রিপা আজ ফোন করে বললেন একটু আসতে পারবেন?
আমি বললাম কোথায়?
রিপা বললেন নদীর পারে।
আমি বললাম আসাটা কি খুব জরুরী?
রিপা বললেন অনেকটা জরুরী বটে।
আসলে সত্যি অনেক খুসি হবো।
আমি বললাম ওকে আসছি ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
রিপা আসলে আমার পরিচিত কেউ নয়।
এই গত দুদিন আগেই পথের মাঝে পথিক রুপেই পরিচয়।
মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজে রিক্সা খুজছিল।
আমার রিক্সাটাকে আমাকে না দেখে তিনি ড্রাইভারকে থামার ইশারা করেন।
ডাইভার উনাকে অভারটেক করে চলে যেতে লাগলো।
আমার কেন জানি মেয়েটার জন্য মায়া হলো। তাই ড্রাইভারকে থামতে বলি।
এবং রিপাকে রিক্সায় তুলে নেই।
সে দিন থেকেই উনার সাথে আমার পরিচয়।
তিনি নিজেই আমার ফোন নাম্বার চেয়ে নিয়ে আমাকে মিস কল দিয়ে বললেন আমার নাম্বারটা সেইভ করে রাখুন রিপা লিখে।
আমি বুঝতে পারলাম উনার নাম রিপা। আমি তাই করলাম।
নদীর পারে এসে দেখি অনেক মানুষ জন ছুটির দিনে ঘুরতে এসেছেন। কেউ ফুচকা কেউ চটপটি কেউ আবার চা খাচ্ছেন। এদের মাঝে কে রিপা তা আমি চিনতে পারছিনা। আসলে সেদিন আমি রিপাকে তেমন ভাবে দেখিনি। তাই আজ চিনতে পারছিনা।
আমি নদীর পাড়ে রেলিং এ হেলান দিয়ে রিপাকে কল দিলাম।
আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লাল শাড়ি পরা ঐ দিকে তাকিয়ে থাকা মেয়েটা দেখলাম উনার ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করতে লাগলেন। আমি বুজে গেলাম উনিই রিপা।
তাই আমি লজ্জায় লাইন কেটে দিলাম।
মেয়েটি দেখলাম ব্যাগ থেকে মোবাইলটি নিয়ে কল ব্যাক করতে লাগলেন।
আমার মোবাইলটা বেজে উটলো। রিপা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন অহ আপনি এখানেই।
আমি মিথ্যে বললাম জি আপনাকে দেখেই আমি লাইন কেটে দিয়েছি।
রিপা বললেন ও তাই। তার মানে আপনি আমাকে চিনেছেন ঠিকি।
কিন্তু আমি তো এখনো আপনাকে চিনতে পারছিনা। এই আপনি কি সেই আপনি।
আমি রিপাকে খুব করে চিনেছি এমন ভাব ধরে মুচকি হেসে বললাম কেন কোন সন্দেহ আছে নাকি?
রিপা বললো তা নেই কারন আপনার কন্ঠ আর কথা বলার ভঙ্গিটা ঠিকি আমার মনে আছে। সেই কন্ঠ আর কথার ভঙ্গি যে আমার সামনে আপনার মাঝে বৃদ্ধমান।
আমি একটু হাসার ভঙ্গি করলাম মাত্র কিন্তু হাসলাম না।
ও আচ্ছা আপনি যেন কি জরুরী প্রয়োজনে আমাকে ডেকে ছিলেন।
রিপা বললেন আসুন চটপটি খাই।
আমি বললাম আপনি চটপটি বা ফুচকা খান আমি এক কাপ চা খাই।
রিপা বললেন অকে আপনার ইচ্ছা।
রিপা এক প্লেইট চটপটি খেলে আরেক প্লেইট ফুচকার ওয়ার্ডার দিলেন।
আমি একটু অবাক হয়ে রিপার দিকে তাকালাম।
রিপা বুঝতে পারলেন আমি অবাক হয়েছি।
তাই তিনি একটু লজ্জা পেয়ে বললেন আসলে অনেক দিন পড়ে খাচ্ছি তো তাই একটু লোভ বেশী জমে আছে। আপনি আরেকটা চা নিন না।
আমি রিপাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম না ঠিক আছে আপনি খান।
আমার মোবাইলটা বেজে উঠলো। আমি রিসিভড করে কথা একটু সরে গিয়ে কথা বলতে পাগলাম।
