অনেকদিন ধরেই বলিউড মুভিতে বড়লোকদের জীবন ছাড়া কিছুই দেখানো হয় না। হিন্দী মুভি মানেই হচ্ছে হাম আপকে হ্যায় কৌনের মত। জীবন চলছে গাজরের হালুয়া খেয়েই। “অর্থকষ্ট” শব্দটি কারো ডিকশনারিতেই নেই। কিন্তু ধনীদের দেখাতে গিয়ে যদি মুভি হয় “রেইস ৩” তখন দর্শকেরা অন্য মুভির দিখে চোখ দেয়া শুরু করে। হিট হতে থাকে মধ্যবিত্ত্বদের জীবন নিয়ে কাহিনীর মুভিগুলি। সেই্ ধারা বজায় রেখে এবার জাকজমক মুভির অভিনেতারাও মনোযোগ দেয়া শুরু করেছে এরকম বাস্তবধর্মী মুভির দিকে। সেই রকমই এক মুভি “সুই-ধাগা”। মানতেই হবে প্রশংসার দাবিদার।
কাহিনী জানা যাক। ছোট্ট এক মফস্বলে থাকে মৌজি (বরুণ ধাওয়ান) এবং তার পরিবার। খুব বেশি লেখাপড়া জানে না। এক দোকানের সহকারী কাজ করে জীবন চলে যাচ্ছে। তার এক অদ্ভুত গুণ আছে। সেলাই মেশিনে সে দারুণ দক্ষ। সমস্যা হলো মৌজির বাপের (রঘুবীর যাদব) কাছে এই দক্ষতা শুধুমাত্র পরিবারকে পথে বসাতে পারে। তবে মৌজির স্ত্রী মমতা (আনুশকা শর্মা) -র দৃঢ় বিশ্বাস এই পথে গেলে নিশ্চয়ই সাফল্য আসবে। কিন্তু এক মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের পক্ষে শুধু স্বপ্নই দেখা সম্ভব, সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে কতগুলি পাহাড় যে পাড়ি দিতে হবে সেটা চিন্তার বাইরে।
বরুণ ধাওয়ান এবং আনুশকা শর্মা তাদের গ্ল্যামারাস চরিত্রগুলি বাদ দিয়ে এই চরিত্রে বেছে নেওয়ার, সত্যিই প্রশংসনীয়। যদিও মুভিটি গতানুগতিক ব্লকবাস্টার মুভিগুলির মতো নয়, তবুও মুভির চিত্রগ্রহণ, কাহিনী, সংলাপ, এবং চিত্রনাট্য মুভিটিকে বেশ জাকজমক করে তুলে। পুরো মুভিটি একটি ছোট্ট বাসার মধ্যের সীমাবদ্ধ হলেও চিত্রগ্রহণের কারণে মনে হয়ে যেন সেই বাসাতে আমি বসেই আছি। এছাড়া দুর্দান্ত বাস্তব ও মজার সংলাপের কারণে মুভিটি কখনো বোরিং বলে মনে হয়নি। পুরো মুভিটিই উপভোগ করেছি। এর জন্য পরিচালক শরৎ কাটারিয়া প্রশংসার দাবীদার।
অভিনয়ে প্রধান চরিত্রে বরুণ ধাওয়ান থাকলেও অভিনয়ে প্রশংসা শুরু করতে হয় মৌজির বাবা-মা চরিত্রে রঘুবীর যাদব এবং যামীনি দাসের। খুবই ভালো লেগেছে তাদের। বরুণের অভিনয় যথেষ্ট ভালো হলেও আনুশকা শর্মা অবশ্যই অনেক এগিয়ে। একদম সাধাসিধে ঘরের বৌ চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন। তবে সাধাসাধি এই্ বৌ যে বিশ্বজয়ের সামর্থ্য রাখে সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। খালি হাতে, খুন্তি ছাড়া রুটি সেকার দৃশ্যে পুরাই অবাক হয়েছি। বরুণ ধাওয়ানও অনেক ভালো অভিনয় করেছেন। সকলের অভিনয়ে পরিশ্রমের চিহ্ণ খুব ভালো মতো দেখা যায়।
মুভিটির প্রথমার্ধ দেখে মনে হয়েছিল জীবনের সেরা চলচ্চিত্র দেখছি। সেলাই মেশিন সংক্রান্তু একটি দৃশ্য অনেকদিন পর্যন্তই মনে থাকবে। ঝামেলা বাঁধে দ্বিতীয়ার্ধে। মুভিটি অর্থনীতি, ব্যবসা, ও কপিরাইট আইনের ভেজালে কিছুক্ষণের জন্য থেমে যায়। ধীরে ধীরে মুভিটি একেবারেই বাস্তবতা থেকে ১০০ হাত দুরে চলে যায়। শেষ দৃশ্যে মনে হচ্ছিল:”ধুর! এটা কী হচ্ছে?” কিন্তু পরবর্তীতে মনে হলো দেখতে খারাপ লাগছেনা। শেষের দিকে শুধু কিছু মিষ্টি মধুর দৃশ্য কিন্তু বেশ অবাস্তব। দুর্দান্ত প্রথমার্ধের কারণে দ্বিতীয়ার্ধকে কতটুকু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি তে দেখা যায় সেটা দর্শকদের উপর ছেড়ে দিতে হবে।
মুভির সংগীত খুবই দুর্বল। শুধুমাত্র “খাটার-পাটার” গানটি একটু ভালো। পরিচালকের আগের মুভি “দাম লাগাকে হাইশা” থেকে এই মুভিকে একটু এগিয়ে রাখবো।
সব মিলিয়ে বেশ ভালো।
রেটিং – ৩.৫ / ৫.০
https://www.facebook.com/rajinreview
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৫