পোস্টটিকে স্টিকি করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে সবাই সুচিন্তিত মতামত প্রদানপূর্বক টেক্সটিকে আরো ভারী করে তুলতে পারে। যদিও সেটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতোই একটি বিষয়।
টাকা উৎপত্তির আদি ইতিহাস অনেকটা জানা গেলেও হালে কিভাবে বাজারে জনগণের হাতে থাকা মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, নতুন মুদ্রা ছাড়া হয়, পুরাতন মুদ্রার ব্যবস্থাপনা কি হয়, বা মুদ্রা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে রয়েছে। সরকারী প্রকাশনাও নাই বললেও চলে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের অভিভাবক মূলতঃ বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়। সুতরাং এই সেক্টরের যাবতীয় সংকটের দায়ভার এই প্রতিষ্ঠানসমূহ কখনোই এড়াতে পারে না। যদিও সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া হজম করা বা সমাধানের মানসিকতা সবসময়ই অপ্রতুল। এই খাতে স্বাধীণতাত্তোর সময়ে নতুন সংযোজন বলতে কিছু সফটওয়্যার এবং মোবাইল/এজেন্ট গেটওয়ের আবির্ভাব ঘটেছে যা এখনো বিকাশমান। এটা যুগের দাবী। তাই অনেকটা বাধ্যগত হয়েই বাস্তবায়িত হচ্ছে। নিম্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংকট সমাধানের উপায় উল্লেখ করা হলোঃ
• বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো/এলজিআরডি এর ওয়েবসাইটে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডেমোগ্রাফিক ডাটা সহজলভ্য করতে হবে যাতে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনানুসারে কাঙ্ক্ষিত তথ্য ব্যবহার করতে পারে।
• বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক যত্রতত্র শাখা খোলার ব্যাপারে সতর্ক হয়ে দেশব্যাপী আঞ্চলিক কৌশলগত নেটওয়ার্কিং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে একটি শৃংখলা জাল তৈরি সম্ভব হবে এবং আঞ্চলিক চাহিদা মিটবে।
• সরকারী সনদ/প্রমাণপত্র হিসাবে প্রদানকৃত ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র/চেয়ারম্যান সনদ/জন্ম সনদ/আয়কর বিবরণী/ট্রেড/ড্রাগ/বিস্ফোরক/অন্যান্য লাইসেন্স/ভ জমির খতিয়ান, দলিল বা মালিকানাসত্ত্বের রেকর্ড ইত্যাদি অনতিবিলম্বে ডিজিটাল করতে হবে। মৌজা অনুসারে জমির GPS Reading অর্থাৎ অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ সহকারে মর্গেজকৃত অবস্থায় রয়েছে কিনা বা লিজকৃত কিনা ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশিত করতে হবে। মানচিত্রে এসব চৌহদ্দি প্লটিং করতে হবে। বর্তমান প্রিন্টেড ভার্সনে এসবে উল্লেখিত ব্যক্তি/বর্গ/জমির চৌহদ্দি যথোপযুক্তভাবে সনাক্ত করা মুশকিল হয়ে পড়ে। এসব সনদ প্রমানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্বশরীরে যাচাই/তল্লাশী করার প্রয়োজন পড়ে। এত বিপুল পরিমাণ তথ্য যাচাই করার সময় ব্যাংকের থাকে না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রেজিস্টারে সুস্পষ্ট এন্ট্রি পাওয়া যায় না। বিভিন্ন লাইসেন্স/সনদ দালালদের মাধ্যমে হুবহু নকল করে জালিয়াতি করা হয়। তল্লাশীর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে গেলে গুরুত্ব দেয়া হয় না অথচ ভূমি অফিস বা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সরবরাহকৃত তথ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সামাণ্য ভুলের জন্য ব্যাংককে বিরাট মাসুল দিতে হয়।
• তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীণে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজে প্রত্যেক নাগরিক/ব্যক্তির জন্য একটি করে একক সনাক্তকারী নাম্বার (Personal Identification Number: PIN) প্রদানপূর্বক প্রকার সনদ, লাইসেন্সিং, সম্পত্তির মালিকানা বা অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণপূর্বক তা সর্বত্র ব্যবহারের প্রচলন করতে হবে। এক্ষেত্রে পাঞ্চযোগ্য/মেশিন রিডাবল (Personal Identification Card: PIC) চালু করা সম্ভব। যেহেতু এগুলো পাবলিক ইনফরমেশন সেহেতু গোপনীয়তা ভঙ্গের অযুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। জন্ম সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে তা প্রদানের সময়ই ডিজিটালি এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা সম্ভব। সাধারণতঃ ০৬ মাসের অনধিক কালের ছবি গ্রহণযোগ্য। গ্রাহক কর্তৃক সরবরাহকৃত ছবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেক পুরাতন হয়ে থাকে। জীবনচক্রে মানুষের চেহারা অনেকবার পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই ৩ বছর পরপর পিনহোল্ডারদের ছবি ডাটাবেজে আপডেট করতে হবে যাতে ক্রমপরিবর্তন এবং সর্বশেষ চেহারা সনাক্ত করা যায়। একই সাথে অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য (ফিঙ্গারপ্রিন্ট/রেটিনা স্ক্যান/ডিএনএ কোড ইত্যাদি) সংযুক্ত করতে হবে। পর্দানশীল মহিলাদের হিসাব খোলার ক্ষেত্রে চেহারা দেখানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। এর জন্য গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এতে শুধু ব্যাংক নয়, দেশে-বিদেশে যেকোন পর্যায়ে পিনটি নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা যাবে। এতে ক্রিমিনাল ও জালিয়াতির কেস অনেক কমে যাবে।
• এই পিনের সঙ্গে বর্তমানে চালমান CIB Dbase টিকে সংযুক্ত করতে হবে। যেহেতু বর্তমান জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদ বা পাসপোর্ট নাম্বার হুবহু না মিললে (Exact Match) এখান থেকে তথ্য পাওয়া যায় না সুতরাং ইউনিক পিনে সংযুক্ত করা যুক্তিযুক্ত। বর্তমানে এখানে টাকার পরিমাণ এবং অন্যান্য তথ্য পাওয়া যায় যার বেশিরভাগই ভুলে ভরা এবং হালনাগাদ নয়। ভুল সংশোধন বাংলাদেশ ব্যাংকের একক এখতিয়ার বলে সহজে ভুলও সংযোজন হয়ে উঠে না। কেননা এটি দীর্ঘ মেয়াদী জটিল প্রক্রিয়ার বিষয়। যারা এন্ট্রি দিচ্ছে তাদেরকেই সংশোধনের ক্ষমতা দেয়া যেতে পারে। কেননা কখন, কে ডাটাবেজ ব্যবহার করছে তার হালনাগাদ তথ্য যেকোন সময়েই পাওয়া যায়। ফলশ্রুতিতে, স্থানীয়ভাবে শাখাকে গোপনীয় মতামত সংগ্রহ করতে হয়। যদি তথ্যই দেবেন কেন পূর্ণাঙ্গ নয় এবং তা যদি ব্যাংকই হয়ে থাকে। এটি স্ববিরোধী ণীতির বহিঃপ্রকাশ। এছাড়াও প্রধান কার্যালয় হতে CIB Report সংগ্রহ করতে গিয়ে বিলম্ব হয় যা ঋণ প্রদান প্রক্রিয়াকে ধীর গতি করে দেয়। ঋণ নিয়ে দেশ ত্যাগ করার প্রবণতা এদেশে নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার। ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে এবং দূতাবাস ও ইমিগ্রেশন বিভাগে পূর্ণ এই ডাটাবেজের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে ঋণ খেলাপীর সংখ্যা অনেক কমে যাবে। বহিঃগমনের ক্ষেত্রে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ঋণপ্রদানকারী ব্যাংক কর্তৃক No Objection Certificate- NOC সরবরাহ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
