প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিকদের শতকোটি সালাম। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনেক কঠিন অনেক বেদনাদায়ক। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পরের প্রজন্ম, যারা যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করিনি তারা হয়তো কখনই পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারবোনা '৭১ এ পাক-বাহিনী আর রাজাকারদের নির্মমতা।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক চলচিত্র এবং প্রমান্য চিত্র নির্মিত হয়েছে। সব বাঙ্গালীর উচিৎ কমপক্ষে একবার হলেও সেগুলো মনযোগ দিয়ে দেখা। তাহলে কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারবো যে একাত্তরে আসলে কি হয়েছিল। সেইসব চলচিত্র এবং/প্রমান্য চিত্র একসাথে করে নিচে দিলাম।
একাত্তরের যীশু(১৯৯৩):
লেখক শাহরিয়ার কবির এর লেখা উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেছেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ।
ছবির প্রধান প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়,হুমায়ূন ফরিদি, জহির উদ্দিন পিয়াল, আবুল খায়ের, আনওয়ার ফারুক, কামাল বায়েজীদ ও শহীদুজ্জামান সেলিম।
মাটির ময়না(The Clay bird)(২০০২):
তারেক মাসুদ পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। ছবিটি২০০২ সালে মুক্তি পায়। অভিনয় করেছেন নুরুল ইসলাম বাবু, রাসেল ফরাজী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী, শোয়েব ইসলাম, লামিসা রিমঝিম।
নদীর নাম মধুমতি(১৯৯৫):
তানভির মোকাম্মেল পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। ছবিটি ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায়। অভিনয়ে তৌকির আহমেদ, আফসানা মিমি, সারা জাকের সহ আরও অনেকে।
অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী: সুভাষ দত্ত পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন উজ্জ্বল, ববিতা সহ আরও অনেকে।
১ ২ ৩ ৪
আগুনের পরশমনি:
হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছে বিপাশা হায়াত, আবুল হায়াত, ডলি জহুর, আসাদুজ্জামান নুর, শিলা আহমেদ সহ আরও অনেকে।
আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১):
ছবিটি পরিচালনা করছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। সরকারি অনুদানে মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর জনপ্রিয় একটি শিশুতোষ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ
করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালে মফস্বল শহরের কয়েকজন কিশোর কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তারই কিছু চিত্র ফুঁটে উঠেছে গল্পে। মমন চলচ্চিত্র ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ এর ব্যানারে
ছবিটি নির্মাণ করা হযেছে। ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছে জাওয়াতা আফনান এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রে অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, হোমায়রা হিমু, পারভেজ মুরাদ,
পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইনামুল হক, কেরামত মওলা ও ওয়াহিদা মল্লিক জলি সহ শিশুশিল্পীরা হলো জাওয়াতা আফনান, ইবতেশাম চৌধুরী, রিফায়েত জিন্নাত, ফাইয়াজ বিন জিয়া, লিখন রাহি,
কাওসার আবেদীন ও কাজী রায়হান সোকাহান.
ওরা ১১ জন(১৯৭২): ১৯৭১ এ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত, স্বাধীনতায়োত্তর প্রথম চলচ্চিত্র। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতার ডাক দেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হবার আহবান জানান, এই ছবির গল্পে প্রয়োজনে সেই ঐতিহাসিক ভাষনের কিছু অংস দেখানো হয়েছে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। এ ছবিতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অভিনয় করেছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খসরু, মুরাদ, নান্টু। এছাড়াও ছবির প্রধান চরিত্র গুলোতে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, হাসান ইমাম, আলতাফ, মুরাদ, নান্টু ,বেবী, আবু, খলিল চৌধুরী সহ আরও অনেকে।
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬
আলোর মিছিল:
মিতা পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছে রাজ্জাক, ববিতা সহ আরও অনেকে।
শ্যামল ছায়াঃ(২০০৪)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রের পরিচালক হলেন হুমায়ূন আহমেদ। এই ছবিটি ২০০৬ সালে "সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র" বিভাগে
একাডেমি পুরস্কার এর জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ছবির বিশেষত্ব হচ্ছে, সরাসরি যুদ্ধের দৃশ্য না দেখিয়েও এতে যুদ্ধের আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মুক্তির গান(১৯৯৫):
মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধের উপর একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণের অভিপ্রায়ে এদেশের একদল সাংস্কৃতিক কর্মীর সঙ্গ নেন। 'বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা' নামের দলের এই সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা ও শরনার্থীদের দেশাত্মবোধক ও সংগ্রামী গান শুনিয়ে উজ্জীবিত করতেন। এই শিল্পীদের সাথে থেকে লেভিন প্রায় ২০ ঘণ্টার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। যুদ্ধের শেষ দিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তিনি ডকুমেন্টারি তৈরি করতে পারেননি।
দীর্ঘ দুই দশক পর ১৯৯০ সালে তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ নিউইয়র্কে লেভিনের কাছ থেকে এই ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তারা আরো বিভিন্ন উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের নানা সংরক্ষিত উপাদান সংগ্রহ করেন, বিশ বছর আগের সেই শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ করেন। লেভিনের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফুটেজের সাথে সংগৃহীত অন্যান্য উপাদান যোগ করে ছবিটি নির্মিত হয়।
জয়যাত্রা(২০০৪):
বাংলাদেশের বিখ্যাত সম্পাদক, কাহিনীকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেন এর কাহিনী নিয়ে সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন তৌকির আহমেদ। এটি তার
পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ভিত্তিক এই ছবিটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ। ছবিটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, আবুল হায়াত, চাঁদনী।
সেই রাতের কথা বলতে এসেছিঃ
গুণী নির্মাতা কাওসার চৌধুরী বানিয়েছেন এই প্রামাণ্য চলচিত্র। এই চলচিত্রে ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ে সেই কালো রাত ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে ঘটে যাওয়া পিশাচ ঘটনার হৃদয়ছোঁয়া বিবরণী পাওয়া যাবে এই চলচিত্রে।
১ ২ ৩ ৪ ৫
স্টপ জেনোসাইডঃ(১৯৭১):
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। ইংরেজি "স্টপ জেনোসাইড" শব্দগুচ্ছের অর্থ "বন্ধ কর গণহত্যা" শহীদ বুদ্ধিজীবি ও বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ১৮ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই তথ্যচিত্রটি তৈরি করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাঙ্গালীদের দুঃখ-দুর্দশা, হানাদার পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, ভারতে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের দিনকাল প্রভৃতি এই তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছিল।
জীবন থেকে নেয়াঃ
জহির রায়হান এর নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭০ - ১৯৭১ সালে মুক্তি পায়। সামাজিক এই চলচ্চিত্রে তৎকালীন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী , খান আতাউর রহমান, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেন, প্রমুখ।
এই ছবিতে আমার সোনার বাংলা গানটি চিত্রায়িত হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
এটি জহির রায়হান নির্মিত শেষ কাহিনী চিত্র।
সংগ্রাম:
চাষি নজরুল ইসলাম নির্মিত এই ছবিটি মেজর খালেদ মোশাররফ এর ডায়রি অবলম্বনে তৈরি। এতে অভিনয় করেছেন সুচন্দা, খসরু সহ অনেকে।
আলোর মিছিল
অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, ববিতা, আনোয়ার..
হাঙ্গর নদী গ্রেনেড
সেলিনা হোসেন এর উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি নির্মান করেছেন চাষি নজরুল ইসলাম। এতে অভিনয় করেছেন সুচরিতা, সুছন্দা, সোহেল রানা, হুমায়ূন ফরিদি সহ অনেকে।
নদীর নাম মধুমতী(১৯৯০)
নির্মাতা- তানভির মোকাম্মেল।
সূচনা(১৯৮৬):
নির্মাতা- মোরশেদুল ইসলাম
গেরিলা(২০১১):
সৈয়দ শামসুল হক এর নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস অবলম্বনে নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মান করেছেন এই চলচিত্রটি। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক-এর নিষিদ্ধ লোবান এবং পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ-এর গেরিলা কমান্ডার থাকাকালীন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ফসল এই চলচিত্র। এতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, শম্পা রেজা, এটিএম শামসুজ্জামান, কচি খন্দকার সহ অনেকে।
খেলাঘর(২০০৬):
মোরশেদুল ইসলাম নির্মিত এই সিনেমার মূল গল্প নেয়া মাহমুদুল হক এর উপন্যাস থেকে।
এখানে অনেক সিনেমা বাদ পরে যেতে পারে। কারো জানা থাকলে দয়াকরে কমেন্ট এ জানান অ্যাড করে দেয়া হবে । ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০৭