১) দিনের বেলায়, বিশেষ করে মধ্য দুপুরের আগেই ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দিন। সূর্য পাটে বসার পর আবার খুলে দিন। দুপুরের গরমটা ঘরে ঢুকতে না পারলে কম পক্ষে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা নেমে যাবে, অর্থাৎ ঠাণ্ডা থাকবে আপনার ঘর।
২) জানালার কাঁচ গুলোয় সাদা রঙ করে দিন, কিংবা রোদ ঠেকাতে ব্যবহার করুন শেড। যদি দুটোর কোনটি করতে না চান, তাহলে স্কচ টেপ দিয়ে ধবধবে সাদা কাগজ সেঁটে দিন জানালার শার্সি গুলোয়। দেখবেন ঘর অনেকটাই ঠাণ্ডা থাকছে।
৩) বাসায় ছোট টেবিল ফ্যান থাকলে সেটাকে খোলা জানালার সামনে সেট করে ছেড়ে রাখুন। এই টেবিল ফ্যান বাইরে থেকে ঠাণ্ডা বাতাস টেনে আনবে ঘরে। দেখবেন ম্যাজিকের মতন ঘর ঠাণ্ডা হচ্ছে।
৪) ঠাণ্ডা পানি বা বরফের টুকরো নিন একটি বাটি বা গামলায়। তারপর তা রেখে দিন টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের একদম সামনে। ব্যস, তৈরি আপনার বিদ্যুৎহীন এসি। টেবিল ফ্যান না থাকলে সিলিং ফ্যানের নিচে রাখলেও খারাপ হবে না। প্রাচীন কালে বাড়ি শীতল রাখতে বড় বড় মাটির পাত্র ভরে পানি রাখা হতো প্রতিটি ঘরে। এটা সেই পদ্ধতিরই আধুনিক সংস্করণ।
৫) গাঢ় রঙ আর ভারী কাপড়ের তৈরি পর্দা, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার ইত্যাদি সব কিছুই তুলে রাখুন শীতের জন্য। গাঢ় রঙের এসবব সামগ্রীর ব্যবহারে দেখবেন গরম অনেকটাই বেশী লাগে, যেহেতু তাদের তাপ শোষণ ক্ষমতা অত্যধিক। যতটা সম্ভব হাল্কা রঙের পর্দা, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার ব্যবহার করুন। সুতি কাপড় সব চাইতে উপযোগী।
৬) বাতাসে আদ্রর্তা থাকলে গরম অনেক বেশী লাগে। তাই ঘরের মাঝে আদ্রর্তা কম রাখতে হবে। বাইরে থেকে ফিরে ঘামে ভেজা জামা কাপড় শোবার ঘরে মেলে দিবেন না, ভেজা কাপড় ঘরের মাঝে শুকাবেন না। ভেজা কাপড়ের কারণে আদ্রর্তা বেড়ে যাবে ও অনেক বেশী গরম লাগবে।
৭)ঘরে গাছপালা থাকলে সেগুলো অন্তত শোবার ঘর থেকে সরিয়ে রাখুন। এরা আদ্রর্তা বারায় ঘরের পরিবেশে। আবার রাতের বেলা গাছ গুলো কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে। গাছেদের বারাব্দায় রাখুন। তাতে বাড়ির পরিবেশ শীতল রাখতে সহায়তা হবে, আবার গাছ গুলোও ভালো থাকবে।
৮) লাল-হলুদ রঙের আলো সব সময় গরম বাড়ায়। লক্ষ্য করে দেখবেন যে বেকারি গুলোতে খাবার গরম রাখতে, বা মুরগির বাচ্চাদের ওম দিতে বাল্বের লাল আলো ব্যবহৃত হয়। এই গ্রীষ্মে হলদে আলোর বাল্ব গুলো বদলে ফেলুন সাদা আলো দিয়ে। এনার্জি বাল্বে ঘর যেমন ঠাণ্ডা থাকবে, তেমনই খরচও বাঁচবে।
৯) প্রয়োজনের অতিরিক্ত আলো জ্বালাবেন না। বাড়তি আলো কয়েক ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
১০) দিনের যে সময়টা সব চাইতে বেশী গরম থাকে, তখন চুলার কাজ না করাই ভালো। তাতে বাড়ি আরও গরম হয়ে ওঠে। সম্ভব হলে রান্নাঘরের উপযোগী ফ্যান লাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন, আরাম মিলবে।
১১) আমরা অনেকেই পানি ফুটিয়ে খাই। নিজেই লক্ষ্য করবেন যে এই ফুটানোর সময় কি ভয়াবহ গরম হয়ে ওঠে ঘরদোর। সম্ভব হলে ফিল্টার ব্যবহার করুন। সেটা সম্ভব না হলে সন্ধ্যার পর পানি ফুটান। গরম কম লাগবে।
১২) অপ্রয়োজনীয় সমস্ত ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি বন্ধ করে রাখুন। টেলিভিশন থেকে শুরু করে কম্পিউটার- যতক্ষণ যন্ত্রটি প্রয়োজন হচ্ছে, কেবল ততক্ষণই ব্যবহার করুন। এই যন্ত্র গুলো ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। একবার বন্ধ করেই দেখুন, চমৎকার ঠাণ্ডা হয়ে গেছে ঘর।
এই গরমে ইতিমধ্যেই জনজীবন অস্থির হয়ে উঠেছে। মাঝে মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি হলে ভালোই লাগে, তবে কখনো সামান্য বৃষ্টির পর আরও যেন জেঁকে ধরে গরম। কিন্তু সহ্য করা ছাড়া উপায় কি, আমাদের মাঝে ক জনেরই বা সামর্থ্য আছে এসি কেনার বা ব্যবহার করার? আবার এসি যে ব্যবহার করবেন। বিদ্যুৎ তো থাকতে হবে, নাকি? সব মিলিয়ে মহা যন্ত্রণার একটি পরিস্থিতি। আসুন, আজ জেনে নেয়া যাক এমন কয়েকটি উপায় যাতে কিনা এসি ছাড়াই ঠাণ্ডা থাকবে আপনার ঘর।