এই পোষ্ট প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই একটি কলমের শেষ ইচ্ছাটুকুর করুণ মৃত্যু ঘটলো! কলমের এই করুণ পরিণতির জন্য পোষ্টের লেখক কোন ভাবেই দায়ী নন। ডিজিটাল যুগের ডিজিটালায়নই একমাত্র দায়ী!
''
''
''
আমি একটি কলম। আমার সম্পর্কে জানে না এমন মানুষ দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। আমি প্রধানত লেখালেখির কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকি। বলপয়েন্ট কলম, ঝর্ণা কলম (ফাউন্টেন পেন), ফেল্ট-টিপ কলম, জেল কলম, পালকের কলম (কুইল), খাগের কলম ইত্যাদি হচ্ছে আমার প্রকারভেদ। অফিস আদালত, বিদ্যালয়ে লেখালেখির কাজ থেকে শুরু করে কবির কবিতা সৃষ্টিতেও আমার অনবদ্য অবদান আছে। শুধু লেখালেখি নয় বিনোদনমূলক কাজেও আমাকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাকে নিয়ে স্কুলের ছোট ছোট ছেলেরা কলম-কলম খেলে মজা পায়। একজন আরেকজনের গায়ে কলম দিয়ে আঁচড় কেটে খেলা করে।
রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে এই পোষ্টের ফালতু লেখক পর্যন্ত আমাকে দিয়ে অনেক লেখালেখি করেছে!
ইদানীং আমি খেয়াল করে দেখছি কেউ আর আমাকে আগের মতো ব্যবহার করে না। আমার ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই ক্ষোভে ভরা কিছু কথা বলার জন্য আপনাদের সামনে এসেছি।
আজ এই ডিজিটালায়নের যুগে সাহিত্য থেকে শুরু করে বিদ্যালয়গুলোতে পর্যন্ত আমার ব্যবহার অনেকাংশে কমে এসেছে। আমাকে দিয়ে আগের মতো কোন কবি রাত জেগে কবিতা রচনা করে না। আমাকে দিয়ে আগের মতো কোন গল্পকার গল্প রচনা করে না। আমাকে এখন আর সুন্দর করে সবাই সাজিয়েও রাখে না। সবাই এখন কিবোর্ড নামক যন্ত্র দ্বারা নিজের কাজ চালিয়ে নেয়। অথচ এই আমি জন্ম দিয়েছি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশের মতো অনেক লেখককে। তাদের প্রতিভাকে তুলে ধরেছি বিশ্ব মানচিত্রে।
আজকে যারা কিবোর্ড নামক যন্ত্রে অবস্ত হয়ে পড়েছে তারা কি ভুলে গেছে যে আমাকে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি কাব্য রচনা করে নোবেল পেয়েছেন? তারা কি ভুলে গেছে আমাকে দিয়ে বাংলা সাহিত্যের তরুন কবি সুকান্ত তার ২১ বছরের জীবনে ছাড়পত্র, পূর্বাভাস, মিঠেকড়া, অভিযান ইত্যাদি কাব্য রচনা করেছেন?
কিবোর্ড নামক হারামজাদাটার জন্য এখন আর আমাকে সযত্নে রাখার জন্য কেউ কলম দানিও কেনে না। যারা আমাকে ভুলতে বসেছে তাদের কাছে একটি প্রশ্নঃ
কিবোর্ড দিয়ে সাহিত্য চর্চা করে সত্যি কি আপনারা আনন্দ পান ?
এরা সবাই হয়তো আস্তে আস্তে আমাকে ভুলতে বসেছে। বিদ্রোহী কবিতার ঐ বিদ্রোহী ব্যাক্তিটি বেঁচে থাকলে আমাকে হয়তোবা ভুলতো না। হয়তো সে আমার পক্ষ নিয়ে আমাকে নিয়েই আরেকটি কলম বিদ্রোহের কাহিনীর সূচনা করতো।
জীবনে শেষ একটা ইচ্ছা ছিল যে অন্তত আমার আত্মকথাটুকু আমাকে সাথে নিয়েই কেউ লিখবে। সেই ইচ্ছাটুকুও আজ এই পোষ্টের সাথে মাঠে মারা যাবে! আমার আত্মকথাটুকুও পর্যন্ত মানুষ আমাকে সাথে নিয়ে লিখলো না এতো জীবন এতো সাহিত্য, এতো আনন্দ মানুষকে দিলাম আর সেই মানুষেরা আমার ছোট্ট আব্দারটাও রাখলো না ? আমার নিজের কথা, আমার মনের কথাটুকুও শেষ পর্যন্ত কিবোর্ড দিয়ে লেখা হলো ? আমার দিন মনে হয়ে ফুরিয়ে এসেছে। এই পৃথিবী থেকে যেকোন মুহূর্তে বিদায় নিতে পারি আমি। আমি বিদায় নিলেও আমার কীর্তি এই ধরণীতেই থাকবে। আমাকে দিয়ে এই পৃথিবীতে যা কিছু লেখা হয়েছে তা আমার সাক্ষী হয়ে এই পৃথিবীর বুকেই থাকবে। কেউ তা মুছতে পারবে না কেউ না!