মার্ক্সবাদ এবং দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ কি বিজ্ঞান নাকি শুধুই একটি কালকে অতিক্রম করতে না পারা দার্শনিক মতবাদ এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।মার্ক্সবাদীরা দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদকে বিজ্ঞানের সকল শাখার সমন্বিত রুপ বলেই মনে করে।অপরদিকে অনেক বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ এবং সমাজবিজ্ঞানী মার্ক্সবাদকে এবং দ্বন্দ্বমুলক বস্তুবাদকে ছদ্ম বিজ্ঞান বলেই প্রমান করেছেন।তবে মার্ক্সবাদ অনেকভাবেই ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে ব্যর্থ প্রমানিত হয়েছে।তবুও এখনো সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে যৌক্তিক ভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য মার্ক্সবাদের চেয়ে যৌক্তিক কোন মতবাদ আছে বলে আমার মনে হয়না।অন্যদের এ ব্যাপারে ভিন্ন মতামত থাকতে পারে।এ ব্যাপারটি নিয়ে অনেকদিন ধরেই কিছু লিখব বলে ভাবছিলাম।বিশেষ করে সচলায়তন ব্লগে অভিজিৎ রায়ের মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান?প্রবন্ধে এর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তর্ক পড়ে মনে হয়েছে আমাদের দেশেও মার্ক্সবাদকে যৌক্তিক এবং নিরপেক্ষ ভাবে বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে।তাই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতেই একটি তুলনামূলক আলোচনা করার চেষ্টা করব।আমার কাছে এই বিষয় নিয়ে লেখার জন্য যেসব রেফারেন্স প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে তার আলোকেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।
মার্ক্সবাদের পটভূমি
মার্ক্সবাদ এবং দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি।বরং এই দর্শনকে অনেক দর্শনের সমন্নয়ে গড়ে ওঠা একটি প্রায়োগিক দর্শন বলা যেতে পারে।বস্তুবাদের ধারনা কার্ল মার্ক্সই প্রথম দেননি।গ্রীক দার্শনিক থেল্স্, ডেমোক্রিটাস্, ইপিকিউরাস্ প্রমুখের দর্শনে আমরা বস্তুবাদের দেখা পাই।পরবর্তীতে হবস এবং ফুয়েরবার্খের দর্শন চর্চাতেও আমরা ভিন্ন আঙ্গিকে বস্তুবাদের কাঠামো সম্পর্কে জানতে পারি। কার্ল মার্ক্স “The difference between the Democritean and Epicurean philosophy of nature”- এই বিষয়ের উপর পিএইচডি করেছিলেন।ধারনা করা হয় এই বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তিনি দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের ধারনা পান। দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতেও মার্ক্সের পূর্ববর্তী দার্শনিকদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যেমন মার্ক্স হেগেলের দ্বন্দ্বমূলক ভাববাদ দ্বারা প্রভাবিত হন।কিন্তু মূলত হেগেলের ‘অরিজিনাল আইডিয়া’ মার্ক্সের কাছে যৌক্তিক ব্যাখ্যা মনে হয়নি।হেগেলের কিছু ছাত্র তার এই মতবাদের বিরোধিতা করেছিলেন।তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন মার্ক্স এবং ফুয়েরবার্খ।তাই হেগেলের এই মতবাদ থেকে সরে এসে মার্ক্স দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ এবং ফুয়েরবার্খ যান্ত্রিক বস্তুবাদ নিয়ে কাজ করেন।
দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ
দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সবকিছুকেই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অবস্থায় বিবেচনা করে দ্বান্দ্বিক ভাবে বিশ্লেষণ করে।অর্থাৎ এ মতবাদে সবকিছুকেই বস্তুরুপে দেখা হয় এবং সকল বস্তু একে অপরের সাথে দ্বান্দ্বিক অবস্থায় বিরাজ করে।দুইভাবে এই দ্বন্দ্ব কাজ করে।একটি হচ্ছে বস্তুর নিজের অভ্যন্তরে ঘটে চলা দ্বন্দ্ব যাকে অন্তর্দ্বদ্ব বলা হয়।অপর দ্বন্দ্ব হচ্ছে বহিঃদ্বন্দ্ব যা দ্বারা একটি বস্তুর সাথে অপর বস্তুর দ্বন্দ্বকে বুঝানো হয়।তবে মার্ক্স অন্তর্দ্বদ্বকেই মূল দ্বন্দ্ব মনে করতেন এবং তার মতে বহিঃদ্বন্দ্ব শুধু অন্তর্দ্বদ্বকে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু বস্তুর ভিতর থেকে পরিবর্তন না হলে আসলে পরিবর্তন সাধিত হবেনা।যেমন সমাজ পরিবর্তনের গুণাবলী যদি সমাজের মধ্যে না তাহলে সামাজিক পরিবর্তন আসবে না। অর্থাৎ সমাজের মধ্যে থেকেই যদি পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা এবং চেষ্টা না থাকে তবে বাইরে থেকে প্রভাবিত করে সমাজ পরিবর্তন করা যাবে না।
কার্ল মার্ক্স মানব সভ্যতার ইতিহাসকেও দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন।যেমন সমাজের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীগত দ্বন্দ্ব রয়েছে।জাতিতে জাতিতে দ্বন্দ্ব, ধর্ম নিয়ে দ্বন্দ্ব, বর্ন নিইয়ে দ্বন্দ্ব।এমন অনেক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আমরা সমাজের মধ্যেই দেখতে পাই।তবে মার্ক্সের মতে সকল দ্বন্দ্বের মাঝেও একটি প্রধান দ্বন্দ্ব থাকে।পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় সেই প্রধান দ্বন্দ্ব হচ্ছে শ্রম এবং পুঁজির মধ্যে দ্বন্দ্ব।
দ্বন্দ্বমুলক বস্তুবাদের তিনটি মূলনীতি রয়েছে।মূলনীতিগুলো হচ্ছে,
১) বিরোধী শক্তির ঐক্য (unity of opposites)
2) বিকাশের পথে অবলুপ্তি, অবলুপ্তির পথে বিকাশ (Negation of the negation)
৩) পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন (From quantitative change to qualitative change)
১) বিরোধী শক্তির ঐক্য (unity of opposites)
সবকিছুর মধ্যেই এক ধরনের বিপরীতধর্মী স্বভাব বিরাজ করে।যেমন ধনাত্মক, ঋণাত্মক চার্জ কিংবা ইলেকট্রন প্রোটনের মত মানব সমাজেও বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য এবং শক্তির অবস্থান দেখতে পাওয়া যায়। এই বিপরীতধর্মী শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হলেই দ্বিতীয় মূলনীতি অর্থাৎ 2) বিকাশের পথে অবলুপ্তি, অবলুপ্তির পথে বিকাশ (Negation of the negation) হয়।
2) বিকাশের পথে অবলুপ্তি, অবলুপ্তির পথে বিকাশ (Negation of the negation)
এই নীতি সমাজের সৃষ্টি এবং ধ্বংসকে ব্যাখ্যা করে। অর্থাৎ সৃষ্টি এবং ধ্বংস পরস্পর সম্পর্কজুক্ত।সৃষ্টির মাধ্যমে যেমন ধ্বংস হয়।তেমনি ধ্বংসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।
৩) পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন (From quantitative change to qualitative change)
সমাজে অল্প কিছু পরিবর্তন ঘটলে সেটাকে পরিমাণগত পরিবর্তন বলা যেতে পারে।কিন্তু সে ক্ষেত্রে সমাজের গুনগত পরিবর্তন হবেনা। সমাজ সম্পূর্ণ নতুন সমাজে পরিনত হলেই তার গুণগত পরিবর্তন হবে।
মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান না দর্শন?
