আজকে যে গল্পটা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি, গল্পটা দুইটা ছোট বাচ্চাকে নিয়ে। একজনের বয়স ১০ বছর, আরেক জনের বয়স ৬ বছর। তারা একই গ্রামে বসবাস করত। তারা দুইজন খুবই ভালো বন্ধু ছিল।তারা একসাথে খেলত,একসাথে স্কুলে যেত,একসাথে ঘুরত, সবকিছুই প্রায় একসাথে করত।
জানে জিগর বন্ধুর মত।
একদিন তারা খেলতে খেলতে নিজের গ্রাম ছেড়ে একটু দূরে চলে গেল।
তাদের মধ্যে ১০ বছর বয়সের বড় বাচ্চাটা হঠাৎ করে কুয়ার মধ্যে পড়ে গেল।
বাচ্চাটা সাঁতার জানতো না,সে ভয়ে খুব জোরে জোরে চিৎকার করতে শুরু করল।
কিন্তু তাদের আশে-পাশে চক্ষুসীমানার ভিতর কেউ ছিল না যে তাদের সাহয্য করবে।
৬ বছর বয়সের যে বাচ্চাটা কুয়ার উপরে ছিল,হঠাৎ করে তার চোখ পড়ল একটা বালতির উপর।
বালতির সাথে ছিড় দড়ি বাঁধা।
সে ১ সেকেন্ডও দেরী না করে বালতিটা কুয়ার ভেতরে ছুড়েদিল এবং কুয়ার ভিতরের বন্ধু বালতিতে ধরে ঝুলে পড়ল।
৬ বছরের বাচ্চা ছেলেটা রশি ধরে অনবরত টানতে থাকল।
টানতেই থাকল তার পুরো শক্তি দিয়ে।
ততক্ষণ থামলো না যতক্ষন পর্যন্ত সে তার বয়সে বড় বন্ধুকে বাহিরে বের করতে পারল।
বন্ধুকে বের করেই থামল।
ইউ কেন ইমাজিন, ৬ বছর বয়সের একটা বাচ্চা তার থেকে বড় একটা বাচ্চাকে কুয়ার ভিতর থেকে টেনে তুলেছে।
এতক্ষন সবকিছুই বোধগম্য ছিল,সব ইনটেনশন ক্লিয়ার ছিল।
তারা যখন গ্রামে ফিরল তারা তাদের পরিবারকে,গ্রামের লোকদের সাথে এসব ঘটনা শেয়ার করল,কিন্তু কেউ বিশ্বাস করছিল না তাদের।
কেনই বা বিশ্বাস করবে আমি আপনি হলেও করতাম না,বিশ্বাস না করাটাই স্বাভাবিক।
গ্রামের লোকরাও ঠিকই ছিল,তাদের ধারনা ছিল এই ৬ বছর বয়সের বাচ্চা যার পানি ভরা বালতিটা তুলার সামর্থ্য নেই,সে কি করে ১০ বছরের বাচ্চাকে কুয়া থেকে টেনে উঠাতে পারে??
ঐ গ্রামেই রহিম চাচা নামের একজন লোক ছিলেন, উনি গ্রামের মান্য ও জ্ঞানী লোকদের মধ্যে একজন।
উনি বাচ্চাদের কথা বিশ্বাস করেছিলেন।
গ্রামের সবাই ভাবল রহিম চাচাতো কখনও মিথ্যা বলেন না,উনি যেহেতু বিশ্বাস করেছেন তাহলে কিছু হয়তো হয়েছে,কিছু ঘটেছে।
কোন না কোন কারন আছে যার কারনে রহিম চাচা এটা বিশ্বাস করেছেন এবং মেনে নিয়েছেন।
পুরো গ্রামের লোকেরা একত্রিত হয়ে রহিম চাচার নিকট গেল,
উনারা রহিম চাচাকে বলল দেখেন আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না, এটা কি করে সম্ভব?
এখন আপনিই আমাদের বুঝিয়ে দিন।
রহিম চাচা উত্তরে বললেন, আমি আর কি বলব, বাচ্চাটাতো বলছেই যে তার বন্ধু কুয়াতে পড়ে গিয়েছিল, সে বালতি কুয়ায় ফেলল,তার বন্ধু শক্ত করে বালতিটা দরে রাখল,ছোট বাচ্চাটা দড়ি ধরে টানকে টানতে তার বন্ধুকে উপরে তুলল এবং বন্ধুকে বাঁচাল।সিম্পল।
বাচ্চারা তো আপনাদের বলেছেই কি হয়েছে আমি আর নতুন করেরে কি বলব?
সবাই হা করেরে বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।
কিছুক্ষন পর রহিম চাচা বলে উঠলেন, "প্রশ্ন এটা নয় যে
এত ছোট বাচ্চা এই কাজ কি করে করতে পারল,
প্রশ্ন হচ্ছে এটা যে বাচ্চাটা এই কাজটা কেন করতে পারল"।
বাচ্চা ছেলেটার ভিতর এত শক্তি কোথা থেকে আসল?
এটার একমাত্র একটাই উত্তর আছে,একমাত্র উত্তর।
"যেই সময় বাচ্চাটা এই কাজটা করছে তখন তার চারপাশে দূর দূর পর্যন্ত এমন কোন লোক ছিল না,যে বাচ্চাটাকে স্মরন করিয়ে দিবে যে তুমি এটা করতে পারবেনা।
তুমি পারবে না।
কেউ ছিল না,কেউ না।
এমন কি সে নিজেও না।
তাই সে করতে পেরেছিল।
আর আমরা কিছু করতরতে গেলে আগেই অনেকে বলবে আরে এই কাজ তোমাকে দিয়ে হবে না।
এই কথা না বলে, একটু ইনসপায়ারেশন দিয়ে বলার কেউ নেই যে কর তুমি পারবে।
তা না করে কাজ করার আগেই হারিয়ে রেখে দিবে।
আর আমরা নিজেও কোন কাজ করার আগে শতবার ভাবি, আমি এটা করতে পারবো তো?? যদি না পারি?
আরে একবার পারব না এই কথাটা মনে না করে কাজটা করেই দেখেন না।
কাজ করার আগেই হারার ভয় কেন???
কেন???