ভারতের পূর্বে অবস্থিত বিহার রাজ্য।
বিহারিরা ভারতের বিহার রাজ্যের একটি জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর ইতিহাস তিন হাজার বছরে বেশি। এরা মূলত ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এদের বসবাস। খুবই অবহেলিত এই জনগোষ্ঠি। ঠিক এরকম অবহেলিত হচ্ছে এখন রোহিংগারা। দেশভাগের পর বিহারীরা পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে বিহারিদের অনেকে আটকা পরা পাকিস্তানী বলে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ বিহারী ছিলো। মুক্তি যুদ্ধের বিরোধিতা করে বিহারীরা। কি অদ্ভুত ওরা ভারতের অধিবাসী। কিন্তু কথা বলে উর্দুতে। সাপোর্ট করে পাকিস্তানকে। আমাদের দেশে কি বিহারীরা খুব ভালো আছে? না ভালো নেই। দরিদ্র দেশে যারা আশ্রয় নেয় তারা ভালো থাকে না। হোক বিহারী বা রোহিংগা।
বিহারীরা আমাদের ভাষা আন্দোলনেরও বিরোধিতা করে।
ওদের প্রিয় ভাষা উর্দু। ওরা নিজেদের সাথে উর্দু ভাষাতেই কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান সরকার এক লাখ ৭০ হাজার বিহারীদের ফেরত নেয়। বাকি গুলো থেকে যায় আমাদের দেশে। ১৯৭২ সালে এইসব বিহারীদের নাগরিত্ব দেওয়া হয়। যারা বাংলাদেশের নাগরিত্ব নিয়েছিলো, তাদের আর ফিরিয়ে নেয়নি পাকিস্তান সরকার। বিহারীরা আমাদের দেশে ভালো নেই। সত্যিকথা বলতে ওরা আমাদের দেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ওরা লেখাপড়ায় ভালো করছে না। তাই সমাজের নিচু কাজ করছে। তবে ৭১ এর পরে যাদের জন্ম তারা লেখাপড়া শিখে বাঙ্গালীদের সাথে মিশে যেতে সক্ষম হয়েছে। একথা সত্য বিহারীরা মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছরও এই বাংলাদেশটাকে ভালোবাসতে পারেনি। তারা আজও হৃদয়ে পাকিস্তান ধারন করে আছে।
দেশভাগের আগে ১৯৪৬ সালে বিহারে ধর্মীয় দাঙ্গার কারনে-
৩০ হাজার বিহারী মারা যায়। তারপর ভয়ে বহু বিহারীরা বিহার ও কলকাতা থেকে বাংলাদেশে চলে আসে। কিছু পাকিস্তানে চলে যায়। কিন্তু তারা নিজেদের পশ্চিম পাকিস্তানী বলে দাবী করতো। যুদ্ধের সময় তারা রাজাকারদের সাথে হাত মিলিয়েছিলো। খুব লুটপাট করেছে। বাঙ্গালী জনতা রাজারাক গ্রুপে জয়েন করা কমপক্ষে ৩০০ শ' বিহারীকে মেরে নদীতে ফেলে দেয়। তবে হাতে গোনা কয়েকজন বিহারী মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার দয়া করে বিহারীদের থাকার জায়গা দিয়েছে। মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে ২৫ হাজার বিহারী থাকে। এরা শহর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। ফুটপাতে হকারি করে। নেশা দ্রব্য বিক্রি করে। মিরপুর জুটপট্রিতে ক'দিন পরপরই মারামারি হয়।পুলিশ ধাওয়া করে। অনেকের নামে থানায় মামলা আছে।
মিরপুর ১০ নম্বরে বহু বিহারী থাকে।
২০১৪ সালে মিরপুরবাসীদের সাথে বিহারীদের ঝগড়া হয়। তখন মিরপুরবাসী ৯জন বিহারীকে পুড়িয়ে মেরে ফেলে। যুদ্ধের পর যেসব বিহারীদের জন্ম সরকার তাদের নাগরিকত্ব ও ভোটের অধিকার প্রদান করে। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে ৩৫ হাজার বিহারী ভোটার রয়েছে এবং মিরপুরে ৫৫ হাজার ভোটার রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ১১৬টি ক্যাম্পে এই জনগোষ্ঠীর সাড়ে ৫ লাখ লোক বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে বিহারীরা রয়েছেন তার মধ্যে বেশিরভাগের বসবাস সৈয়দপুরে। ১৮৭০ সালে সৈয়দপুরে ইংরেজ সরকার একটি রেল কারখানা স্থাপন করে তখন ইংরেজরা ৭০০০ বিহারীকে শ্রমিক হিসেবে নিয়ে আসে। যেহেতু বিহারিরা বর্তমানে বাংলাদেশে স্থায়ী, তাই সরকারের উচিত তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে দক্ষতা অনুযায়ী মানবসম্পদে পরিণত করা। বিহারী শব্দের আক্ষরিক অর্থ 'বিহারের মানুষ'। ১৯৭১ সালে পূর্ব পুরুষদের একটি ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল গুনছে বর্তমান এই প্রজন্ম।
তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তানী বাঙ্গালী# মিল্টন খন্দকার।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৮