মার্ক্সবাদীরা মার্ক্সবাদকে বিজ্ঞান বলে মনে করে। অর্থাৎ তারা মার্ক্সবাদের বিভিন্ন সূত্রগুলোকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার প্রমানিত সুত্রের মতই প্রায়োগিক বলে মনে করে। কিন্তু পরবর্তীতে অনেক দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী মার্ক্সবাদকে ছদ্ম বিজ্ঞান বলেই অভিহত করেন।তারা তাদের মতবাদ প্রমান করার জন্য বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন কার্ল পপার। কার্ল পপার তার 'ফলসিফায়াবিলিটি” তত্ত্বের মাধ্যমে মার্ক্সবাদকে ছদ্ম বিজ্ঞান হিসাবে প্রমান করেন। কার্ল পপারের মতে,
'If something is scientific, it must be logically possible to find evidence that can falsify, refute or show it is wrong'.
অর্থাৎ কোন মতবাদকে বিজ্ঞান হতে হলে সেটাকে প্রমানিত হতে হবে।যা কিছুকে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে প্রমান করা যায় না তা একটি মতবাদ হতে পারে কিন্তু বিজ্ঞান নয়। পপারের মতে ‘A theory is scientific to a degree to which it is testable.’
যেমন আমরা যদি বলি জিউস অলিম্পাস পাহাড়ের চূড়ার বাস করে।এটি একটি মিথ।এখন আমরা এই মিথকে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বাতিল কিংবা গ্রহন করতে পারব না।তাই একে কখনো বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।আবার যদি নিউটনের গতি সূত্রের কথা ভাবি তাহলে দেখা যাবে সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমেই গ্রহন করা হয়েছে।তাই সে সুত্রগুলো বৈজ্ঞানিক সূত্র হিসেবেই বিবেচিত হবে।কিন্তু মার্ক্সের এমন অনেক মতবাদ আছে যাতে ফলসিফায়াবেলিটির অভাব রয়েছে।যেমন মার্ক্সের তত্ত্বে শ্রমিকদের Increasing misery পরিমাপের কথা বলা হয়েছে।কিন্তু এটা পরিমাপ করার কোন গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড নাই।যেমন ধরা যাক আমি যদি বলি আমি অনেক আনন্দে আছি এবং তারপর যদি আমি কতটা আনন্দে আছি সেটা পরিমাপ করতে চাই তবে সেটা সম্ভব হবেনা। তাই এ প্রসঙ্গে রুপার্ট য়ুডফিন বলেন‘…Increasing misery can be explained without reference to value. We don’t know if it is significant and have no way to finding out.’।আবার মার্ক্সের এলিনেশন থিওরী সম্পর্কে মার্ক্স বলেছেন – ‘We have only the illusion of happiness, because it is an essential part of our nature to be in a proper relationship to these things.। অর্থাৎ তিনি বলেছেন আমরা সুখে আছি এটা আমাদের ভ্রান্তি। কিন্তু এই ভ্রান্তিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বাতিল কিংবা গ্রহন করার কোন উপায় নেই। ‘ডায়েলেক্টিক্স’ ব্যাপারটি নিয়েও তেমন ভাবে কিছু যুক্তি প্রদর্শন করা যায়। ফলসিফায়েবল কিনা তা বিবেচনার দাবী রাখে। পপার এ মতবাদকে রহস্যময় এবং অপ্রমানযোগ্য বলে দাবি করেছেন।
আবার ফলসিফিকেশনের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করলেও মার্ক্সবাদকে বিজ্ঞান বলা যায় না। যেমন যখন কোন বৈজ্ঞানিক মতবাদ দেওয়া হয় তখন সে মতবাদকে এক ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে আসতে হয়।অর্থাৎ প্রমানিত হতে হয়।যেমন প্রমানিত হতে না পারায় অতীতের অনেক বৈজ্ঞানিক মতবাদই বাতিল বলে গণ্য হয়েছে।ঠিক তেমন ভাবে বলা যায়, মার্ক্সের অনেক ভবিষ্যদ্বানীই ভুল প্রামণিত হয়েছে।যেমন মার্ক্স ইতিহাস বিশ্লেষণ করে বলেছিলেন প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হবে জার্মানিতে।কিন্তু বিপ্লব হয়েছে রাশিয়াতে।অথচ রাশিয়া তখনো সামন্তবাদ থেকে পুঁজিবাদী সমাজে বিকাশ লাভ করেনি।সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব কখন কোথায় কিভাবে হবে তা নিয়ে মার্ক্সের বিশ্লেষণ ভুল প্রমানিত হয়েছে। এ সম্পর্কে পপার বলেছেন,
