৯১। 'থিংস ফল অ্যাপার্ট' লেখক- চিনুয়া আচেবে। এককথায়, 'থিংস ফল অ্যাপার্ট' পুরো আফ্রিকার একটি micro চিত্র। সামাজিক, নৃ-তাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক—এ তিনটি দিক থেকে এ উপন্যাসটিকে বিবেচনা করা যায়। ওমোফিয়া গ্রামের ইবো জনগোষ্ঠীর সামাজিক জীবনধারাকে তুলে ধরেছে এ উপন্যাস। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আদিম এই সমাজ অপরিবর্তিত অবস্থায় চলে আসছে। ঐতিহ্যকে লালন করে অভ্যস্থ এই সমাজের সাথে বহির্বিশ্বের বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই। লেখক আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটসের 'দ্য সেকেন্ড কামিং' কবিতা থেকে ধার করে তাঁর উপন্যাসটির নাম দিয়েছিলেন 'থিংস ফল অ্যাপার্ট'।
৯২। 'ইউলিসিস' লেখক- জেমস জয়েস। ইউলিসিস-এর কাহিনী একটিমাত্র দিনকে ঘিরে। ১৯০৪ সালের ১৬ জুন। এই সাধারণ একটি দিনে এক সাধারণ নাগরিক লেওপোল্ড ব্লুম ডাবলিন শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান নানা কাজে। প্রাচীন গ্রিক কবি হোমার-এর রচিত মহাকাব্য ওডিসি-র সাথে উপন্যাসটির অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
৯৩। 'দ্যা প্রিন্স' লেখক- নিকোলো ম্যাকায়াভেলি। লেখকের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর বইটি প্রকাশ পায়। এই বইটির জন্য লেখকে অনেক বাজে কথা শুনতে হয়েছে। জারি করা হয় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা। রাজ-পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দায়ে তাকে বন্দি করা হয়, চলে অকথ্য অত্যাচার। শেষে তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয় শহর থেকে দূরের এক বাড়িতে। এই সময়ই মেকিয়াভেলি রচনা করেন ‘দ্য প্রিন্স’ নামক এক রাজনৈতিক প্রবন্ধ, তাতে বলা ছিল ক্ষমতা লাভের জন্য কোনো পন্থাই সেই অর্থে অনৈতিক নয়।
৯৪। 'জিপসি ব্যালাডস' লেখক- ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা। ম্যাঙ্গুয়েল বলেছিলেন, হায় রে, যা-ই পড়ি তা-ই দেখি ভানে ভরা, শুধু বোর্হেসেই কোনো ভান নেই; আর যে-দেশের যত বড় লেখকের লেখাই পড়ি না কেন, দেখি শুধু ‘লোকাল কালার’-এর ছড়াছড়ি; সবাই কোনো না কোনো জাতির বা দেশের লেখক, একমাত্র বোর্হেসই দেখছি ‘পৃথিবীর’ লেখক।
৯৫। 'অন্ধত্ব' লেখক- হোসে সারামাগো। সারা মাগো তার উপন্যাসে একটা অদ্ভুদ অন্ধত্বের কথা বলছেন সেটা হচ্ছে শ্বেত অন্ধত্ব। এটা হচ্ছে একটা ছোয়াচে রোগ। এমনিতে স্বাভাবিক অন্ধত্ব কোন সমস্যা নয়। কিন্তু সাদা অন্ধত্ব মারাত্মক এক রোগ। এরা যাকেই ছুয়ে দেয় সেই পরিণত হয় সাদা অন্ধে। সে সব কিছু শাদা দেখে। একটা শহরে সবাই এভাবে অন্ধ হতে থাকে। আর সেখানে সবাই মেতে উঠে লুটতরাজে, ধর্ষনে, হানাহানিতে। উপন্যাসের শুরুতে এরকম। রেড সিগনালে আটকা পড়া কয়েকটি গাড়ি। গ্রীন সিগনাল পড়ার সাথে না চলতে পারা এক চালক যে চিৎকার করে বলে আমি অন্ধ হয়ে গেছি। আমি সব শাদা দেখছি। তাকে বাড়ী পৌছে দেয় একজন লোক যে কিনা তার অন্ধত্বের সুযোগে গাড়ীটা চুরি করে নিয়ে যায় এবং সেও অন্ধ হয়ে যায় সবকিছু সাদা দেখতে থাকে।