• NBR এর ট্যাক্স ইনফরমেশন ডাটাবেজ তৈরি করে তা কেন্দ্রীয় ডাটাবেজে সংযুক্ত করতে হবে। ট্যাক্স প্রদান/বাকী সম্পর্কিত তথ্য ব্যাংক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে ব্যবহার করতে দিতে হবে যাতে NBR এর সহযোগী হিসাবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারে।
• সারা দেশের সকল ব্যাংকের সকল শাখাকে একটি সফটওয়্যার বা বিকল্প ব্যবস্থার মধ্যে আনতে হবে যাতে ইন্টার ব্যাংক রিয়েল টাইম ট্রানজেকশন সম্ভব হয়। যদিও বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরীক্ষাধীন রয়েছে তবুও এর ভবিষ্যত গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত চালু করার জন্য অনুরোধ করছি। প্রস্তাবিত PIN দিয়ে যে কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হবে এবং একটিমাত্র একাউন্ট দিয়ে যে কোন ব্যাংকে লেনদেন করা যাবে। SMS/E-MAIL এ লেনদেনের তাৎক্ষনিক বার্তা প্রেরন করা হবে। Mobile Apps তৈরি করতে হবে এবং Internet Banking এর সুবিধা প্রদান করতে হবে। এতে নিজেই করি নিজের ব্যাংকিং ধারণাটি বাস্তবায়িত হবে। বিষয়টি উন্নত বিশ্বে চালু রয়েছে। এটি করা গেলে স্টেটমেন্ট নিয়ে হাউকাউ বন্ধ করা যাবে এবং সৃজনশীল ও দরকারী কাজে BB সময় দিতে পারবে।
• বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় ATM/POS/MOBILE BANKING অর্থাৎ অল্টারনেটিভ পেমেন্ট সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে। প্রতিটি ব্যাংক নিজস্ব চ্যানেল তৈরি করতে গেলে তালগোল পাকিয়ে যাবে। যেমন এটিম বুথ একই স্থানে যদি ৫টি ব্যাংক চালু করে তাহলে বুঝুন কি অবস্থা হবে। খালি বুথ আর বুথ। প্রয়োজন কি! BB মাস্টার প্লানের আওতায় সারা দেশে এটিম বুথ নেটওয়ার্ক বসাক। সব ব্যাংক কমিশন দিয়ে সেই বুথ ব্যবাহর করবে। পারফেক্ট ইউটিলাইজেশন সম্ভব হবে। একই রকম সেবা নিয়ে সবাই মোবাইল ব্যাংকিং চালু করছে যেখানে গ্রাহককে আলাদা আলাদা মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলতে হচ্ছে। এর কোন প্রয়োজন দেখি না। ব্যাংক একাউন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোবাইল নাম্বারটি নির্দেশনা না থাকলে বাই ডিফল্ট এক্টিভেট হয়ে যাবে। এর জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। মাস্টারকার্ড/ভিসার দরকার নাই। BB সৃষ্ট নিজস্ব নেটওয়ার্কের মধ্যে ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে কেনাকাটা করা সম্ভব। এখান থেকেও BB কমিশন আয় করতে পারে।
• CIB এর অনুসরণে BB পরিকল্পিত ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্ণীতি রিপোর্টিং এর ব্যবস্থা করা হলে এবং চাকুরীক্ষেত্রে (পদোন্নতি/নতুন ব্যাংকে যোগদান) এই রিপোর্ট দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হলে দুর্ণীতি অনেক কমে আসবে। পাশাপাশি এদেশের ব্যাংকিং পেশাকে আন্তজার্তিক সমতুল্যতা স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ব্যাংকাররা অভিবাসনের সুযোগ গ্রহন করতে পারে। এতে আন্তজার্তিক পরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা দেশীয় প্রেক্ষিতে প্রয়োগ করার সুযোগ থাকে। গভার্নি বডি হিসাবে ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনকে দাঁড়া করাতে হবে এবং সকল ব্যাংকারকে পেশাগত সদস্যপদ প্রদান করতে হবে যাতে পেশাদারীত্ব এবং কোয়ালিটি নিশ্চিত করা যায়। ব্যাংকিং ডিপ্লোমার মান আন্তজার্তিক পর্যায়ে ঢেলে সাজাতে হবে এবং অনলাইনে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
• মানি-লন্ডারিং প্রতিরোধের জন্য GoAML সফটওয়্যারটিকে আরো গণমুখী ও কার্যকর করতে হবে।
• ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশকে ব্যাংকিং খাতে কার্যকর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে গবেষণাপূর্বক নতুন নতুন পন্থা প্রয়োগ করতে হবে এবং ণীতি নির্ধারণী বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে উপদেস্টার ভূমিকা পালন করতে হবে। খোদ ভারতেই ইন্ডিয়ান ব্যাংকার্স এসোসিয়েসন যথেস্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে এবং স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া তাদের মতামতের প্রেক্ষিতে ণীতি নির্ধারণ করার চেস্টা করে।
• শাখা পর্যায়ে ণ্যূনতম একজন এডভোকেটকে নিয়মিত বেতনভূক্ত হিসাবে /অন্য কোন চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে যাতে সে গভীর মনোযোগের সাথে দলিলপত্রের আইনি বৈধতা যাচাই-বাচাই করতে পারে। বর্তমানে ব্যাংক কর্মকর্তার হাত হয়ে প্যানেল ল’ইয়ারদ্বারা এসব কাজ সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এ পর্যায়ে ব্যাংকারকে কাজ করতে হলে প্রচুর ট্রেনিং, সময় ও অভিজ্ঞতার দরকার পড়ে। এডভোকেটদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে অনেক আইনি জটিলতার জন্ম হয় যা তৎক্ষণাৎ ধরা পড়ে না।
• ডিজিটালাইজড হলে মঞ্জুরী পরবর্তী সময়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে ঋণ বিতরণ/স্থগিত/বন্ধ/নবায়ন ইত্যাদি কাজ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এতে শাখা পর্যায়ে ঘটতে পারে এমন অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে এবং শাখাও দায়মুক্ত থাকতে পারবে।
• প্রকৃতপক্ষে ঋণ খেলাপীর তখনই জন্ম হয় যখন তাকে সঠিকভাবে সনাক্ত করা না যায় বা অতিরিক্ত অর্থায়ন করা হয়। এখানেও রাষ্ট্রীয় অদক্ষতা এবং উদাসীনতার কারণেই পরোক্ষভাবে ঋণ খেলাপীর জন্ম হচ্ছে। কোম্পানীর ক্ষেত্রে RJSC এর নিকট IFRS (IAS) মেনে বাধ্যতামূলকভাবে অডিটেড বাৎসরিক হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার বিধান রয়েছে কিন্তু SME খাতে অর্থায়নের মূল সমস্যাই হচ্ছে সঠিক আর্থিক বিবরণীর অনুপস্থিতি। যেহেতু ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ অর্থায়নের জন্য বিবেচ্য সিংহভাগ সিদ্ধান্তই সরবরাহকৃত আর্থিক বিবরণীর ভিত্তিতে নিয়ে থাকে সেহেতু ভুল ও অতিরঞ্জিত আর্থিক বিবরণীর ভিত্তিতে প্রস্তুত বিশ্লেষণও ভুল। এক্ষেত্রে ইচ্ছামতো ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী ব্যাংক কর্মকর্তা কর্তৃক আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। এতে দুর্ণীতির যথেষ্ট সুযোগ থেকে যায়। এর ফলে ণীতি নির্ধারকরা অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক বা MoFA বা এসএমই ফাউন্ডেশনসহ যেকেউ ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে পাওয়া নানারকমের গাণিতিক অনুমানে উপনীত হচ্ছেন যেখানে প্রকৃত দৃশ্যপট অনুপস্থিত। সর্ষের ভিতরই ভূত থাকলে সমস্যাটি দীর্ঘমেয়াদি সংকট তৈরি করবে। কেবল যদি সঠিক আর্থিক বিবরণী উপযুক্ত প্রামাণিকরণের মাধ্যমে সরবরাহ করা যায় তবে এসএমই খাতে ঋণ খেলাপী বা অনিয়মিত ঋণের সংখ্যা ৯০% এরও বেশি কমে আসবে। এলক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারীভাবে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট/ক্রেডিট কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে কিছু বেসরকারী বিজনেস কনসাল্টেসি সার্ভিস কোম্পানীর লাইসেন্স দেয়া যেতে পারে। এরা যান্মাষিক ভিত্তিতে কাউন্সিল নির্ধারিত এসএমই উদ্যোগের (খুচরা ও পাইকারী পণ্য বিক্রেতা/সেবা প্রদানকারী/উৎপাদনকারী) আর্থিক