এসো হে বৈশাখ এসো এসো,
তাপস নিশ্বস বায়ে,
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।
এসো, এসো হে বৈশাখ এসো এসো
চিরায়ত এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো পহেলা বৈশাখ।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও মিতালী বিদ্যাপিঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে মিতালীর কদম তলায় নববর্ষ বরণ ১৪২৩ উদযাপিত হল।
শুরুতেই কোরআন তেলওয়াত করলেন বিদ্যাপিঠের সিনিয়র শিক্ষক জনাব মোশাররফ হোসেন চৌধুরী।
তৎপর জাতীয় সঙ্গীত :
এর পরপরই কবি গুরুর আহ্বান
এসো হে বৈশাখ এসো এসো..... সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হলো বর্ষবরণের সূচনা।
সঙ্গীত ... ....
আবৃতি আর মিষ্টি কোলাহলে ভরে গেল পুরো বিদ্যাপিঠ প্রাঙ্গন :
আবৃতি করলেন শিক্ষক সুদীপ রঞ্জন মন্ডল :
উপস্থাপিকা আশা ও কম নন, তিনি তার কথা আর সূর দিয়ে সবাইকে মোহিত করে রাখলেন।
দর্শক মাঝে উৎসবের আমেজ
মিতালীর কদম তলায় দর্শক সারিতে রয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অন্যতম অভিভাবক সদস্য জনাব মোঃ মিজান উল হক খোকন ও মিসেস সেলিনা আক্তার, প্রধান শিক্ষক মিসেস রফিকা রহমান, সহকারী প্রধান শিক্ষক মিসেস শাহীন আরা নাসরীন, প্রাাথমিক শাখার কো-অর্ডিনেটর মিসেস মাহবুবা আক্তার, শিক্ষক প্রতিনিধি জনাব ফরিদ আহমেদ সহ বিদ্যাপিঠের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদ্বয়।
এরই মাঝে দর্শকদের মাঝে মিষ্টি মুখ করন অভিযান। মেঠো বাংলার আদি খাদ্য উপাদান বাতাসা, নাড়ু, মুরকি, আরো কতকি ! বিতরন করা হলো :
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে উপস্থিত হলেন গোপীবাগ প্রতিবেশী পরিষদের সম্মানিত যুগ্ম-সম্পাদক জনাব শেখ গোলাম আহমেদ :
এদিকে অনুষ্ঠানটি আরো প্রাণবন্ত ও স্বরনীয় রাখার জন্য ফ্রেমবন্ধী করার আকুল প্রয়াস :
শিক্ষকদের সম্মিলিত ফটোবন্ধীত্ব বরন :
ফটোসেশনের কয়েকটি মুহুর্ত :
বৈশাখী ফটো ট্রেন :
বিদ্যাপিঠের প্রাণপুরুষ, আমাদের সকলের গণি ভাই সহ অভিভাবক সদস্য মিজান উল হক :
যার কৃতিত্বে এ অনুষ্ঠানটি স্বরনীয় ও ফ্রেমবন্দী হয়ে থাকবে যুগ-যুগান্তর, সেই তরুন ফটোগ্রাফার জনাব রবিন :
মিতালী বিদ্যাপিঠ যাদের সহযোগিতায় সব সময় এগিয়ে যায়, নুরু ও আনোয়ার :
বিদ্যাপিঠের ছাত্রী :
কিছু ইতিকথা :
মোঘল সম্রাট আকবরের হাত ধরে বাংলা সনের পথচলা। বাংলা সন প্রবর্তনের পিছনে প্রধানত দুটি কারণ পরিলক্ষিত হয়।
প্রথমতঃ আকবরের শাসনকার্য হিজরী সন অনুযায়ী পরিচালিত হত। এতে খাজনা আদায়ে অসুবিধার সৃষ্টি হত। কারণ চান্দ্রবর্ষ প্রতি বছর ১০/১১ দিন এগিয়ে যায়। এতে করে যুগ পরিক্রমায় আরবী মাসগুলো সব ঋতুতেই আসে। সূর্যের সাথে সৌরবর্ষের হিসাব থাকায় দিন-মাস-ঋতুর গণনা সব সময় একই থাকে। শস্য উৎপাদন ও খাজনা আদায়ের সমন্বয় সাধনের জন্য সম্রাট আকবর সৌরবর্ষের হিসাবে বাংলা সালের প্রবর্তন করেন।
আকবরের আদেশে ১৫৮৫ খৃষ্টাব্দ মোতাবেক ৯৯২ হিজরীতে ফসলী সন বা বাংলা সনের ফরমান জারী হয়। ৯৯২ হিজরীতে আদেশ জারী করলেও ৯৬৩ হিজরীতে আকবরের সিংহাসন আরোহণের সাল থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। ৯৬৩ সালে বাংলা ও হিজরী সাল একই ছিল। অতঃপর হিজরী সাল প্রতি বছর ১০/১১ দিন এগিয়ে যাওয়ায় ফলে, এখন বাংলা ১৪২৩ আর আরবী ১৪৩৭।
সম্রাট আকবরের নির্দেশে বাংলা সনের ক্যালেন্ডার প্রস্ত্তত করেন তৎকালীন পন্ডিত, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহ উল্লাহ সিরাজী।
পুনশ্চঃ সম্রাট আকবর, রাজা শশাংক, সুলতান হোসেন শাহ, তিব্বতিয় রাজা স্রংসন- বাংলা সনের প্রবর্তক হিসাবে জানা যায় । কিন্তু বেশীর ভাগ ঐতিহাসিকদের মতে সম্রাট আকবর'ই নব বর্ষের প্রবর্তক বলে গন্য ও বিবেচিত।
বৈশাখী উৎসবের ইতিবৃত্ত :
সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। চৈত্রের শেষ দিনে বঙ্গের জমিদারদের নিকট প্রজারা তাদের সকল খাজনা, মাশুল, শুল্ক পরিশোধ করত। পরদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ তারা উৎসবের আয়োজন করত। মূলতঃ তাদের এদিনের প্রধান কাজ ছিল একটি হালখাতা তৈরী করা। হালখাতা মানে বর্তমান খাতা বা নতুন হিসাব বহি। অর্থাৎ নতুন বছরের যাবতীয় হিসাব নতুন করে শুরু করার খাতা। এটা হল পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সংক্ষিপ্ত প্রচলিত ইতিহাস।
তবে বাংলাদেশে- বার্ষিক মেলা, হালখাতা, বলীখেলা, লাঠি খেলা, ষাড়ের দৌড়, গরুর দৌড়, মোরগের লড়াই, হাডুডু খেলা ইত্যাদি উৎযাপনের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ পালনের ইতিহাস লক্ষ্য করা যায় ।
পরিশেষে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কাব্যিক কথন :
নিশি অবসান প্রায় ঐ পুরাতন বর্ষ হয় গত,
আমি আজি ধূলিতলে জীর্ণ জীবন করিলাম নত।
বন্ধু হও শত্রু হও যেখানে যে রও, ক্ষমা কর আজিকার মত,
পুরাতন বরষের সাথে পুরাতন অপরাধ যত।
শুভ নববর্ষ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৪৯