মোবাইলে কথা বলা শেষ করে এসে দেখি রিপা চা চটপটি ফুচকার বিল পরিশোধ করে ফেলেছেন।
আমরা আবার নদীর পাড়ের রেলিং ধরে দাড়ালাম।
রিপা একটু একটু হাসি মুখ নিয়ে বললেন আপনাকে কেন ডাকলাম আমার এখন বলে ফেলা উচিত।
আমি আগ্রহ ভাব নিয়ে বললাম নিশ্চয়ই বলে ফেলুন।
রিপা বললেন আসলে কি ভাবে বলি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। তবুও বলছি ভালবাসা আর ভাল লাগা আসলে নিরবে পূর্ণতা পায়না। ভালবাসা আর ভাল লাগাকে চেপে রাখলে ভালবাসা আর ভাল লাগা দিনে দিনে মরে যায়। তাই যতো তারাতারি ভালবাসা আর ভাল লাগাকে প্রকাশ করা যায় ততোই ভালই বলে আমার মনে হয়।
আমিও রিপার কথায় মাথা নেড়ে হ্যা সূচক সাড়া দিলাম।
তিনি আরো বলতে লাগলেন আসলে প্রতিটা মানুষ কারো না কারো প্রেমে পড়েন।
কিন্তু অধিকাংশ মানুষ নিজের ভালবাসাকে প্রকাশ করতে পারেননা বলেই উনাদের ভালবাসা নিরবে নিভৃতে মরে গিয়ে পচে যায়। আমি আসলে চাইনা আমার ভালবাসাও নিরবে নিভৃতে মরে গিয়ে পচে যাক। তাই আপনাকে এখানে ডেকে আনলাম।
আমি বললাম আমাকে ডাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। রিপা আসলে আপনি সত্যি জ্ঞানী বুদ্ধিমান আর সাহসী। নিশ্চয়ই আপনার জ্ঞান মুদ্ধিমত্তা আর সাহসিকতার প্রসংসা করতে হয়।
রিপা অনেকটা লাজুক হেসে আমাকে ধন্যবাদ দিলো।
আমি স্বাগতম না বলেই আরো বলতে লাগলাম আমিও আপনার মতো মনে করি ভালবাসা বা ভাললাগা চেপে রেখে মেরে ফেলার চেয়ে প্রকাশ করাই শ্রেয়। সে ভালবাসা বা ভাললাগা পূর্ণতা পাক বা না পাক। যদিও সাধারন তো মেয়েরা ভালবাসা বা ভাললাগা প্রকাশ নিজেরা প্রকাশ করেননা।
রিপা আমার কথা বলার মাঝখানে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন কিন্তু আমি আমার ভালবাসা প্রকাশ করবো। আজ এই মুহূর্তে এখানে।
বলেই উনার বেনিটি ব্যাগ থেকে একটা গিপট বক্স বের করে হাতে নিলেন।
আমি দেখতে পেলাম গিফট বক্সের প্যাকেটে কস্টেপ দিয়ে একটা চিরকুট আটকানো।
রিপা গিফপট বক্সটা আমার দিকে এগিয়ে ধরলেন।
আমি বললাম কিন্তু আমার যে আরো কিছু কথা বলা উচিত।
রিপা বক্সটা বুকে চেপে ধরে বললেন ওকে বলুন।
আমি জানী আপনি জ্ঞানী বুদ্ধিমান ও সাহসী। আমি বিশ্বাস করি জ্ঞানি বুদ্ধিমান আর সাহসি মানুষেরা বাস্তবতাকে মেনে নেয়, আবেগ প্রবনতাকে ভুলে।
আপনিও কি তা বিশ্বাস করেন?
রিপা কোন সময় না নিয়েই বোকার মতো বলে দিলেন নিশ্চয়ই।
উনার বোকার মতো নিশ্চয়ই বলা মাত্রই আমার মেয়ে কথা দৌড়ে এসে পাপ্পা বলে আমার কুলে উঠে আসে।
আমার ছোট বোনটাই আমাকে কিচ্ছুক্ষন আগে কল করেছিল। তখন আমি আমার ছোট বোনকে বলেছিলাম আমার মেয়ে কথা কে নিয়ে এখানে চলে আসতে। কিন্তু তখন আমি বুঝতে পারিনি রিপা এমন একটা পরিস্থিতিতে তৈরি করবেন।
এখন আমাকেই আমার বড্ড বোকা মনে হচ্ছে।
আমি রিপার দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখলাম রিপা খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে আমার মেয়ে কথার দিকে।
কথার দিকে তাকিয়ে থাকায় কথাই রিপাকে জিজ্ঞেস করে ফেললো আন্টি আমাকে এভাবে দেখছেন কেন?
