“দোস্ত একটা মুভি দেখলাম।“
“তাই নাকি? Hero কে?”
ভুলেও কেউ জিজ্ঞেস করি না :”মুখ্য ভুমিকায় কে ছিলো?” কারণ হিরো মানে বীর এবং আমরা ধরেই নেই যে মুখ্য ভূমিকায় একজন বীর পুরুষ থাকবে। আর অভিনেতা যদি সালমান খান থাকে তাহলে তো কথাই নাই। কিন্তু সবাইকে বিস্মিত করে এবার তিনি করলেন একজন জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া মানুষের কাহিনী ”সুলতান”।
কাহিনী জানা যাক। ক্রিকেটের মত মিক্সড মার্শাল আর্ট কে জনপ্রিয় করতে ব্যস্ত এক ব্যবসায়ী আকাশ ( অমিত সাধ) । কিন্তু দেশী কোন প্রতিযোগী না থাকায় ব্যবসায় লাল বাত্তি অবস্থা। অবশেষে খোঁজ পায় সুলতান (সালমান খান) এর। পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরী করা এক কালের বিশ্বসেরা কুস্তিগীর। এখন বয়স ৪০ এর মত। কুস্তিও ছেড়ে দিসে, ভুড়িও বের হয়ে গেছে। কুস্তির সাথে এক অন্যরকম শত্রুতা তার। কিন্তু কেন? অমিত কিভাবে তাকে রাজি করাবে? এছাড়া একজন বয়স্ক কুস্তিগীর কীভাবে মিক্সড মার্শাল আর্টের খেলাতে অন্যদেরকে টেক্কা দিবে?
সালমান খান সম্পর্কে অনেকে অনেক কিছু বলে। সবচেয়ে বেশী যেটা বলা হয় সেটা হলো তার সৌন্দর্য নিয়ে। কিন্তু এই মুভিতে আমার মতে সালমান খানকে দেখতে সবচাইতে খারাপ লেগেছে। মুভিটিতে সালমানের চরিত্রটি সম্পূর্ণ অভিনয় নির্ভর, যেটি সালমান খান ফাটাফাটিভাবে করে দেখিয়েছেন। মারামারি টাইপ দৃশ্যতো সালমান ভালো করেই, এছাড়া সুলতান চরিত্রের খারাপ দিক থেকে ভালো দিকে আসার ব্যাপারটা দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অবশ্যই এটি সালমান খানের অন্যতম সেরা অভিনয়।
মুভিটির পুরোপুরি সালমান নির্ভর হলেও সবচেয়ে ভাল দিক হলো যে সহশিল্পীদের চরিত্রগুলি দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেকটি চরিত্রের সাথে দর্শকদের একধরণের যোগাযোগ তৈরী হয়ে যায়। আনুশকা শর্মা সব সময়ই ভালো অভিনয় করেন কিন্তু দুঃখজনকভাবে বলিউড মুভিতে কেউ তো আবার নায়িকাদের অভিনয় দেখে না।
আনুশকাকে এই মুভির নায়িকা বললে কিছুটা ভুল হবে। দারুণ শক্তিশালী একটি চরিত্র। প্রথম দৃশ্য থেকেই মুগ্ধ হয়ে যাবার মত। এমনকি আনুশকার চরিত্রটি কেন্দ্র করেই এর থেকেও ভালো মুভি বানানো যায়।
এছাড়া গোবিন্দ চরিত্রে অনন্ত শর্মা, আকাশ চরিত্রে অমিত সাধ এবং সুলতানের স্পন্সর সুমিত সামনানী সবাইকেই দারুন লেগেছে।
মুভিটির দৃশ্যায়ন ফাটাফাটি ধরণের। গ্রামের সৌন্দর্য দারুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া মুভির আসল দিক হলো মারামারির দৃশ্যগুলি। পুরাই জোস! এমন না যে সালমান মাঠে নামলো আর সব কাইত। দর্শকরা একটু চিন্তাতে থাকবেই যে কীভাবে এই লড়াইতে জিতা যায়? এক মারামারি দৃশ্যে থিয়েটারে এক কিউবান আন্টি সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ায় ফিডেল কাস্ত্রোরে অনেক গালি দিসি ( বাঙালী মাত্রই রেসিস্ট!) । এতটাই টানটান উত্তেজনা অনুভব করছিলাম।
মুভির নির্দেশক আব্বাস আলি জাফর প্রশংসার দাবিদার হলেও “গুন্ডে” মুভির নির্দেশক হওয়ার কারণে প্রশংসা করুম না। আমার রিভিউ আমার ইচ্ছা। এবারো উজবুকটা ইতিহাসের সানডে মানডে ক্লোজ কইরা দিসে। “২০১২ সালের অলিম্পিকে সুলতান সোনা জিতসে” – এটা দেখলে তো মার্কিন কুস্তিগীর জর্ডান বারোজ তো পুরাই বোকা হয়ে যাবে! এছাড়া অলিম্পিকে দুবার মেডেল পাইয়ে দেয়া ভারতীয় কুস্তিগীর সুশীল কুমারের নাম একবারও কি নেয়া যায় না?
মুভিটি সালমান খানের অন্যান্য মুভির মতো তেমন যুক্তিহীন না। এটার কারণে অনেকের খারাপ লাগতে পারে। এছাড়া মুভিটির ভাষাতে একটু সমস্যা আছে। মুভির অনেক দৃশ্যে হরিয়ানার ভাষার ব্যবহার করায় অনেকের সমস্যা হবে। সাবটাইটেল ব্যবহার করা রেকমেন্ডেড। মুভিটির গানগুলি আছে ভালোই। তবে অসাধারণ নয়। এছাড়া মুভিটি খুবই পারিবারিক, একদমই অশ্লীল কোন দৃশ্য নেই। যেটা আজকালকার বলিউড মুভিতে বিস্ময়কর।
পুরো মুভিটিই উপভোগ করেছি। সব মিলিয়ে অনেক ভালো মুভি।
রেটিং – ৪.০ / ৫.০
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:২৮