বিবরণী অডিট করে কাউন্সিলে জমা দেবে এবং কাউন্সিল সত্যায়নকৃত একটি কপি গ্রাহককে সরবরাহ করবে। কাউন্সিল স্থানীয় প্রতিটি ব্যবসার এসব তথ্য ধারণ করবে এবং ব্যাংক তাদের ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি আর্থিক বিবরণী সংগ্রহ করতে পারবে। পক্ষপাতদুষ্টতা বা অনিয়মের জন্য অডিটকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। যেহেতু এসএমই খাতে অধিক তত্ত্বাবধান ও নিবিড় পরিচর্যার দরকার পড়ে সেহেতু এই প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক দিক-নির্দেশনা/কনসাল্টেসিও প্রদান করতে পারবে। তাছাড়া কাউন্সিল জেলা পর্যায়ে বিশেষ বিশেষ এসএমই খাত ধরে তাতে আদর্শ আনুপাতিক মানদন্ড বা বেঞ্চমার্ক তৈরি করবে যার মাধ্যমে আর্থিক বিবরণী ও কারবারের কর্মকান্ডকে সহজেই অন্যন্য উদ্যোগের সাথে তুলণামূলক বিশ্লেষণ করা যাবে। এতে এসএমই খাতের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিও অনেক বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি। এরকম প্রতিষ্ঠানের উদাহারণ খোদ আমেরিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলেই রয়েছে। এসএমই খাতকে অবহেলা করার মোটেও সুযোগ নেই। কারণ এদেশের বেশিরভাগ ব্যবসাই এসএমই নির্ভর। বর্তমানে আর্থিক বিবরণী ও উদ্যোক্তা জ্ঞানের উপর বিসিক এর কিছু প্রশিক্ষণ কর্মশালা চোখে পড়ছে তবে কর্মশালার পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং ফি কমাতে হবে। এটাকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিস্তৃত করতে হবে।
• ঋণ সীমা ১.০ কোটি টাকার উর্দ্ধে গেলে ক্রেডিট রেটিং করানোর বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। রেটিং কোম্পানীগুলো ১.০ কোটি টাকার ঋণের রেটিং করতে ২৫-৪০ হাজার টাকা নিচ্ছে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলতে কিছুই থাকে না এমনকি নিজেরা সরেজমিন পরিদর্শন না করেই রেটিং প্রতিবেদন জমা দেয়। আর রিপোর্ট জুড়ে যা থাকে তাতে ব্যাংক সরবরাহকৃত আর্থিক বিবরণীর কয়েকটা অনুপাতের বিশ্লেষণই Pz¤^K অংশ। এটা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রতিটি ব্যাংককে একটি ইউনিক সফটওয়্যার সরবরাহ করলেই হয়ে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত ক্রেডিট রিস্ক গ্রেডিং(CRG) অনুসরণ করার পরেও কেন আলাদা কোম্পানী কর্তৃক রিস্ক রেটিং করাতে হবে তা আমার বোধগম্য নয়। অতি নিরাপত্তাবোধের জন্য হয়তো তবে এই লিমিট ১.০ কোটি থেকে আরো বাড়ানো (১০ কোটির উর্ধ্বে) এবং রেটিং ফি কমানো উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ এসএমই খাতে ঋণ দিয়ে ঋণী ব্যক্তির খামোখা টাকা নষ্ট করার কোন মানে হয় না।
• এসএমই খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যদি সুদ না কমানো হয় তাহলে কাঙ্খিত অগ্রগতি সম্ভব হবে না। কারণ, অগ্রগতির ফল কুমির খেয়ে ফেলবে।
• ক্রেডিট কার্ড সাধারণতঃ নিম্ন আয়ের চাকুরীজীবিদের টার্গেট করে তৈরি করা একটি মারণাস্ত্র। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কেউই অপমানিত হতে চায় না। ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার কমানো, বিভিন্ন রকম ফি ও হিডেন চার্জ আরোপের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং পুর্ণাঙ্গ ণীতিমালা প্রকাশ করতে হবে যা অদ্যাবধি করা হয়নি।
