somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মেয়ে এবং আমার অপেক্ষার গল্প

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বসে আছি ফুলার রোডের মাথায় । অপেক্ষায় আছি এক বড় ভাই এর । অপেক্ষায় থাকলে আমার অভ্যাস হচ্ছে আশে পাশে ভালো ভাবে খেয়াল করা । যেহেতু অপেক্ষায় আছি তাই সব ভালো ভাবে দেখছি । দেখলাম রাস্তার ওপারে ফুটপাতে অনেক অনেক জোড়ায় জোড়ায় বসে আড্ডা দিচ্ছে ।এইসব জোড়াগুলোরে দেখলে ভালোই লাগে কত কত মিথ্যে স্বপ্ন এদের চোখে, কত কত মিথ্যে ওয়াদা এদের মুখে ।যা এক নিমিষেই শেষ হয়ে যায় ।অবশ্য সব ক্ষেত্রে না । মানুষের একটা অভ্যাস হলো কোন জিনিস দেখতে দেখতে হঠাৎ করে অন্যমনষ্ক হওয়া । আমিও হলাম আর মনে মনে হয় মুচকি হাসছিলাম । যা দেখে হয়তোবা কারো খারাপ লাগছে তাই সে এসে আমাকে আবার মনোযোগী করলো । তাকে এবার ভালো করে দেখলাম এতো দেখি মোটাসোটা গুল্লু গুল্লু ধরণের ফর্সা একটা কিউট(সুন্দর) মেয়ে। দেখেই অবাক ।
মেয়ে – আপনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন কেন ?
(তাকে দেখে এমনিই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অবাক হয়ে আছি তার উপর যা করিনি সে ধরনের প্রশ্ন । টিনের চালে কাক আমিতো পুরাই অবাক। তাই ইচ্ছে করে মিথ্যে কথা বললাম । যাতে আরো কিছুকাল এখানে থাকে । যাতে আরো কিছুকাল মোটা গুল্লু গুল্লু ধরণের কিউট এই মেয়েকে দেখতে পারি । )
আমি – হ্যাঁ দেখছিলাম আপনাকেই । আর হাসির জন্য দুঃখিত । আপনি মোটা যেমন তেমনি কিউট । আপনাকে দেখে আমার অনেক আগের একটা ধারণা পুরো মিথ্যে প্রমাণিত হলো । আল্লাহ আপনাকে মোটার সাথে কিউট হওয়া টাও সমানুপাতিক হারে দিছে । এই রকম অবস্থা শুধু আপনার সাথেই যায় । দয়া করে মাফ করে দিবেন । আসলে একটু বেশি বলে ফেলছি মনে হচ্ছে । আসলেই আপনি অনেক সুন্দরীতো তাই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে ।
মেয়ে – ও আচ্ছা কোন ব্যাপার না । (একটু এগিয়ে কি যেন ভাবলো তার পর আবার ফেরত এলো । ) আপনার কাছে সময় আছে ?
আমি – হ্যাঁ আছে । আসলে এক বড় ভাই এর জন্য অপেক্ষা করছি । তাই উনি আসা পর্যন্ত সময় আছে ।
মেয়ে – তাহলে একটু বসি এখানে ?
আমি - হ্যাঁ বসুন অবশ্যই ।
মেয়ে – আপনি বললেন না আমি যেমন মোটা তেমনি কিউট । আর এই মোটা হওয়াটার জন্যই আমার প্রেমিক আমাকে ছেড়ে চলে গেছে একটু আগে । ও বলে শরীর কমাতে হবে নতুবা আমাকে ভুলে যাও । আমাকে নাকি কোথাও নিলে সবাই হাসে । ওর বন্ধুরা নাকি আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে , ওকে ক্ষ্যাপায় । তাই একটু আগে ব্রেক আপ করে চলে গেছে । এই জন্য বসে বসে কাঁদছিলাম । আর তখন চোখ পড়লো আপনার উপর । দেখি আপনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন । তাই আসছি আপনাকে ঝাড়ি দিতে ।
আমি আর তখন সত্য কথা বললাম না ।
আমি – ও আসলে দূর থেকে দেখে বোঝা যায় নি । আপনি কাঁদছেন জানলে অবশ্যই আমি হাসতাম না । আসলে এই হাসিটা হলো মনের সুখের । কোন কারণ ছাড়া হাসি । ও ব্যাটা পাগল যে আপনাকে ছেড়ে গেছে । তাহলে আপনার সাথে প্রেম করলো কেন ? আচ্ছা আপনি কি ওর সাথে প্রেমে পড়ার সময় চিকন ছিলেন ?
মেয়ে – আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন । আমি চলে গেলাম ।
আমি – দুঃখিত । আপনি কষ্ট পাবেন জানলে আমি প্রশ্নটা করতাম না । সত্যি দুঃখিত । যাবেন না দয়া করে । সম্পূর্ণ ঘটনা না জানলে মনটার ভিতর খচ খচ করবে । বসেন আপনি । আপনি বলেন আমি আর কোন কিছু জিজ্ঞেস করবো ।
মেয়ে কি যেন ভাবলো তারপর বলা শুরু করলো ।
মেয়ে – না আমি ছোটবেলা থেকেই মোটা । ও প্রেমের শুরুতে বলেছিল মোটা কোন ব্যাপার না । ওর শুধু আমাকে চাই । তারপরেও নিজে নিজে চেষ্টা করছি শরীর কমানোর । অনেক কষ্ট হচ্ছে । তারপরেও করছি ওর কথা ভেবে । আগের চেয়ে ৩ কেজি মতো কমছে । আর এখন ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে । আমার সব কষ্ট বিফলে গেছে । ( বলছে আরা চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।)
আমি – হ্যাঁ অনেক কষ্ট হচ্ছে আপনার জানি । কিন্তু কি করবেন এখন ভাবছেন ?
