[sb
হঠাৎ করে দুপুর ৩টার দিকে একটা পুরুষ চিৎকার করে উঠলো ,"আমারে কেউ বাঁচাও আমারে এই ডাইনী মাইরা ফালাইবো । "
আমরা অতি উৎসুক বাঙালী জনতা তাড়াতাড়ি গেলাম পুরো ঘটনা বোঝার এবং এই অন্যায় প্রতিহত করার জন্য । দলে দলে মানুষ গেল এই অন্যায় প্রতিহত করার জন্য ।
দরজা খুলে ঐ লোককে বাহিরে আনা হলো তারপর বসলো এলাকার গণ্যমান্য সবাই সহ বিচার এর আয়োজন।
প্রথমে বাদী মানে পুরুষ এর জবানবন্দী নেওয়া হলো ।
পুরুষ - " আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে আমার বউও একটা কোম্পানিতে চাকরি করে । হঠাৎ গত ১ মাস থেকে দেখছি আমার বউ খুব ব্যস্ত থাকে । মোবাইলেও ব্যস্ত থাকে । জিজ্ঞেস করলে বলে অফিসে খুব চাপে আছে । আবার বাসাতেও ফিরে একটু দেরি করে বলে অফিসে খুব কাজের চাপ । হঠাৎ এক বন্ধু কল দিয়ে বললো তোর বউ কে দেখি প্রায়ই একটা লোকের সাথে বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টে আবার দেখলাম একটা আবাসিক হোটেল থেকে বের হচ্ছে । তাই তোকে কল দিয়ে জানালাম । আমি ততোটা বিশ্বাস করি নি । বললাম কাকে দেখতে কাকে দেখছিস কে জানে । আমারে এসব ফালতু কথা বলবি না । পরে গতকাল ঐ বন্ধু অফিস শেষে আবার কল দিয়ে বললো বন্ধু কত দিন দেখা হয়য় না । চল আজকে আড্ডা দেই । ধানমন্ডি চলে আয় । ও আমাকে একটা রেষ্টুরেন্টে নিয়ে গেল এবং দেখালো আমার বঊ একটা লোকের সাথে খুব ক্লোজ হয়ে বসে আছে । ও আমাকে দেখে একটু গাবড়ে গেলেও পরে এমন ভাব করলো যেন আমাকে চিনেই না । আমি আর কিছু বলি নি চলে এসেছি ওখান থেকে আর রাতেও কিছু জিজ্ঞেস করেনি । আজ দুপুরে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাতে সে নিজের হাত কাটলো আবার নিজের জামা ছিড়লো এমন অনেক কিছু করলো যাতে দেখে মনে হয় আমি তাকে মারধর করছি । এসব থামতে যাওয়াতে সে আমাকে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে মাইর দিলো । এইযে দেখুন গায়ের দাগ । আমি নিজেকে বাঁচাতে বারান্দায় যাইয়া তাই চিৎকার করলাম । "
এবার মহিলা মানে বিবাদী এর জবানবন্দী ...।
মহিলা - " ওতো শুধু আমার কথা বললো নিজের দোষতো বলে নাই । ওতো তার পুরোনো প্রেমিকার সাথে এখনো সম্পর্ক রাখছে । ওকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায় অফিসের কাজের উছিলায় । আমিতো অনেক বিশ্বাস করতাম ওকে । কিন্তু যখন দেখলাম আমার সাথে প্রতারণা করছে তখন খুব ক্ষেপে গেলাম । ও যদি আমাকে না জানিয়ে এসব করতে পারে তাহলে আমিও আমার জীবন কেন এভাবে হেলায় নষ্ট করবো । আমিও আমার জীবন কে উপভোগ করবো । আজ যখন আমাকে ঐ সব প্রশ্ন করলো তখন মাথায় রক্ত উঠে গেলো । ও যখন ওর পুরাতন প্রেমিকার সাথে এসব করতো তখন আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে বলতো ও আমার দুরসম্পর্কের বোন । ও খুব অসহায় । ওকে একটু সাহায্য করি এই যা। আর বেশি কিছু বললে বলতো তুমি আমাকে সন্দেহ করো । এ নিয়ে ও আমাকে কত বার চড় থাপ্পড় মেরেছে তার হিসেব নেই । আজ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করাতে তাই আমিও ওর মতো ওকে মেরেছি । ""
সব শুনে এলাকার মুরুব্বিরা স্তব্ধ । শেষে এক মুরুব্বি বললেন " তোমাগী বিচারের ক্ষমতা আমাদের দেই । তবে তোমরা এত শিক্ষিত কিন্তু তোমরা তা ভুলেই গেছো । তোমাদের বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে । তোমরা ভুলে গেছো ধর্মের কথা সমাজের কথা নিজেদের পরিবারের কথা । আল্লাহ্ তোমাদের জ্ঞান দান ক্রুক । আর তোমরা আজ এক সাথে থাকতে পারবে না । ২জনের অভিভাবক ডাকো । তাদের হাতে এদের তুলে দিতে হবে । তারপর তারা আর তোমরাই বুঝে শুনে ব্যবস্থা নিবা তোমরা এক সাথে থাকবা না আলাদা থাকবা। আর তোমরা যদি একসাথে না থাকো তাহলে সামনের মাস থেকে এ বাসা ছেড়ে দিবা । আর যদি একসাথে থাকো তাহলে বাসা ছাড়তে হবে না। তবে শর্ত একটাই তাহলো মুচলেকা দিতে হবে যে তোমরা এসব অসামাজিক কাজ করতে পারবা না । ''
যথা সময়ে তাদের অভিভাবক আসলে তাদেরকে ওনাদের হাতে তুলে দেওয়া হলো । বিচারকার্য সম্পন্ন হলো ।
আর আমরা আম জনতা বললাম বিভিন্ন কথা । কেউ বলল সব দোষ মহিলার পুরুষ মানুষ বাহিরে কত কিছু করবে তাই বলে তারও করতে হবে, কেউ বললো সব দোষ পুরুষটার ঘরে বউ রাইখা কেউ এসব করে্, কেউ বললো যে যেই রকম তার জন্য মিলেও সে রকম । আবার কেউ বললো ২জনেই খারাপ ,কেউ বললো বাবা মা শিক্ষা দেয় নাই ,আবার কেউ বললো এদেরকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত, কেউ বললো সবই উচ্চশিক্ষার ফল , কেউ বললো সবই অতি আধুনিকতার ফসল, কেউ বললো এরা এলাকাটা ধ্বংস করবো ইত্যাদি ইত্যাদি ।
আমরা আম বাঙালি আমরা কত কথা বলতে পারি । আমরা একটা ঘটনা ঘটলে সেটা নিয়ে অনেক গবেষণা করতে পারি খেজুরে আলাপ করতে পারি, চায়ের কাপে সমালোচনার ঝড় তুলতে পারি । কিন্তু দেশকে ভালবেসে তেমন কোন কাজ করতে পারি না ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫৬