আয়ারল্যান্ড উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। রাজধানী ডাবলিন যা আয়ারল্যান্ড দ্বীপের সর্ববৃহৎ শহর। ডাবলিন নগরী বেশ ছিমছাম, রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড়ও তেমন নেই। লন্ডনকে যেমন ব্যস্ত নগরী মনে হয়, ডাবলিন সে তুলনায় একেবারে শান্ত-সৌম্য। মানচিত্রে দেখতে লম্বাটে। উত্তর-দক্ষিণের দৈর্ঘ্য মাত্র ৪৬৫ কিলোমিটার এবং পাশে মাত্র ২৮৫ কিলোমিটার, বলা যায় বাংলাদেশের অর্ধেক। বড় শহর বলতে ডাবলিন, যেখানে জনসংখ্যা মাত্র ছয় লাখের মতো। ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ এবং পৃথিবীর বিশতম বৃহত্তম দ্বীপ। আইরিশ মানুষ কথোপকথন ভালবাসে এবং অন্যান্য মানুষের প্রতি তাদের প্রকৃত আগ্রহ আছে।
আয়ারল্যান্ড একটি ছোট্ট দেশ আয়তন মাত্র ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার। চার পাশে পানি উথাল-পাথাল করে। রয়েছে অসংখ্য পাহড়-পর্বত, বেশ কয়েকটি নদী এবং অনেক হ্রদ। দক্ষিণে ও পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর; আড়াই হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করলেই আমেরিকা। আইরিশরা প্রধানত ক্যাথলিক ক্রিশ্চিয়ান। এরা খুবই ভদ্র, নম্র ও অতিথিপরায়ণ। আয়ারল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৫০ লাখের কাছাকাছি। আয়ারল্যান্ডের প্রধান ক্রীড়া- সকার এবং রাগবি।
আলু আইরিশদের প্রধান খাদ্য। কত শত প্রকারের খাবার যে আলু দিয়ে তৈরি হয় তার সীমা নেই। আয়ারল্যান্ডের মাটি চাষবাসের জন্য খুব একটা উপযোগী নয়। পাথর আর কঙ্কর মিশ্রিত থাকায় ফসল ফলানো কঠিন। ১৮৪০-এর দশকে আয়ারল্যান্ডে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা। কয়েক বছর আলু ও অন্যান্য উৎপাদন মারাত্মক মার খায়। এক ধরনের রোগে আলু পচে যায়। খাদ্যাভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এতে প্রায় ১০ লাখ লোক মারা যায়।
আয়ারল্যান্ড আমাদের মতোই ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল দীর্ঘদিন। মাত্র ১৯২১ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। এদের রাষ্ট্রভাষা দুটো : ইংলিশ ও আইরিশ গ্যালিক। আইরিশদের জাতীয় পতাকার তিনটি রঙ; এর মধ্যে দুটো রঙ দুটো ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করে। সবুজ রঙ রোমান ক্যাথলিক এবং কমলা রঙটি প্রোটেস্ট্যান্টদের। সাদা রঙটি ঐক্যের প্রতীক। জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ, মৃদু শীত, ঠান্ডা গ্রীষ্ম, নিয়মিত আদ্রতা, অর্ধেক সময় মেঘাচ্ছন্ন।
আয়ারল্যান্ডের উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থা সুযোগ অনেক বিস্তৃত এবং চতুর্দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সেক্টর, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্র,শিক্ষার জন্য প্রাইভেট কলেজ ও স্বতন্ত্র কলেজ। প্রতিষ্ঠানগুলো যা প্রথম তিনটি গ্রুপের মধ্যে পড়ে, স্বায়ত্তশাসিত এবং স্ব নিয়ন্ত্রক, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রই তহবিল প্রদান করে। জ্ঞান বা বিদ্যা, নব্য ধ্রুপদী এবং নব্য গোথিক শৈলীতে ১৭, ১৮ এবং ১৯ শতকে নির্মিত মহিমান্বিত বাসগৃহ যেমন- কাসল ওয়ার্ড, কাসলটাউন হাউস, বেনট্রি হাউস ও পর্যটকদের আগ্রহের কারন।
আয়ারল্যান্ডের নারীদের ৩৬ শতাংশ পরকীয়ায় জড়িত।
রাতের আলোতে ডাবলিন শহরকে দিনের চেয়েও সুন্দর মনে হয়। আলো ঝলমল রাতের আঁধারে শত শত পর্যটক ক্যামেরা কাঁধে ঝুলিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করেন।
আয়ারল্যান্ডে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে গড়ে উঠছে একের পর এক মসজিদ। বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে ৫০ হাজারের মতো মুসলমান বসবাস করেন। যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ। তবে মুসলমানদের সংখ্যা ২০২০ সালে এক লাখে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। আয়ারল্যান্ডের প্রত্যেক শহরেই মসজিদ এবং মক্তব রয়েছে। সেখানকার মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পরে স্কুলে যেতে পারে। আয়ারল্যান্ডে রয়েছে ইসলামি পোশাকে প্রচুর চাহিদা। কিন্তু সেসব আমদানি করতে হয় বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে।
আয়ারল্যান্ডের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষার্থীদের জন্য প্রার্থনা কক্ষ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অগণিত ছাত্রছাত্রী আয়ারল্যান্ড গমন করে। আয়ারল্যান্ডে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করার আনুমানিক ব্যয় ১০ হাজার ৫০০ ইউরো থেকে ১৫ হাজার ১৫০ ইউরো। মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করতে আনুমানিক ব্যয় ৭ হাজার ৪০০ ইউরো থেকে ১৫ হাজার ৭২০ ইউরো পর্যন্ত লাগতে পারে।
সাহিত্যের জন্য ডাবলিন একেবারে অন্যরকম। খানকার সাহিত্য আসরগুলো শুড়িখানার মতো। সাহিত্য আর সুরায় এক অনবদ্য মিল যেখানে উপভোগ করার মতো। ‘ডাবলিন লিটারেরি পাব ক্রলে’ আপনি ঢুকে যেতে পারেন। পানশালা আর সাহিত্য এখানে একাকার। একেবারে আনন্দের মধ্য দিয়ে সাহিত্য। এই ডাবলিন শহরেই আসতেন জেমস জয়েসের মতো বিখ্যাত আইরিশ ঔপন্যাসিক ও কবি সাহিত্যিকরা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২৪