১। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি নিঃসন্দেহে হুমায়ূন আহমেদের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই মাপের একটি সৃষ্টিই একজন সাহিত্যিককে অমর করে রাখার জন্যে যথেষ্ট। এই উপন্যাসটি তার সময়ের সীমাকে অতিক্রম করেছে। এমনকি এই উপন্যাসের কিছু কিছু বিষয় শুধু বাঙালি জাতি বা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং যে কোন সমাজের জন্যেই সমানভাবে সত্য।
প্রথম পুরুষে লেখা উপন্যাস সব সময়ই পছন্দের। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলা সাহিত্যে এই ধরনের উপন্যাস খুব কমই পাওয়া যায়। ‘অচিনপুর’ নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে এই ঘরানার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। মহৎ সাহিত্যের রসাস্বাদনে আগ্রহী সকল পাঠকের জন্যেই এই উপন্যাসটি অবশ্যপাঠ্য।
২। পৃথিবীর পুরনো ও বিখ্যাত প্রায় সব বই এখন ইন্টারনেটেই পাওয়া যাচ্ছে। শুধু অনলাইনে বই পড়তে অভ্যস্ত হয়ে থাকলে আর কোন চিন্তা নেই। কষ্ট করে লাইব্রেরী গিয়ে সিরিয়াল দিয়ে লাইনে দাড়িয়ে বই নিতে হবে না। হতে পারে কোন গবেষণা করতে গিয়ে অথবা কৌতুহল বশত আপনার দু’শ বছর আগের কোনো বই দরকার। হতাশ হবেন না। বিশ্বের কোন বিখ্যাত পুরনো লাইব্রেরীতে খোজ করতে হবে না। দিন বদলে গেছে। গুগলে সার্চ দিন।
৩। "আমার লাইফটা একটু অন্যরকম। যেমন, আমরা দশ ভাইবোন৷ ছয় ভাই ও চার বোন। বাবা চাকরি করেন। বাবার চাকরির ওপর আমরা নির্ভরশীল। আমার একটা ভয় ছিল সবসময়। বাবা যদি ফট করে মারা যান, তখন আমাদের কী হবে? আমার বড় ভাই চিটাগংয়ে চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। মেঝো ভাই সিনেমায়। থার্ড ভাই বাড়িতে থাকেন না। আমি ফোর্থ ভাই। আমিও বাড়িতে থাকি না। আমার মা একদিন বললেন, 'তোর বাবা রাতে ঘুমান না। ছাদে পায়চারি করেন।' আমি একদিন ছাদে উঠে গিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'তুমি নাকি রাতে ঘুমাও না, কেন ঘুমাও না?' তিনি পায়চারি করতে করতেই বললেন, 'তা জেনে তোমার কী? তোমার কী?' ধমক খেয়ে চুপ করে গেলাম। মায়ের ঘরে ফিরে গিয়ে দেখি মা কাঁদছেন। আমি আবার ছাদে উঠে গিয়ে বাবার সাথে চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম। বাবা তখন বললেন, 'দেখ, আমার চারটে মেয়ে আছে, তোমরা আছ, আমি যদি মারা যাই তোমাদের কী হবে? এ চিন্তায় আমার ঘুম আসে না।' বলে বাবা কেঁদে ফেললেন। তাঁর যে শারীরিক অসুবিধা দেখা দিয়েছে তা কিন্তু বললেন না। বাবাকে এই প্রথম আমি কাঁদতে দেখলাম। আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। পরদিন থেকেই আমি কাজের খোঁজ শুরু করলাম। খোঁজ, খোঁজ আর খোঁজ।"
বলুন- কোন লেখকের কথা বলছি আমি ?
