“আরেস্ সালা। কী একটা মুভি দেখলাম রে ভাই। এক্কেরে জোস।“ – কোন থ্রীলার মুভি দেখে এই ধরণের প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলাম , যেমন : The Prestige, Inception, Shutter Island। হিন্দী মুভিতেও দিয়েছিলাম। সেটা যতদুর মনে পড়ে ২০১৫ সালের “দৃশ্যম” দেখে। তালিকায় নতুন মুভি “আন্ধাধুন”।
কসম লাগে, স্পয়লার দিমু না। কাহিনী খুব অল্প বলবো। আকাশ (আয়্যুষ্মাণ খুরানা) একজন অন্ধ পিয়ানো বাদক। নিজের বন্ধু/প্রেমিকা রাধীকা আপ্টের বাপের রেস্টুরেন্টে পিয়ানো বাজিয়ে কিছু রোজগাড় করে। একদিন রেস্টুরেন্টে দেখা হয় ৭০ দশকের বিখ্যাত নায়কের সাথে। ব্যস পরের দিন থেকেই আকাশের জীবন পুরাই তছনছ।
মুভিটির মূল কাহিনীর ধারণা নেয়া হয়েছে একটি ফরাসি শর্টফিল্ম L'Accordeur থেকে। নির্মাতারা সেটার স্বীকারোক্তি করতে কিন্তু ভুলেন নি। তবে মুভি দেখার পর শর্টফিল্মটি দেখে মনে হয়েছে :”ধুর! এটাতে তো কিছুই নাই। শুধু একটি দৃশ্য।“
মুভিটির সাথে দ্য প্রেস্টিজ ও ইন্সেপশনের সাথে তুলনা করছি কারণ মুভির সমাপ্তিটি একটি ধাঁধার মতো। দেখার পর দর্শকদেরকেই ধারণা করে নিতে হবে যে “কী দেখলাম?”। আমার এ ধরণের মুভি সাধারণত ভালো লাগে না যেখানে কোন নির্দিষ্ট সমাপ্তি নেই। তবে এই মুভিটা চরম ভালো লেগেছে।
মুভির চিত্রনাট্য অসাধারণ মানের। একটি থ্রীলার হওয়া সত্যেও মুভিটি চরম হাসির। সব সময় একটি টানটান উত্তেজনা রেখেও কীভাবে হাসির দৃশ্য নিয়ে আসলো ভাবাই যায় না নির্দেশক শ্রীরাম রাঘবণ কী তাহলে বলিউডের সেরা নির্দেশকের খেতাব পেতে যাচ্ছেন?
অভিনয়ে মূলত দুজন: আয়ুষ্মাণ এবং তাবু। পুরাই ফাটাফাটি অভিনয়। তাবুর জায়গায় আর অন্য কাউকে চিন্তাই করা যায় না। যেরকম রহস্যময়ী এবং গ্ল্যামার একসাথে তিনি এনেছেন, কোন জবাব নেই। আয়ুষ্মাণের চরিত্রটি ভয়ংকর কঠিন ছিলো এবং দারুণভাবে তিনি সেটাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। “খান” দের আর কতো দেখবো? এখন আয়ুষ্মাণের যুগ আসা উচিত। এছাড়া পার্শ্ব অভিনেতারা ভালো না করলে মুভিটি বেশ খারাপ হতে পারতো। তারা সেটা হতে দেয়নি। রাধিকা আপটে, জাকির হুসেন, ছায়া কদম – একেবারে জবরদস্ত।
নেটফ্লিক্সের কল্যাণে রাধীকা আপটে ভারতের বিনোদন জগতের রাণী হওয়ায় আরেকটু বেশি গুরুত্ব আশা করেছিলাম। তবে সবার গুরুত্ব চরিত্র অনুসারে একদম ঠিক ছিল।
পিয়ানো বাজানো কেন্দ্রীক মুভি হওয়ার কারণে মুভির সংগীত এবং আবহ সংগীত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। সেকারণে দায়ভার অমিত ত্রিবেদী ছাড়া আর কাকে দেওয়া সম্ভব? গানগুলি বেশ শ্রুতিমধুর।
মুভির সমাপ্তি নিয়ে সবাই আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। বর্তমানে কাহিনীর ৫ ধরণে সম্ভাব্য মতবাদ পাওয়া যাচ্ছে । সবগুলোতেই যুক্তি আছে আবার নেইও। বোঝাই যাচ্ছে ব্যাপক ব্যাপার-স্যাপার।
খারাপ দিক বলতে বলবো মুভির দ্বিতীয়ভাগে কিছু সমস্যা আছে। যেটা অনেকেরই ভালো লাগে নাই। আমি যে কাহিনী মতবাদে বিশ্বাস করছি সেটাতে সে সমস্যাগুলি তেমন ঝামেলা করে না। সুতরাং ব্যাপারটা পুরাটাই দর্শকদের উপর।
এরকম একটি বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্য সম্পন্ন মুভি বলিউড থেকে আশা করিনি। সব মিলিয়ে মারাত্মক মুভি।
রেটিং – ৪.৫ / ৫.০
https://www.facebook.com/rajinreview
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:৫৬