মানুষ যদি পাপ করে তাতে আল্লাহর কি লাভ হবে?
সে যদি নির্দোষ হয় তাতেই বা তাঁর কি উপকার হবে? মানুষের কাছ থেকে তিনি কিছুই চান না, তাদের দুষ্টতা কেবল তাদেরই ক্ষতি করে, তাদের নামাজ, রোজা, সততা কেবল তাদেরই সাহায্য করে। আল্লাহ তো তার সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে মানুষকেই বেশী শিক্ষা দিয়েছেন, আকাশের পক্ষী বা জমিনের পশু কি মানুষের চেয়ে জ্ঞানী? আল্লাহ ক্ষমতায় মহান, তাঁর মত শিক্ষক আর কে আছে?’ পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের ভেতর ২৫ জনের নাম পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে।
ইয়াকুব (আঃ) একজন নবী।
ইয়াকূবের অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’। যার অর্থ আল্লাহর দাস। তার গোত্রের নাম ছিল বনী-ইসরাঈল। তার বার জন পুত্র-সন্তানের কথা কোরাআনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইয়াকূবের ১২ পুত্রের মধ্যে ইউসুফ নবী হন। ইয়াকুব তার মামাতো বোন লাইয়া ও রাহীলকে একই দিনে বিবাহ করেন। ইয়াকূব (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ১০টি সূরায় ৫৭টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। ইসহাক্ব (আঃ)-এর দুই যমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূব-এর মধ্যে ছোট ছেলে ইয়াকূব নবী হন। ইয়াকুব নবী সব সময় মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করতেন। তিনি কখনও রেগে যেতেন না। চিৎকার করে কথা বলতেন না। নিজের দুঃখ কষ্ট সব সময় গোপন রাখতেন। নবী ইয়া কুব বলেন, আমি আমার দুঃখ ও বেদনার অভিযোগ ( তোমাদের কাছে নয়) কেবল আল্লাহর কাছেই করছি। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি যা জানি, তোমরা জান না।
আল্লাহ্ বলছেন, "“সে (ইয়াকুব) ছিলো আমার দেয়া শিক্ষায় জ্ঞানবান। কিন্তু অধিকাংশ লোক প্রকৃত সত্য জানে না।” (সূরা ইউসুফঃ আয়াত ৬৮)"। ইয়াকূবের অছিয়তে এটা প্রমাণিত হয় যে, সন্তানের জন্য দুনিয়াবী ধন-সম্পদ রেখে যাওয়ার চাইতে তাদেরকে ঈমানী সম্পদে সম্পদশালী হওয়ার অছিয়ত করে যাওয়াই হল দূরদর্শী পিতার প্রধানতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। নবীদের মধ্যে কেবল ইয়াকূব(আঃ) ও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর দুটি করে নাম ছিল। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অপর নাম ছিল ‘আহমাদ’। ইয়াকুব নবী সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। পোশাক বা খাবার নিয়ে তার কোনো বাড়াবাড়ি ছিলো না।
ইয়াকূব তার মামার বাড়ী ইরাকের হারান যাবার পথে রাত হয়ে গেলে একটি পাথরের উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। সে অবস্থায় স্বপ্ন দেখেন যে, একদল ফেরেশতা সেখান থেকে আসমানে উঠানামা করছে। এরি মধ্যে আল্লাহ তাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘অতিসত্ত্বর আমি তোমার উপরে বরকত নাযিল করব, তোমার সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করে দেব, তোমাকে ও তোমার পরে তোমার উত্তরসূরীদের এই মাটির মালিক করে দেব’। তিনি ঘুম থেকে উঠে খুশী মনে মানত করলেন, যদি নিরাপদে নিজ পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারেন, তাহ’লে এই স্থানে তিনি একটি ইবাদতখানা প্রতিষ্ঠা করবেন।
ইসহাক (আ.)-এর বংশধারা থেকে আল্লাহ একাধিক নবী প্রেরণ করেন।
তাঁদের ধারাক্রম এমন—ইয়াকুব (আ.)
ইউসুফ (আ.)
আইয়ুব (আ.)
জুলকিফল (আ.)
ইউনুস (আ.)
মুসা (আ.)
হারুন (আ.)
খিজির (আ.)
ইউশা ইবনে নুন (আ.)
ইলিয়াস (আ.)
দাউদ (আ.)
সোলাইমান (আ.)
জাকারিয়া (আ.)
ইয়াহইয়া (আ.)
ঈসা (আ.)।
এসব নবীর বেশির ভাগ বনি ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত হয়।
ইয়াকুব আ.-এর ইন্তেকালের পর তাঁর পবিত্র দেহ মমি করে রাখলেন এবং ফিলিস্তিনে নিয়ে গিয়ে সমাহিত করলেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৫০