৪। ‘খালের ধারে প্রকাণ্ড বটগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়া হারু ঘোষ দাঁড়াইয়া ছিল। আকাশের দেবতা সেইখানে তাহার দিকে চাহিয়া কটাক্ষ করিলেন। …স্থানটিতে ওজনের ঝাঁজালো সামুদ্রিক গন্ধ ক্রমে মিলাইয়া আসিল। অদূরের ঝোপটির ভিতর হইতে কেয়ার সুমিষ্ট গন্ধ ছড়াইয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। …মরা শালিকের বাচ্চাটিকে মুখে করিয়া সামনে আসিয়া ছপ-ছপ করিয়া পার হইয়া যাওয়ার সময় একটা শিয়াল বার বার মুখ ফিরাইয়া হারুকে দেখিয়া গেল। ওরা টের পায়। কেমন করিয়া টের পায় কে জানে!’
বাংলা সাহিত্যে এমন সূচনার উপন্যাস আর নাই।এমন নির্লিপ্ত করে একটা মৃত্যুঘটনার বর্ণনার মাঝে কোথায় যেন একটু সূক্ষ্ম ব্যাঙ্গ আছে।বিশেষত আকাশের দেবতার কটাক্ষ করার ব্যাপারটা।এরপর একটি মৃত্যুকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন পশু পাখির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এবং সেই বোধটুকুও চমৎকার।
উপন্যাসটির নাম বলুন তো?
৫। আমাকে একটা বুদ্ধি দিন। আমি আমার স্ত্রীর জন্য বই পড়তে পারছি না। অফিস থেকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে বই হাতে নিই। কিন্তু আমার স্ত্রী রাজ্যের আজে বাজে ফালতু কথা শুরু করে। আমি বারবার বলি দয়া করে এখন বিরক্ত করো না- আমি বই পড়ছি। কিন্তু সে আমার কথা শুনে না। ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকে।
বই পড়া আমার জন্য দারুন আনন্দময় একটা ব্যাপার। কিন্তু আমার স্ত্রী বারবার ব্যাঘাত ঘটায়। তাকে বুঝিয়ে বলার পরেও বুঝে না। বরং বলে তুমি তো আমাকে সময়ই দিচ্ছো না। যখন আমাকে অতি মাত্রায় বিরক্ত করে তখন ইচ্ছা করে গলা টিপে ধরি। এদিকে প্রতিদিন কোনো না কোনো বই না পড়লে রাতে আমার ঘুমই আসে না। বউকে কিছু বললে, বউ থাকে গাল ফুলিয়ে থাকে- এই জন্য পড়ায় মনও দিতে পারি না।
৬। বইটির নাম হল “তবুও একদিন”। লেখক ‘সুমন্ত আসলাম’। এই প্রথম আমি এমন একটি চিন্তা ধারার বই পরলাম যা পড়ে মনে হল হুমায়ন আহমেদ বা মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর লেখনির প্লাটফর্মের বাইরে এমন অভিভূত করার মত লেখা আসলেই আছে, যা আমাদের আশে-পাশের ঘটে যাওয়া বর্তমান ঘটনাবলীর উপাদান বিদ্যমান আছে।
অসম্ভব রকম ভাল লেগেছে “তবুও একদিন” বইটি। এর কিছু মৌলিকত্ব আমার অত্যান্ত ভাল লেগেছে। পারলে আপনারাও এই বইটি একটু সময় নষ্ট করে পড়ে ফেলুন। ভালো লাগবেই।
৭। হুমায়ূন আহমেদের এমন কোনো বই নেই যা আমি পড়িনি। বরং প্রতিটা বই এক'শো বার-দুই'শো বার করে পড়া। এখনও প্রতিটা দিন হুমায়ূন আহমেদের কোনো না কোনো বই পড়ি। বারবার পড়ি, প্রতিদিন পড়ি। একটুও বিরক্ত লাগে না। যে কোনো বইয়ের কাহিনী আমি নিমেষেই বলে দিতে পারি। যে কোনো চরিত্রের নাম বলতেও আমার এক মুহূর্ত সময় লাগে না। এজন্য আমি অনেক গর্বিত।