• চাকুরীজীবিদের বিশাল অংশ বরাবরই রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে অবহেলিত হয়ে আসছে। এদেরকেও ব্যাংক বিনিয়োগের চমৎকার জায়গা বলা যায় এই কারণে যে, দীর্র্ঘদিনের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সাধারণতঃ এই সব চাকুরীজীবিরা ঋণ গ্রাহক হিসাবে খুবই ভালো। এদের জন্য নমণীয় শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে চাকুরীর পাশাপাশি তারা বিকল্প অর্থ উপার্জনের মাধ্যম তৈরি করতে পারে। বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নিম্ন আয়ের চাকুরীজীবিদের জন্য উচ্চ সুদের (১৫-২২%) পারসোনাল লোন/চাকুরীজীবি লোন চালু রয়েছে। এই ঋণের সুদের টাকা বহন করতে করতেই একজন চাকুরীজীবির কস্টের সীমা থাকে না। সাংসারিক যে কোন খরচই যেহেতু তার মাসিক বেতনের উপর চাপ দেয় সেহেতু এই ঋণের ক্ষেত্রে শ্রেণিকরণ একটু শিথীল করা এবং কিস্তির পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
• কৃষি ঋণ বিতরণের জন্য খাতবিশেষে বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে। এ জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগ কর্তৃক ব্যাংককে তড়িৎ সহযোগীতা প্রদানে প্রস্তুত থাকতে হবে। ব্যাংকারদের জন্য ঋণ বিতরণ উপযোগী করে খাতওয়ারী (মুরগী পালন, মৎস চাষ ইত্যাদি ) বিশেষ বুক সিরিজ প্রকাশ করেও এক্ষেত্রে কার্য সম্পাদন করা যেতে পারে।
• ঋণ প্রক্রিয়াকরণ, ডকুমেন্টেশন এবং রিকোভারী- তিনটি বিভাগকে আলাদা রাখার নির্দেশনা থাকলেও বেশিরভাগ শাখাতেই কর্মী স্বল্পতার কারণে তা বাস্তবায়ন হয় না। এটি জোরালোভাবে মনিটর করা দরকার। এতে অনেক অনিয়ম, দুর্ণীতি ও ভ্রান্তি এড়ানো সম্ভব হবে।
• প্রধান কার্যালয় কর্তৃক মঞ্জুরীকৃত ঋণের প্রাথমিক প্রস্তাবনার সাথে সংযুক্ত দলিলপত্রে ভুল/অসঙ্গতি থাকলে এবং সেজন্য ঋণ ডিফল্ট হলে পর্যালোচনাকারী এবং মঞ্জুরকারী হিসাবে তাদেরকেও দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে।
• শাখা থেকে জমি/সম্পত্তি সরেজমিন পরিদর্শনের ক্ষেত্রে ভিডিও রেকর্ডকৃত ক্লিপ ফাইলের সাথে সংরক্ষণ করতে হবে এবং ঋণ মঞ্জুরীর ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষন করতে হবে।
• এলসি সম্পর্কিত লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রোফর্মা ইনভয়েস এর সঠিকতা যাচাইয়ের সহজতর পন্থা তৈরি করতে হবে।
• কাস্টমস্ বিভাগে মাল পৌঁছানোর সাথে সাথে ডাটাবেজে এন্ট্রি দিতে হবে যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে।
• শাখা পর্যায়ে ঋণ রিকোভারীর জন্য সংশ্লিষ্টদের বিশেষ ইন্সেন্টিভ/রিওয়ার্ড দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
• শাখায়/প্রধান কার্যালয় কর্তৃক নিয়মিতভাবে সিসি ক্যামেরার ব্যাকআপ নিতে হবে এবং শাখার নিকটবর্তী বসবাসকারীদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা, ম্যাপ ইত্যাদি স্থানীয় পুলিশ কর্তৃক সংগ্রহ করে থানায় সংরক্ষণ করতে হবে। পরিবর্তিত তথ্য মালিককর্তৃক আপডেট করার বাধ্যকতা থাকবে। সরাসরি থানা/ফাড়িঁর সাথে পাগলা ঘন্টির একটি সংযোগ স্থাপন করতে হবে।
• ব্যাংকারদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই বৈধ উপায়ে ঋণ না পেয়ে অসাধু ও বখাটে গ্রাহকেরা মারমুখী হয়ে উঠে এবং ব্যাংকারকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। ভল্ট কি-হোল্ডারদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি ভাতার প্রবর্তন করতে হবে কেননা যে কোন বিপদজনক পরিস্থিতিতেও কি-হোল্ডারদেরকে শাখায় চাবিসহ উপস্থিত হতে হয়।
• কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বদলী/পোস্টিং এর ক্ষেত্রে তাদের সুবিধাজনক/নিকটবর্তী স্থানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এতে ব্যাংক তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ পারর্ফমেন্স পেতে পারে। তাছাড়াও তাদের লিভিং কস্ট কমিয়ে কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে পারবে।
• শাখা পর্যায়ে আবশ্যকীয় কিছু বইপত্রের সংগ্রহশালা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ব্যাংকিং কর্মকান্ড সম্পর্কিত আইন-কানুন প্রয়োজন হলে খুঁজে পাওয়া যায়।
• IBB, BB এবং অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে Skill Update Book Series প্রকাশ করতে হবে এবং নৈশ/উন্মুক্ত পদ্ধতিতে নিয়মিতভাবে সরকারী ও বেসরকারীভাবে সার্টিফিকেশন পোগ্রাম/ওয়ার্কশপের আয়োজন করতে হবে। এতে Skill Gap কমে আসবে এবং আগ্রহী তরুণেরা পেশাদারী জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবে।
• গ্রামীণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রামীণ শাখা স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ ছাড়/সহায়তা প্রদান করতে হবে। কারণ, গ্রামীণ শাখা স্থাপন বাবদ উদ্বোধনী খরচ উঠিয়ে মুনাফায় আসতে অনেক সময় ও পরিশ্রম লাগে। এক্ষেত্রে একটি নির্ধারিত মুনাফায় না আসা পর্যন্ত মোট আদায়যোগ্য মুনাফার একটি অংশ সরকার ব্যাংকটিকে ছাড় দিতে পারে।
• অর্থঘেঁষা বিধায় এ খাতে দুর্ণীতি ও অনিয়ম রোধে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি বাড়ানো যেতে পারে। এতে সৃংখলা বজায় রাখা সম্ভব হবে।
• রপ্তানী বৃদ্ধির জন্য শাখাগুলোতে ওয়ান-স্টপ এক্সপোর্ট সার্ভিস ডেস্ক চালু করা যেতে পারে এবং বিভিন্ন খাত বের করে নতুন নতুন সুবিধা ও অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বড় ধরণের কারখানা স্থাপন করে রপ্তানীমুখী উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এখান থেকে অভিজ্ঞতা সম্পন্নরা নিজেরাই যাতে পরবর্তীতে রপ্তানী কর্মযজ্ঞে যোগ দিতে পারে। রপ্তানীমুখী অর্থায়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাংককে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।
• বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্স দ্রুতগতিতে ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বর্তমানে সাধারণতঃ ১-৭ দিনেরও বেশি সময় লাগে। ভায়া হয়ে দেশীয় এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে অবহেলা করলে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে।
• ব্যাংকের শাখায় বিদ্যুৎ প্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য স্থানীয় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানকারী সংস্থার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
• সম্ভব হলে ক্রাউডি শাখাগুলোতে কোলাহল নিয়ন্ত্রণের জন্য Automated Queue Management Solution বাস্তবায়ন করা।
• গ্রাহদের মাঝে ব্যাংকিং জ্ঞান/সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে User Manual তৈরি করে তা প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
• ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ কর্মকান্ডের গতিশীলতা এবং শ্রম আইনের পরিপালন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তসমূহের কড়া নজরদারি বজায় রাখতে হবে। সরকার কর্তৃক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সহায়তা ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
রহমান জর্জি, ব্যাংকার
amberson008@gmail.com
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:২৬