রিপা কথাকে উল্ট প্রশ্ন করলো তোমার নাম কি মা-মনি।
কথা বললো আমার নাম কথা। আমার মা-মনি আমার এই নাম রেখেছে। কিন্তু আমার মা-মনি নেই আন্টি।
রিপা কি যেন বলতে গিয়ে থমকে গেলেন। আর বললেন না।
উলটো কথাকে প্রশ্ন করলেন কথা তোমার মা-মনির নেই কেন?
কথা বললো আমি জানীনা আমার পাপ্পা জানেন।
রিপা আমাকে প্রশ্ন করলেন আপনার বাতিজির মা-মনি নেই কেন।
আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না রিপার প্রশ্নের উত্তর আমার কি ভাবে দেওয়া উচিত।
আমি কোন ভনিতা না করেই বলে ফেললাম। কথার মা কথা ছোট থাকতেই অকে রেখে চলে গেছে। আর আপনি যাকে আমার ভাতিজি মনে করছেন সে আমার বাতিজি নয়, আমার একমাত্র মেয়ে।
আমার কথা শুনার সাথে সাথে রিপার মাথাটা ঘুরতে লাগলো। আমার ছোট বোনটা রিপাকে ধরলো। না হয় তো পরেই যেতেন রিপা। আমি জিজ্ঞেস করলাম রিপা আপনি ঠিক আছেন তো। রিপা কোন ক্রমে উত্তর দিলেন জি আমি ঠিক আছি। বলেই আমার ছোট বোনকে বললেন উনাকে ছেড়ে দিতে। উনি ঠিক আছেন।
রিপা উনার বুকে রাখা গিফট বক্সটা হাতে নিয়ে চিরকুটা কস্টেপ থেকে খোলে নিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে কথাকে গিফট বক্সটা দিয়ে বললেন এটা তোমার জন্য কথা মনি।
কথা ধন্যবাদ দিয়ে রিপাকে বললো - আন্টি তুমি আমার মা-মনি হবে।
রিপা কথাটা শুনে একটুও চমকাননি।
রিপা মুছকি হেসে বলে উঠলেন তোমার পাপ্পা যদি চান তবে হতে পারি।
আমি বললাম আপনি "জ্ঞানী বুদ্ধিমান আর সাহসী" আমার ধারনাটাকে আপনি ভুল প্রমান করছেন।
রিপা বললেন নিশ্চইনা। আমি আপনার ধারনাকে সত্য প্রমান করছি। আপনি বলেছিলেন আপনি বিশ্বাস করেন জ্ঞানি বুদ্ধিমান আর সাহসি মানুষেরা বাস্তবতাকে মেনে নেয়, আবেগ প্রবনতাকে ভুলে। আমি তাই করছি। আবেক প্রবণতাকে ভুলে গিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এই হাত পেতে দিলাম আপনার তরে। আপনি যদি মনে করেন আমি ভুল করছি তবে আপনাকেও আহবান জানাচ্ছি আসুন আমরা দুজনেই একি ভুলটা করি। আর কথার জীবনটা জীবনের মতো গড়ি।
রিপা হাসতে হাসতে কথাকে বললো দেখেছো কথা তোমার পাপ্পা আমাকে তোমার মা-মনি করছেনা।
কথা আমার কোল থেকে রিপার কোলে চলে গিয়ে রিপার হাতটা আমার দিকে দিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ধমকের সুরে বললো পাপ্পা তুমি মা মনির হাত ধরো এখনি।
কি আর করার আমি রিপার হাত ধরলাম। পিছন থেকে আমার বোন আর আমার মা হাত তালি দিয়ে উঠলো সাথে আমার মেয়েটাও। আমি আর রিপা বিষণ লজ্জা পেলাম। আর আমি অবাক হলাম মাকে দেখে।
কিরে ভাইয়া তুই তোর মেয়ে আর আমাকে ডেকে এনে তোর নতুন বউ দেখাস। আর আমি মাকে এনে দেখালাম। আমি কানে ধরে বললাম বিশ্বাস করো মা আমি জানতাম না এমনটা।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই রিপা মায়ের পা ধরে সালাম করতে লাগলো। আমার ছোট বোনটা লাফিয়ে লাফিয়ে বললো সবাই দাড়াও সবাই দাঁড়াও একটা সেলফি তুলে নেই।