মেয়ে – কি করবো বেঁচেতো থাকতে হবে । তাই থাকবো । তবে মরার মত করে ।
আমি – তাও ভালো আত্মহত্যার কথা বলেন । তার মানে হয় আপনি অতি মাত্রায় ভীতু নতুবা খুব সাহসী । আমি আশা করি ২য়টাই আপনি । ওর জন্য আপনি আপনার জীবন খারাপ করবেন কেন ? ও ঠিকই আবার প্রেমে পড়বে হাসি খুশি আড্ডায় মেতে থাকবে । তাহলে আপনি বাদ যাবেন কেন ?
মেয়ে- বলা অনেক সহজ । কষ্ট হচ্ছে অনেক আমার । সত্যি ওকে অনেক ভালোবাসতাম আমি ।
আমি – কষ্টতো হবেই সেতো জানি । কিন্তু ক্ষতিতো হলো ওর বেশি। ও আপনাকে হারিয়েছে।যে কিনা তাকে সত্যি ভালোবাসতো । তা না হলে এখন কতজনই পায় এই সত্যি ভালোবাসা । আপনিও বাঁচবেন বাঁচার মতো করে । আর তাছাড়া শরীর কোন ব্যাপার না । আপনি কি করেছেন সেটা ব্যাপার ।ধৈর্য ধরেন । আর ভালো কিছু করার দিকে লক্ষ্য স্থির করেন ।
মেয়ে – তা ঠিক বলছেন ।
আমি – আচ্ছা আপনার সাথে অনেক সময় থেকে কথা বলছি । আপনার নাম কি ? কি করেন ?
মেয়ে – নাম বললো । আমি চাকুরী করছি একটা কোম্পানিতে । একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এবং এমবিএ শেষ করেছি ২০১৫ এবং ২০১৬ তে । আপনি কি করছেন ?
একেতো জুনিয়র তার উপর চাকুরী করছে। আর আমিতো বেকার তাই বলার ইচ্ছা হলো না ।
আমি – (প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ) আচ্ছা বলেনতো কোন গাছে ফল ধরে না ?
মেয়ে – (অনেক সময় ভেবে) পারছি না ।
আমি – এটা জানেন না । এটা কোন কথা বললেন জানেন না । সত্যি বলতে কি আমিও জানি না । মনে হয় পুরুষ গাছ হবে ।
মেয়ে- ( হাসতে হাসতে বললো) খুবতো ঝাড়ি দিলেন । আর এখন বলছেন আপনিও জানেন না । হাহাহাহাহা।
আমি – ইশ কি সুন্দর করে হাসেন আপনি অবশ্য আপনাকে কাঁদলেও ভালো দেখায় ।
মেয়ে- ফাজলামো করছেন আপনি । আমি গেলাম ।
আমি – আরে না আপনি যাবেন কেন । এখন বুঝলাম সত্যর এখন কোন দাম নাই । সত্য বলাই ছেড়ে দিতে হবে । আচ্ছা বলেন তো কলা আর লেবুর মধ্যে কে বেশি বাহ্যিক ক্ষতি করে ?
মেয়ে – কোনটাই না ।
আমি – হাহাহাহা । পারলেন না আপনি এটাও । আরে কলার বাহ্যিক ক্ষতি বেশি ।
মেয়ে – কিভাবে?
আমি – আরে কলার খোসার উপর পা দিয়ে পিছলে পড়েছেন কখনো ?
মেয়ে – না তা পড়িনি । হ্যাঁ এবার বুঝলাম ক্ষতিকর প্রভাব ।
আমার মোবাইলে মেসেজ আসলো । ভাই বললো শাহবাগ যেতে হবে ।
আমি – আচ্ছা ভালো থাকবেন । আর ভালো ভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবেন ।
মেয়ে – আচ্ছা ঠিক আছে । আপনিও ভালো থাকবেন । আপনিতো নাম বললেন না ? কি করেন তাও বললেন না ?
আমি – আমার নাম জেনে কাজ নেই। তারপরেও বললাম। আর আমি বেকার ।
মেয়ে – আপনি কোথায় থাকেন ? আপনার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যাবে ?
আমি – এর কোন কিছুরই দরকার নেই । ভালো ভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবেন । আর পৃথিবীটা গোল ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে যাবে নিশ্চয়ই । তখন না হয় অবশিষ্ট অংশ জানা যাবে ।
মেয়ে কি যে ভাবলো কে জানে ।আমি হাঁটতে শুরু করলাম । আরেকটু সামনে গিয়ে পিছনে ফিরে দেখি সেই মেয়েটি এখনো তাকিয়ে আছে আমার চলার পথের দিকে আর আমার ঠোঁটে সেই মুচকি হাসি ।
আর মনে গান বাজছে –
"দেখা হবে বন্ধু কারণে অকারণে. ......"
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৪
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×