সেদিন সকালের আকাশটা হাস্যজ্জল ছিল। চতুর্দিকে কর্মব্যস্ত মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে। অত্যন্ত ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে শহরের সবচেয়ে অভিজাত কফিশপের দিকে রওয়ানা হয়েছি। আজ ইউনিভার্সিটি না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ সকাল বেলা আম্মু তিন পৃষ্ঠার একখানা বাজার লিস্ট হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। লিস্টের শুরুতেই শেরওয়ানি, টোপর, গহনা এগুলো লেখা।
: আম্মু! এসব বিয়ের বাজার করতে আমাকে পাঠাচ্ছে কেন?
: বিয়েই বা কার?
জিজ্ঞেস করতেই ধমক দিয়ে বললেন- তোর এতকিছু জানতে হবে না। জলদি এগুলো কিনে নিয়ে আয়! বুঝতে আর বাকী রইল না, বিয়ের জোয়াল আমার কাধেই চড়ানো হচ্ছে। আম্মুর কোন কথা কখনো অমান্য করিনি। কিন্তু এই বিয়ের ব্যপারটা বরাবরই অস্বীকার করে আসছি। গত পাঁচ বছর ধরে বলে আসছি, আর ছ’মাস পর বিয়ে করব। পাঁচ বছর পর এখনো বলে আসছিলাম একই কথা। কথার পরিবর্তন করিনি- কারণ, আজ এক কথা আবার কাল আরেক কথা বলাতো ঠিক না। এ নিয়ে আম্মুকে অনেকবার ঝাড়ি দিয়েছি। তাই বিয়ের দিনক্ষণ পাকা করেও আমাকে জানানো হয়নি।
বাইক নিয়ে লেকের পাড়ে পৌছাতেই পুুলিশ ও সাধারণ মানুষের ভীড় দেখতে পেলাম। ঘটনা জানতে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। অজ্ঞাত তরুণীর রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। দেখে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে, গতরাতে খুন হয়েছে। শুধু খুন নয়, কাটাঁ-ছেড়া বস্ত্র দেখে বুঝা গেল শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা। ফুরফুরে মেজাজটা আকস্মিক বিগড়ে গেল। মুহূর্তেই হৃদয়ের আকাশে কালো মেঘ জমে উঠল। কালবৈশাখী ঝড় এসে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল চেতনা জগত। কাদাঁ-মাটি ও রক্ত মাখা চেহারা। তা সত্ত্বেয় মেয়েটাকে স্পষ্ট চিনতে পারলাম।
সপ্তাহ খানেক আগে আম্মু এ মেয়েটার ছবিই আমাকে দেখিয়েছিলেন। ক্যম্পাসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি, তখন আম্মু ছবিটা দেখিয়ে বলেছিলেন, দেখতো মেয়েটা কেমন? বললামঃ সুন্দর। হ্যাঁ! এই মেয়েটির সঙ্গেই আজ আমার বিয়ে হওয়ার কথা।
মেয়েটির লাশ তদন্তের জন্য থানায় নেওয়া হল। ইতিমধ্যে মেয়ের বাবা মা থানায় অভিযোগ করেছেন। বাবা-মা থানায় আসলেন, পুলিশের কাছে বিস্তারিত খুলে বললেন। মেয়েটির নাম সাদিয়া মেয়ের বাবা-মা জানালেন,
“একটা ছেলের সাথে আমার মেয়ের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিল। ছেলেটি বেকার বলে এখনি বিয়ে করতে চাচ্ছিল না। আমরাও রাজী হয়নি। অন্যত্র পাত্র ঠিক করেছিলাম। আজই সেখানে বিয়ে হওয়ার কথা। আমাদের ধারণা এ কারণে ঐ ছেলেটিই আমার মেয়েকে খুন করেছে।”
গতরাতের বর্ণনা দিয়ে মেয়ের মা জানালেন, সন্ধ্যায় সাদিয়ার কাছে একটা ফোন আসল। শপিং করার কথা বলে ও বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আর ফিরে আসেনি। রাত নয়টা থেকে ফোন করছি। তখন থেকে ফোন বন্ধ।
পুলিশ ছেলেটিকে খুঁজে বের করল। ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সাথে সু-সম্পর্ক থাকার সুবাদে প্রশাসন মুখে কুলুপ এটে বসল। একটি সত্য ঘটনাকে পুলিশ চাপা মাটি দিল। আর সাদিয়ার লাশ মর্গে দিল পোস্টমর্টেম করতে। স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেয় খুনী ছেলেটার কিছুই হল না। এমন জুলুম, এমন নির্লজ্জতা, মানবতার এতটা ভয়াবহ বিপর্যয় পৃথীবি হয়েতা আর কখনো দেখিনি।
ঘটনার অন্তর্নিহিত কারণঃ
১. পশ্চিমা কালচারে প্রভাবিত অবৈধ প্রেম-প্রণয়।
২. দীর্ঘ জীবন লেখাপড়া করে বেকারত্বের বোঝা বহন করা। যা পুরুষকে সঠিক সময়ে বিয়ে করতে বাঁধা দেয়, কিন্তু প্রেম করতে বাঁধা দেয় না।
৩. ক্ষমতাসীন দলগুলোর ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রশাসন দলীয়করণ এবং বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি।
৪. নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের যত্রতত্র ও একাকী চলাফেরার অবাধ স্বাধীনতা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০