ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি জ্বলছে! এই বাড়িটি জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কী অর্জন হলো? এই অর্থহীন ধ্বংসাত্মক কাজ কি আমাদের জীবনের নিরাপত্তা, সুশাসন, বৈষম্যহীন সমাজ বা জনজীবনে কোনো প্রকার স্বস্তি এনেছে? এটা বরং ইঙ্গিত করে যে আমাদের সমাজে হুজুগেপনা ও উগ্রতাকে এখন বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
দেশের সাধারণ মানুষ একাত্ম হয়ে, রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে যে স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছিল, সেই গণমানুষের প্রতি যদি আমাদের দায়বদ্ধতা থাকে, তাহলে আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যা গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করার পরিবর্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আগুন জ্বালানো সহজ, কিন্তু তা নেভানো এবং সেই শক্তিকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা অনেক কঠিন। অথচ আজ আমরা দেখছি, অকারণে, অপ্রয়োজনে আগুন জ্বালানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে সুরসুরি দেওয়া ছাড়া এর আর কোন ভূমিকা আছে বলে আমার মনে হয় না।
বাস্তবতা হলো, এই ইসলামিস্টদের তৎপরতা যত বাড়বে, স্বৈরাচারী শক্তি তত বেশি শক্তিশালী হবে। ইসলামিস্টদের অসহিষ্ণুতা স্বৈরাচারীদের ফিরে আসার পথকে প্রশস্ত করবে। এই সুরসুরি ইসলামিস্টদের জঞ্জাল বাড়াবে মাত্র। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিবর্তে যদি অসহিষ্ণুতা, বিভাজন এবং ঘৃণা আমাদের জনপ্রিয়তার কৌশল হয়, তবে এই ঘৃণার উপর ন্যায় ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারবে না।
ঘৃণা, প্রতিহিংসা এবং মধ্যযুগীয় চিন্তা-চেতনা আমাদের সমাজকে বহু পিছিয়ে দিয়েছে। আদতে এই কাজগুলো ফ্যাসিস্টদের ফিরে আসার পথকে প্রশস্ত করবে। ইসলামিস্টদের সুরসুরি দেওয়ার রাষ্ট্রীয় আজ্ঞার অর্থ আসলে বিগত স্বৈরাচারীকেই গোপনে আমন্ত্রণ জানানো। কারণ, এক্ষেত্রে ইসলামিস্টদের অপতৎপরতা আর ফ্যাসিস্টদের উদ্দেশ্য একই সূত্রে গাঁথা। ফ্যাসিস্টরা চাইবে যে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো আরো ধ্বংসাত্মক কাজে ইসলামিস্টরা উৎসাহিত হোক, যাতে তারা পুনরায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:২৬