পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার শিশু বিকাশ পাবলিকেশনের দ্বিতীয় শ্রেণীর গৃহপাঠ্য ‘মানব সভ্যতার ইতিহাস’ বইটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পুস্তুকটির রচয়িতা প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক শ্রী গোষ্ঠবিহারী কারক। সেখানে একটি অধ্যায় রয়েছে হযরত মুহাম্মদ নামে।
ইসলাম সম্পর্কে বোঝাতে গিয়ে অধ্যায়টির নাম হযরত মুহাম্মদ রাখা হয়েছে। শিশু পড়ুয়াদের ইসলামের ইতিহাস বোঝাতে গিয়ে কাবার ছবি দেওয়া হয়েছে পাঠ্যের সঙ্গে। মুখে লম্বা দাড়ি, হাতে সবুজ পতাকা, কমরে গোঁজা তলোয়ার এমন একটা ছবিও বড় করে ছাপা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এই ছবিটি কার? অবশ্যই শিশুরা মনে করবে এটি হযরত মুহাম্মদের ছবি। কারণ উপরে লেখা রয়েছে হযরত মুহাম্মদ নীচে বড় ছবি। শিশু নয়, বড় মানুষও মনে করতে পারেন হয়তো এমনই ছিলেন হযরত মুহম্মদ (সাঃ)। শিশুপাঠ্যে এমন অদ্ভুত ছবি প্রথম আমতা চাখানার অভিভাবকদের নজরে আসে। তাঁরা অবশ্য কোনো বিক্ষোভ বা হিংসার পথে না গিয়ে পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর কাছে যান। তিনি কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন।
সারা জীবন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) চেষ্টা করেছেন যাতে কেউ কোথাও তাঁর ছবি না আঁকে। সে আমলে বহু খ্যাতনামা শিল্পী ছিলেন। কিন্তু তাদের কাউকেই ছবি আঁকতে দেননি তিনি। তাঁর ছবি থাকলে ব্যক্তি পূজা শুরু হবে। সেই কারণেই কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ তাঁর ছবি প্রকাশ। তাছাড়া যেহেতু কোনও কালেই তাঁর কোনও কাল্পনিক ছবিও সামনে আসেনি তাহলে কোন যুক্তিতে শিশুপাঠ্যে এমনি একটি ছবি প্রকাশ করল শিশু বিকাশ পাবলিকেশন? এক্ষেত্রে দু’টি কারন থাকতে পারে হয় অজ্ঞতার কারণে এটি করা হয়েছে, অথবা এর পিছনে রয়েছে গেরুয়া নকশা। যদি দ্বিতীয়টি হয় তবে তা অত্যান্ত মারাক্তক। স্কুলপাঠ্য নয় বলে বিষয়টিকে লঘু করে দেখা উচিত হবে না বলে মনে করছেন অনেকেই। গৃহপাঠ্য হলেও এই ভুল ইতিহাস শিশুদের মনে গেঁথে যাবে। গেরুয়া শিবির দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই চাইছে। এখন তদন্ত করে দেখা উচিত অজ্ঞতাবশত এই ছবি ছাপা হয়েছে নাকি এর পিছনে গেরুয়া মদত রয়েছে। এরাই ইতোপূর্বে তাজমহল কে তোজোমহল বলে চালানোর চেষ্টা হয় তা নিছক খামখেয়ালিপনা নয়। এই ভাবেই হঠাৎ করেই বাবরি মসজিদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল রামলালার মূর্তি। এর পরের ইতিহাস সকলেরই জানা। ঐতিহ্যশালী মসজিদটিকে ধ্বংস করে দেয় উন্মাত্ত গেরুয়াবাহিনী।
আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই শিশুপাঠ্য রচনায় সব থেকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ভুল ইতিহাস একটা জাতির মেরুদন্ড ভেঙে দিতে পারে। উল্লেখ্য, লেখক এক জায়গাতে লিখেছেন- ‘ঈশ্বর এক, তাকে চোখে দেখা যায় না। তাঁর কোনও আকার নেই। কারও কারও মত হল ঈশ্বরের প্রতিশব্দ আল্লাহ নন। কারণ আল্লাহর কোনও স্ত্রীলিঙ্গ হয় না। তাই সত্যিই যদি ইসলামের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ওই লেখক দিতে চান তাহলে তাঁর লেখা উচিত ছিল- ‘আল্লাহ এক, তাকে চোখে দেখা যায় না…..’।
প্রকাশকের ক্ষমা প্রার্থনা ও বই প্রত্যাহার......
স্থানীয় পত্রিকায় খবরে বলা হয়, শিশু বিকাশ পাবলিকেশনের দ্বিতীয় শ্রেণীর গৃহপাঠ্য পুস্তক ‘মানব সভ্যতার ইতিহাস’ বইয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। বইয়ের রচয়িতা সাবেক প্রধানশিক্ষক শ্রী গোষ্ঠবিহারী কারক। সেখানে একটি অধ্যায় রয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সা.) নামে। এনিয়ে তুমুল বিতর্ক ও সমালোচানার দেখা দিলে তারা ক্ষমা চেয়ে নেন ও সব বই বাজার থেকে তুলে নেবার বিজ্ঞপ্তি দেন। প্রজ্ঞাভবন নামের অন্য আরেকটি প্রকাশনী সংস্থার ছাপানো চতুর্থ শ্রেণীর একটি বইয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর কাল্পনিক ছবি ছাপিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে এই প্রকাশনীও তাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৩