মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে চলছে নানা প্রকার কথাবার্তা । সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বা মানবাধিকার নেতা-কর্মীদের অনুরোধ প্রত্যাখান করে যাচ্ছেন । তিনি সীমান্তে টহল আরও জোরদার করেছেন । গত ২০ বছর যাবত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছে বাংলাদেশে । পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্য মোতাবেক তারা এদেশে তো ঢুকেছেই, ঢুকে অনেকে নানা প্রকার অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে আবার বিএনপি সরকারের সময়ে বিশেষ কৌশলে বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রে বাংলাদেশের যে শ্রমবাজার রয়েছে সেখানে বাধার সৃষ্টি করেছে । এছাড়া বাংলাদেশে বিদ্যমান রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে । পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন বাংলাদেশ শরণার্থী সংক্রান্ত কোন আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় । সেক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের সাথে আপোষ বা তাদের অনুরোধ রাখার সুযোগ বাংলাদেশের নেই ।
কিন্তু এখন দেশের ভিতরে বা বাইরে অনেক মানবতাবাদী সংস্থা(দেশের ভিতরকার দাবিগুলোকে সংস্থা বা সংগঠনের না বলে মানবাধিকার কর্মী বা নেতাদের দাবি বলাই সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি) বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচানোর নামে তাদের আশ্রয় প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছেন । এটা সম্ভব শুধুমাত্র মানবিক দিক থেকে । ১৯৭১ সালে ভারত এদেশের লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে শুধু আশ্রয়ই দিয়েছিল না- তাদের জীবন নির্বাহের সমুদয় ব্যবস্থা করেছিল ! দেশ স্বাধীন হবার পর অল্পকিছু ছাড়া প্রায় সবাই দেশে ফিরে এসেছিল । মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের যে সমস্যাটা সেটা তাদের জাতীয় সমস্যা না- এটা সে দেশের মুসলিম এবং বৌদ্ধদের মধ্যেকার জাতিগত বা সাম্প্রদায়িক বা অনেকটা সংখ্যালঘু নির্যাতনের মতো । সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দাঙ্গায় পরাস্ত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে চাইছে বা আশ্রয় চাইছে । আমি জানিনা তারা কি শুধুমাত্র নিকটতম দেশ বাংলাদেশ বলেই এই দেশে আশ্রয় নিতে চাইছে নাকি অন্য কোন কারণ আছে । পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন জামায়েতিরা রোহিঙ্গাদের মদদ দিয়েছে । তাতে জামায়েতিদের লাভ কি সেটা মন্ত্রী বলেননি । সেটা কি বর্তমান সরকারকে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক বেকায়দায় ফেলা বা তাদের সুদূরে দলভারী করার মওকা !
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি বাঘা বাঘা নেতৃবৃন্দের উপর উষ্মা প্রকাশ করেছেন । সেটা যথার্থ বলেই আপাতত মনে হচ্ছে । মিয়ানমারের তথা সারাবিশ্বের শান্তির প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী সু চি ব্যস্ত আছেন তাঁর ইউরোপ সফর নিয়ে ! তিনি সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন । জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করছে কিন্তু মিয়ানমারের কারু উপর চাপ সৃষ্টি করছে না । বিশ্বের অন্য কোন দেশের মানবতাবাদী কোন নেতার কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে না । আমাদের দেশে যেটা হচ্ছে সেটা যদি সব দেশেই হত তাহলে মনে হয় আর একজন রোহিঙ্গাও মরত না বা দেশ ছাড়তে বাধ্য হত না । আমরা অনেক ভালো মনের মানুষ, মানব দরদী, পরের দুঃখে সহজেই কাতর হই । আমাদের দেশ ঠিক এই জন্যই শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে গৌরবের স্থানে দাড়িয়ে আছে ।
আমরা একটি উন্নয়নশীল ছোট আকারের অধিক জনসংখ্যার দেশ যে দেশ তার নিজের চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর হিমশিম খায়, ধার করেও ধেড়ে ধেড়ে চলে না ! দেশের অধিকাংশ মানুষ যেখানে সারাবছর অপুষ্টিতে ভোগেন তাদের মানব দরদী অনুভুতিই বেশি প্রকট । তাই এই সমস্যা মেটাতে এগিয়ে আসতে হবে প্রতিবেশি রাষ্ট্রসহ বিশ্বের সকল রাষ্ট্র এবং মানবতাকে এবং খোদ মিয়ানমারকেই । দুই ছেলে মারামারি করলে বাপ যদি তার মিমাংসা করেন তাহলেই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় ! মিয়ানমার এগিয়ে না আসলে আমরা যতই মানবতার গান গাই- সে গান দিয়ে রোহিঙ্গা মৃত্যু বা তাদের অশান্তি বা অস্থিরতা রহিত হবে নাহ ।