আজ কি দিবস? (পলাশী থেকে বাংলাদেশ)
---------------------- ড. রমিত আজাদ
আজ সকালে ক্লাসরুমে এসে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্ন করলাম, "আজ কি দিবস?" সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো। কেউ কিছু বলতে পারলো না। উল্টো প্রশ্ন করলো, "আজ কি দিবস স্যার?" আমি বললাম আজ ২৩শে জুন। আরেক দফা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো সবাই। "২৩শে জুনে কি হয়েছে স্যার?" বিরক্ত হয়ে বললাম, "আজ পলাশী দিবস। জানা নেই?" আবার কয়েকজনের মুখে বিস্ময়। আমি বললাম, "পলাশী সম্পর্কেও কি ধারনা নেই?" এবার দুয়েকজন বললো, "জ্বী, পলাশীর যুদ্ধ।" আমি বললাম, "কি হয়েছিলো এই দিনে?" চুপ করে আছে সবাই। আমি বিস্মিত না হয়ে পারলাম না। কোন পথে যাচ্ছে দেশ? আমাদের ইতিহাসের এতো গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের ধারনা এত ক্ষীণ! এর আগেও একবার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্ন করে জেনেছিলাম যে দখলদার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সৃষ্ট ১৭৭০ (বাংলা ১১৭৬) সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে, এমনকি উইনস্টন চার্চিলের সৃস্ট ১৯৪৫-৪৬ সালের দুর্ভিক্ষ সম্পর্কেও কোন ধারনা নেই তাদের।
এর সম্ভাব্য কারন কি হতে পারে? - দেশের স্কুল-কলেজে ইতিহাস ঠিকভাবে পড়ানো হয়না? স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক গুলোতে ঐসব আর উল্লেখ করা নেই? বর্তমান জমানার ছাত্র-ছাত্রীদের এইসব নিয়ে কোন আগ্রহ নেই? সরকারী উদ্যোগের অভাবে দিনটি ভুলতে বসেছে সবাই? আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলই নানা রূপে জাতীয়তাবাদের কথা বলে, আজকাল আন্তর্জাতিকতাবাদী কম্যুনিস্টরাও রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে জাতীয়তাবাদী বক্তৃতা দেয়, অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস নিয়ে তাদের মধ্যে কোন চেতনাই কাজ করেনা? না কি উদ্দেশ্যমূলকভাবে সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের জাতির স্মৃতি থেকে মুছে দেয়া হচ্ছে ইতিহাসের ঐসব রক্তাক্ত অধ্যায়? সেই সাথে কি মুছে দেয়া হচ্ছে আমাদের পূর্বপুরুষদের দুঃখ-বেদনা ও সংগ্রামী জীবনের সাফল্যগাঁথা?
পলাশী সম্পর্কে এই ব্লগে আমি ইতিপূর্বে কয়েকবার লিখেছি, তাই আজ আর নতুন করে লিখতে চাইনা। শুধু তাদের লিংক নীচে দিয়ে দিলাম
আজ ঐতিহাসিক পলাশী দিবস
http://www.somewhereinblog.net/blog/ramit/30048918
পলাশীর শিক্ষা
http://www.somewhereinblog.net/blog/ramit/29960035
যে জাতি তার অতীত জানেনা, ভবিষ্যতে পথ চলা তার জন্য কঠিন। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে হয়। পলাশীর শিক্ষা আমাদের জাতির জন্যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজ জাতি আমাদেরই দেশে বসে আমাদেরই সম্পদ ভোগ করেছিলো, আর আমাদেরই দেশে বসে আমাদেরকে চাকর খাটিয়েছিলো। তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছিলো এদেশীয় মীরজাফরেরা। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে পলাশীর ভুলের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এই পবিত্রভূমি যেন আর কোনদিনও বিদেশী সৈন্যদের পদভারে প্রকম্পিত না হয়।
নেটিভদের পরিচর্যায় আয়েশ করছে বৃটিশ অফিসার
স্বাধীনতা চাওয়ার অপরাধে ফাঁসী হচ্ছে দেশপ্রেমিকদের
বোঝা কাঁধে, এই বোঝা আমরা বয়েছিলাম দুইশত বছর
খাদ্যশস্যের ভান্ডারভূমি বাংলায় দুর্ভিক্ষের করুণ চিত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