‘It has been predicted revolution would happen first in the technically highest developed countries, and it is predicted that the technical evolution of the ‘means of production’ would lead to social, political, and ideological movements, rather than other way round… But (so-called) socialist revolutions came first in one of the backward countries.’।
মার্ক্সবাদের প্রয়োগ নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। যেমন অনেকেই মনে করেন প্রয়োগে ভুল হয়েছে বলে তত্ত্ব প্রমানিত হয়নি। কিন্তু শুধু মাত্র তত্ত্ব এবং প্রয়োগ দিয়ে ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করা যাবেনা।কারন্র ইতিহাসের গতিপথ কখনো সহজ সরল পথে চলে না।তাই শুধু মাত্র অতীত সভ্যতাকে বিশ্লেষণ করে কিছু তত্ত্ব কিংবা সিদ্ধান্ত দিয়ে সমাজের গতিপথ পরিবর্তন করে ফেলা যায়না।যেমন মার্ক্সের ইনএভিটেবল' বিপ্লব তত্ত্ব অধিকাংশ সময়েই ভুল প্রমানিত হয়েছে।তিরিশের দশকে চরম অর্থনৈতিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিপ্লব হয়নি।মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান সম্পর্কে মার্ক্সের ধারনা এবং অনুমান ভুল প্রমানিত হয়েছে।
মার্ক্সবাদীদের যুক্তি
মার্ক্সবাদীরাও বিভিন্ন যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধমতের বিরুদ্ধে তাদের যৌক্তিক অবস্থান তুলে ধরেছেন।এখানে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
মার্ক্সবাদীরা মনে করেন মার্ক্সবাদ হচ্ছে বিজ্ঞান।অর্থাৎ বিজ্ঞানের অনেক শাখার মত মার্ক্সবাদও বিজ্ঞানের একটি বিকশিত ধারা।তাদের মতে এই মতবাদ শুধুই একটি দর্শন নয়।কারন এই মতবাদের প্রায়োগিক ভিত্তি আছে।তাদের মতে অন্যান্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মতই মার্ক্সবাদও প্রয়োগের মাধ্যমেই কাঠামোগত ভাবে শুদ্ধ হয়ে উঠবে।অনেকের ধারনা এখনো এই মতবাদ পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয়নি।
শিবদাস ঘোষ তার মার্ক্সবাদ এবং দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের কয়েকটি দিক গ্রন্থে মার্ক্সবাদ কেন বিজ্ঞান তার কিছু যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
"গোটা বস্তুজগতকে ফর্মাল লজিক অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভাগ করে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার যে পদ্ধতি চালু আছে তাকে প্রয়োগ করে বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন বিশেষ ক্রিয়াকলাপ,বিশেষ নিয়ম,বা ভিন্ন ভিন্ন গুনগুলোকে আমরা আলাদা করে জানছি।কিন্তু মনে রাখা দরকার, বস্তুর এই ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম কিংবা গুনগুলোকে জানলেই তা থেকে আমরা পুর্নাঙ্গ বস্তু ধারনা পেতে পারিনা- যেমন পেতে পারিনা মানবসমাজ, তার নীতি নৈতিকতা, প্রগতি-প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত নানাবিধ সমস্যার সঠিক সমাধান।"
অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন বিজ্ঞানের আলদা শাখাগুলো থেকে আহরিত জ্ঞান থেকে আমারা বস্তুজগতের কোন সামগ্রিক ধারনা পাইনা। জ্ঞানের বিশৃঙ্খল অবস্থানের কারনে সমাজের প্রগতি বাঁধাগ্রস্থ হয়। তাই বিজ্ঞানের সকল শাখাকে সমন্নয় করার জন্য একটি সামগ্রিক বিজ্ঞানের প্রয়োজন যা মানব কল্যাণে বিজ্ঞানকে সঠিক পথে নিয়ন্ত্রিত করবে।আর সেই সামগ্রিক বিজ্ঞানই হচ্ছে মার্ক্সবাদ। তাই মার্ক্সবাদীরা দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদকে দর্শন নয় বরং বিজ্ঞান মনে করে। তাদের ধারনা দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বিজ্ঞানের বিচ্ছিন্ন শাখাগুলোকে সমন্বিত করে একটি সামগ্রিক বিজ্ঞানের কাঠামো গঠন করেছে।
শিবদাস ঘোষের বিশ্লেষণ যৌক্তিক এবং প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় তা নিয়ে আলোচনা করলাম।দেশে বিদেশে অনেক মার্ক্সবাদী স্কলার এ ব্যাপারে অনেক ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু সেসব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এই লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে।
পরিশেষে
আধুনিক সভ্যতাকে মার্ক্সবাদ অনেকভাবেই প্রভাবিত করেছে।বিশেষ করে আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে শোষিত মানুষকে শোষণ মুক্তির আন্দোলনে আলোড়িত করেছে মার্ক্সবাদ।মেহনতি মানুষকে দেখিয়েছে উন্নত জীবনের স্বপ্ন।আমিও যখন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন কিংবা পুঁজিবাদের লাগামহীন শোষণ থেকে কিভাবে মুক্ত হওয়া যায় সেটা নিয়ে ভাবি তখন মার্ক্সবাদের কোন বিকল্প খুঁজে পাইনা।যুগে যুগে অনেক আন্দোলন, দর্শন, সাহিত্য মার্ক্সবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েই সৃষ্টি হয়েছে।কিন্তু আমি যখন মার্ক্সবাদ বিজ্ঞান কিনা এটা বিভিন্ন স্কলারদের যৌক্তিক বিশ্লেষণ এবং যুক্তি তর্কগুলো পড়ি তখন আমার কাছেও মনে হয় মার্ক্সবাদ বিজ্ঞান হতে পারেনা।বরং মার্ক্সবাদকে এমন একটি দর্শন হিসেবেই দেখি যার প্রয়োগে সমাজে প্রগতি সম্ভব।কিন্তু তার জন্য মার্ক্সবাদকে বিজ্ঞান কেন হতে হবে তার কোন কারন খুঁজে পাইনা।
মার্ক্সবাদ বিশাল একটি ব্যাপার।এই মতবাদের রয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পটভূমি।কিন্তু আমি আমার আলোচনা শুধু মার্ক্সবাদ এবং বিজ্ঞানের তুলনামুলক পর্যালোচনায় সীমাবদ্ধ রেখেছি।আমি যেভাবে পড়েছি এবং বুঝেছি সেভাবেই আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।তাই ভুল ত্রুটি থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।তাই সেসব নিয়ে সবাই যৌক্তিকভাবে আলোচনা করবে এই আশা রাখছি।
তথ্যসূত্র
মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান?
মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান? কিছু আনুষঙ্গিক ব্যাখ্যা
কার্ল মার্ক্স (১৮১৮-১৮৮৩) ও তাঁর দর্শন
Science as Falsification by Karl R. Popper
Why Marxism-Leninism-Maoism is a Science
The Ideas of Karl Marx Written by Alan Woods
Dialectical Materialism and Modern Science
মার্কসবাদ ও দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের কয়েকটি দিক( শিবদাস ঘোষ)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৭