জীবনটা যে কত কষ্টের হতে পারে তা মাঝে মাঝেই টের পাই, বিশেষ করে যখন প্রত্যেক মাসে মা-বাবার কাছ থেকে টাকা চাই!তবে দোষটা তাদেরকে দেয়া কখনোই ঠিক হবেনা। কারণ সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও যখন আমাদের চাহিদা মেটাতে পারেনা, তখন আমাদের চেয়ে তারাই বেশি কষ্ট পায়।
তাদের কমন কথা>কিছুদিন আগেইতো টাকা দিলাম,আবার কোথা থেকে দেই?
ফোনের ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজটা হয়তো শোনা যায়না, তবে তাদের ব্যর্থতার বুকফাটা আর্তনাদটা ঠিকই অনুভব করা যায়।একপর্যায়ে অভিমান করে হয়তো না বলেই ফোনটা কেটে দেই। তবে তাদের বুঝতে বাকি থাকেনা যে,ছেলে কেনো এভাবে কলটা কেটে দিলো?
ঘন্টা খানেক পরেই বিকাশ থেকে সেই
পরিচিত মেসেজ( Cash In Tk 5,000.00 from 017********successful.Fee Tk 0.00. Balance Tk ****. TrxID.......) আসে।
মেসেজ পেয়ে খুশি হলেও ভাবি কোথায় থেকে কেমনে দিলো? যাই হোক,যেভাবে সম্ভব মেনেজ করে পাঠায়। কারণ তাদের স্বান্ত্বনা একটাই,ছেলে পড়ালেখা করে,অনেক কিছু করতে টাকা লাগেই।আর আমরা যারা এই ক্যাটাগরিতে আছি, সবাই মা-বাবার কষ্টবুঝি।
তাই বন্ধুদের সাথে জিন্দাবাজার বা অন্য কোন মার্কেট গেলেও নিজেদের কাপড় কেনার জন্য সেই পরিচিত কাজি ম্যানশন /ফুটপাতের বাজারকেই বেছে নেই।এক্ষেত্রে বন্ধুদের চেয়ে আমাদের সময় একটু বেশি লাগে। সবার সাথে যাতে মানিয়ে চলা যায়,এই ভেবে যাচাই-বাছাইয়ে তো একটু সময় লাগেই!
খাবার-দাবারের বেলায় আমাদের ভাগ্যে কখনও চাইনিজ বা ফাস্টফুড জোটা বিড়ালের ভাগ্যে শিকা ছেড়ার মত। প্রকৃত ব্যাপারটা গোপন রেখে আমরা এগুলোকে স্বাস্থ্যেরর জন্য
ক্ষতিকর মনে করি। রাত ২/৩টায় ঘুমিয়ে সকালের খাবারের সময়টা অনেকেই ঘুমের মধ্যই কাটিয়ে দিই, নাস্তা করলেও অল্প খরচেই সেড়ে নেই।আর দুপুর ও রাতে মেসের / হলের খাবার দিয়ে অনায়াসেই দিন পার করা যায়।
এতে কেউকিছু বললেও আমরা কারো ধার ধারিনা। কারণ
আমরা জানি, আজ যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আছেন,তারাও অনেকে একসময় এই খাবারগুলোই খেয়ে গেছেন।
আরেকটা চরম সত্য হচ্ছে, মেয়েদের পেছনে টাকা ব্যয় না করার কারণে অনেক সময় যোগ্যতা থাকা সত্বেও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের ভাগ্যে প্রেম জুটেনা।সত্যটা স্বীকার করলেও আমরা বলি, ক্যাম্পাস লাইফে প্রেম করা যাবেনা।ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে বেশি পড়াশোনা করা দরকার।
তাই রাত জেগে ফোনে কথা বলার মত সময় আমাদের নেই। এখানে কিন্তু ফ্লেক্সি লোডের ব্যাপারটা ও গোপন। সত্যি কথা বলতে কি, ১০/২০ টাকার উপর ফ্লেক্সি দেয়ার সাহস সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা পায়না।তবে কিভাবে সবার সাথে মেনে চলতে হয়,সেটা আমাদের ভালোভাবেই জানা আছে।
বিভিন্ন সিমের ফ্রি অফারের সুুবিধা দিয়ে আমরা ইন্টারনেট, ফেসবুকচালাই। ফ্রি না থাকলে জিরো ফেসবুক...এ সম্পর্কে কেউ কিছু বললে আমাদের যুক্তি থাকে, মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই চোখের সামনে খারাপ ছবি চলে আসে,সেগুলো থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই আমরা জিরো চালাই। আসলে আমরা অনেক ভালো তো.....এভাবেই চলতে থাকে আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের জীবন। একসাথে বসবাস করা কয়েকজনের সাথে নিজের অবস্থান চিন্তা করলে মাঝরাতে নিজের অজান্তেই চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যায়।এতে অবশ্য সমস্যা হয়না। কারণ এসময় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা ছাড়া কেউ জেগেও
থাকেনা।
চোখের পানি মুছে তখনি শপথ নেই,জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। মা-বাবার দুঃখ-কষ্ট দূর করতে হবে আর সুন্দর এই দেশটার জন্যকিছু করতে হবে।
পূরণ হোক আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের
ছেলেদের এই ছোট ছোট আশাগুলো!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১৪