৯৬। 'মসনবী' লেখক- জালালুদ্দিন রুমি। মসনবী শুধু ফার্সী সাহিত্য ভান্ডারে নয়। এটি বিশ্ব সাহিত্য ভান্ডারেরও একটি অমূল্য সম্পদ। মসনবী গ্রন্থে তিনি কাব্য আকারে বহু কাহিনী উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে। এগুলো প্রায় সবই মূল্যবান উপদেশাবলী। জালালুদ্দীন রূমীর মৌলিক দীক্ষা হল হৃদয় এবং মস্তিষ্কের একীকরণ।
৯৭। 'টারজানের গল্প' লেখক- এডগার রাইজ বারোজ। ১৯১৪ সালে এডগার রাইস বারোজের কলম থেকে টারজান সিরিজের প্রথম উপন্যাস 'টারজান অব দ্য এপস' প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এই চরিত্রটি।
৯৮। 'দ্য ভয়েজ অব দ্য বিগল' লেখক- ডারউইন। ১৮৩১-১৮৩৬ সময় কালে দক্ষিণ আমেরিকা, গালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ডে ফিরে বইটি লেখেন ডারউইন । বলা হয, এ ভ্রমনের পরই ডারউইন জীবজগৎ সম্পর্কে তার প্রচলিত ধারনা বদলে ফেলেন।
৯৯। 'গুডবাই কলোম্বাস' লেখক- ফিলিপ মিল্টন রথ। রথ তার সময়ের সবচেয়ে প্রশংসিত আলোচিত লেখক। তিনি দু-দু'বার ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। তিনবার পেয়েছেন ফকনার অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯৭ সালে লাভ করেন পুলিৎজার পুরস্কার। লেখক নিজের সম্পর্কে বলেন- আমি এমন একজন, যে কিনা সবসময় প্রাণরসে পূর্ণ হয়ে সে যা নয় তার দিকে নিজেকে পরিবর্তন করতে চায়। আমি ওই লোকের মতো যে সারা দিন শুধুই লেখালেখি করতে চায়।
১০০। 'আঙ্কেল টম’স কেবিন' লেখক- হ্যারিয়েট বিচার স্টো। এটি দাসপ্রথা নিয়ে বাস্তব ও ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। Josiah Henson নামক এক নিগ্রো দাসের রচিত The Life of Josiah Henson নামক আত্মজীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ও আংশিক অনুকরণেই মূলত হ্যারিয়েট বিচার স্টো এই বইটি রচনা করেন। এছাড়াও স্টো ম্যাডাম প্রচুর গবেষনা করে এই বইটি লিখেছিলেন। আবরাহাম লিংকন স্টোয়ের সাথে প্রথম সাক্ষাত করে সবার প্রথমে বলেন, তাহলে এই সে তরুনী যে যুদ্ধের সূত্রপাত করে! (দাসপ্রথার বিরুদ্ধে যুদ্ধ)। এই বইটি পড়তে দুইটি চোখ অশ্রুর জন্য বড্ড কম হয়ে যায়।
সাহিত্যিকদের সর্বশ্রেষ্ঠ দর্শন জমা থাকে একেকটি বইয়ে। যুগে যুগে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের বহু সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি হয়েছে। এসব সাহিত্যকর্মগুলোর ছোট কোনো তালিকা সঠিকভাবে করা আদৌ সম্ভব নয়। তবে কালজয়ী সাহিত্যকর্মের তালিকায় বারবার কয়েকটি বইয়ের নাম উঠে এসেছে। পাঠকপ্রিয়তার দিক থেকেও এই বইগুলোর আবেদন সময়কে জয় করেছে।