঙ্গি হামলার প্রথম থেকেই এই হামলাকে ভারতের সেনাবাহিনীর কাজ বলে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে।
৫) যারা ভারতের সব কিছুর বিরোধী কিন্তু জাকির নায়েকের খুব ভক্ত! স্টার জলসা বন্ধ করার আন্দোলনে সক্রিয় কিন্তু পিস টিভি বন্ধ করার প্রসঙ্গ আসলেই প্রতিবাদে ইভেন্ট খুলে ফেলে
আরো অনেক আছে এমন বৈশিষ্ট্য! কেউ কিউরিয়াস মাইন্ড নিয়ে অনুসন্ধান করলেই পেয়ে যাবেন।
আমাকে ট্যাগিং করে যে কেউ গালাগালি করতে চাইলে করতে পারেন। তবে গালিবাজদের আমি পাড়ার মাথানষ্ট পাগলদের মতই মনে করি। পাগল গালি দিলে আমরা কি করি? পাশ কাটিয়ে চলে যাই। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারলে সবচেয়ে উত্তম হত। না নিতে পারাটা ব্যর্থতা বটে! তবে ইগনোর করাটা ইফেক্টিভ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৭