দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে অনেক সময়ই আমাদের নানা আপদ দেখা দেয় । সাধারণভাবে এই সমস্ত আপদের শুশ্রষা দেয়ার যে পদ্ধতি তাই হচ্ছে প্রাথমিক চিকিৎসা । একটা গবেষণায় দেখা যায় যে,কো দূর্ঘটনা বা দৈবে আহত বা অসুস্থ ব্যক্তিকে যদি তাঁর সেই দূর্ঘটনার প্রাথমিক অবস্থাতেই শুশ্রষা দেয়া হয় তবে অধিকাংশক্ষেত্রেই তাঁর বড় ধরণের ক্ষতির আশংকা থেকে মুক্তি দেয়া যায়।
আমি অনেকদিন যাবত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে আসছি । সেই অভিজ্ঞতার আলোকে সবার সাথে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার উপযোগী কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার পদ্ধতি শেয়ার করবো । আশা করি সবার উপকারেই বিষয়টা কাজ করবে
লেখাগুলো সিরিজ আকারে প্রকাশিত হবে।সবাইকে দৃষ্টি রাখার জন্য অনুরোধ করছি।
পর্ব-১
প্রাথমিক চিকিৎসার প্রাথমিক ধারণা(Introduction to First Aid)।
প্রাথমিক চিকিৎসা কি?
ডাক্তার আসার পূর্বে হঠাৎ কোন দূর্ঘটনায় আহত বা অসুস্থ ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অথবা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে জরুরী ভিত্তিতে যে সেবা বা শুশ্রষা করা হয় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলে ।
প্রাথমিক চিকিৎসার উদ্দেশ্যঃ
ক)আহত বা অসুস্থ ব্যক্তির জীবন বাচাতে সাহায্য করা ।
খ)অবস্থার অবনতি রোধ করা।
গ)অবস্থার উন্নতি করা।
কার্যপ্রণালীঃ
কোন দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিতে পেলে প্রথমেই প্রাথমিকভাবে তাঁর শরীরের তিনটি মৌলিক বিষয় পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ক)শ্বাসনালী বা AIRWAY: ব্যক্তির শ্বাসনালী অর্থাৎ মুখ ও নাকের ভেতর দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে শ্বাসনালীতে কোন কিছু আটকে আছে কি না?মুখ ও নাকের ভিতর কোন কিছু আটকে থাকলে তা পরিষ্কার হাতে আংগুল দিয়ে বের করে নিয়ে আসতে হবে।
এভাবে শ্বাসনালী পরীক্ষা করতে হবে।
খ)শ্বাস-প্রশ্বাস বা Breathing: তার পরের কাজ হবে ঐ ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস চালু আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা। শ্বাস-প্রশ্বাস চালু থাকলে নাক দিয়ে গরম বাতাস বের হবে,বুক ওঠানামা করবে।
এভাবে শ্বাস প্রশ্বাস পরীক্ষা করতে হবে।
গ)রক্তচলাচল বা Circulation Of Blood: ঐ ব্যক্তির রক্ত চলাচল পরীক্ষা করতে হবে । রক্ত চলাচল পরীক্ষা করতে হাতের কব্জির রেডিয়াল পালস অথবা কন্ঠনালীর কেরোটিড পালস বা নাড়ী ধরে রক্ত চলাচলের গতি বোঝা যেতে পারে।
এভাবে রক্ত চলাচল পরীক্ষা করে দেখতে হবে
উপরোক্ত তিনটি কাজ খুব দ্রুত করতে হবে । এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্ত চলাচল যদি বন্ধ পাওয়া চায় তবে তা চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। তার পরে নিচের বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে ।
ক)ঐ ব্যক্তিটি অজ্ঞান হয়ে গেছে কি না?
খ)মাথায় বা মেরুদন্ডে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে কি না?
গ)হাড় ভেঙ্গে গেছে কি না?
ঘ) বিষক্রিয়া হয়েছে কি না?
ঙ)সাপে কেটেছে কি না?
চ) মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে কি না?
ছ) রক্তপাত হচ্ছে কি না?
মনে রাখবেনঃ
ক)রোগীকে যত ডাক্তারের কাছে পৌছাতে পারবেন ততই মঙ্গল।
খ) গুরুতর আহত অজ্ঞান রোগীকে স্বান্তনা দিন এবং তাকে সাহস যোগান।
গ) নিজে ভয় পাবেন না।
ঘ) একজন প্রাথমিক চিকিৎসাকারী কখনোই ডাক্তার নন।
ঙ) প্রাথমিক চিকিৎসা হাত দেয়ার আগে রোগীর অথবা তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের অনুমতি নিতে হবে।
পরবর্তী সংখ্যাঃ রক্তপাতের প্রাথমিক চিকিৎসা
তথ্যসূত্রঃ
সমাজ ভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ সহায়িকা,বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
লেখকