আমি এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে নারীরা রাতের আঁধারেও শহর-বন্দরে একাকী নিরাপদে চলতে পারবে। পুরুষ নামক কোন নরপশু তার পথ আগলে দাড়াবে না- তাকে স্পর্শ করবে না। পথিক তার জান-মাল নিয়ে একাকী রাস্তায় চলতে পারবে। মানুষরুপী কোন সন্ত্রাসী বন্দুকের ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনতাই করবে না। যেখানে থাকবে না হানাহানি, অন্যায়, অবিচার, খুন, গুম, ধর্ষণ, জুলুম, নির্যাতন। দেশের সকল নাগরিক তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে। কোন নারী, শিশু, বৃদ্ধ ক্ষুধার যন্ত্রণায় আর্তনাদ করবে না। শিয়াল-কুকুরের সাথী হয়ে কোন বনী আদম ডাস্টবিনের পচা খাবার খাবে না। শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে কোন অসহায় রাত্রীযাপন করবে না। যেখানে আমার ধর্ষিতা বোনের বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হবে না। এসিড নিক্ষেপে আমার কোন বোনের চেহারা ঝলসে দেওয়া হবে না। বাসস্থানের অভাবে কোন মানব সন্তান ফুটপাথে, রেল স্টেশনে রাত্রী যাপন করবে না। সুদের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে কোন অভাবী তার ভিটে মাটি বিক্রি করে দেবে না। ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোন নাগরিকের অধিকার হরণ করা হবে না। অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেফতার করে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হবে না। বিচারের নামে প্রহসন, দলীয়করণ, পক্ষপাতদুষ্টতা ও অবিচার করা হবে না। সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা চিৎকার শুনতে হবে না। বাবার সামনে মেয়ে, ছেলের সামনে মা, ভাইয়ের সামনে তার বোনকে ধর্ষিতা হওয়ার মত কোন নৃশংস ঘটনা ঘটবে না। দেশে রাজনীতির নামে পেটনীতি, সন্ত্রাস, খুন-গুম, সহিংসতা, বোমা হামলা, জন-অধিকার হরণ করা হবে না। নির্বাচনের নামে তামাশা, ভোট ডাকাতি ও ভোটাধিকার হরণ করা হবে না। দুর্নীতি-দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়া হবে না। ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাস, অপহরণ, চাঁদাবাজি, হলদখল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। জাতির পথপ্রদর্শক শিক্ষকদেরকে ছাত্রের হাতে লাঞ্চিত হতে হবে না। বেতনের দাবীতে শিক্ষক, কর্মচারী, শ্রমিক কাউকে রাস্তায় আন্দোলন করতে হবে না। যেখানে কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কটুক্তি করা হবে না। ধর্মীয় আইনের বিরুদ্ধে আইন পাশ করা হবে না। ইসলামের নামে গুপ্ত হত্যা, সস্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদের স্থায়ী মুলোৎপাটন করা হবে।
আমি এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে দেশের স্থায়ী শান্তি, মানবতার মুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা হবে। যেখানে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হবে। ধনী-গরীবের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর হবে। দুর্নীতি, দুঃশাসনকে স্থায়ীভাবে মুলোৎপাটন করা হবে। নাগরিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কলহ বিবাদ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। কৃষক-শ্রমিকগণ তাদের নায্য অধিকার ফিরে পাবে। শাসকগোষ্ঠী শাসনের নামে শোষণ নয়, বরং সত্যিকারে জনগণের সেবকের ভুমিকা পালন করবে। পুলিশ প্রশাসন জনগণের পরম বন্ধু হবে। থানা, প্রশাসন, আদালত হবে জনগণের আশা-ভরসার জায়গা। পেশীশক্তি, আধিপত্য আর ঘুষের জোরে সত্য চাপা দেওয়া হবে না, বরং ন্যায়বিচার করা হবে। অন্যায় করলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিকেও আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। সমান অধিকার নয়, বরং নারীরা সকল ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। অফিস-আদালত, শিক্ষাঙ্গণ, চাকুরী, ব্যবসা সকল ক্ষেত্রে নারীরা অংশগ্রহণের অবাধ স্বাধীনতা পাবে। বিচারের দীর্ঘসুত্রতা বন্ধ করে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সাথে সাথে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষাব্যবস্থ্যায় পরিবর্তন এনে ত্রিধারা শিক্ষাব্যবস্থাকে একধারায় রুপান্তর করা হবে। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীরা তাদের স্ব-স্ব ধর্মীয় শিক্ষা লাভের সুযোগ পাবে। শিক্ষার সকল ব্যয়ভার রাষ্ট্র বহন করবে। সহশিক্ষার পরিবর্তে ছেলে-মেয়েদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাঙ্গণের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক চরিত্র গঠন করে শিক্ষার্থীদের সোনার মানুষে রুপান্তর করা হবে। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম, আচার-অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালন করবে। মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারবে, সত্য কথা, নায্য দাবীর কথা উচ্চকন্ঠে বলার মত বাক-স্বাধীনতা থাকবে। শাসকশ্রেণী সাধারণ নাগরিকের মত জীবন-যাপন করবে। জনগণের সুখ-দুঃখের ভাগী হবে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার জিম্মাদারিত্ব নেবে। টিভি-সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অশ্লীলতার প্রচার বন্ধ করে সুস্থ ও বস্তুনিষ্ঠ সংস্কৃতি প্রচার করবে। যেখানে চিত্তবিনোদন থাকবে, কিন্তু অশ্লীলতা থাকবেনা। মানবতা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল নাগরিক দেশের কল্যাণে, দেশ গঠনে ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকা পালন করবে।
দেশে শান্তির সু-বাতাস বইবে। ভোর হবে, পাখি ডাকবে, মানুষ সস্তির ঘুম থেকে ক্লান্তি দূর করে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠবে। কৃষক, শমিক, মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফুটে উঠবে। শিশুদের কোলাহলে পৃথিবীটি স্বর্গীয় রুপ নেবে।
আমি এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি.....
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৪৭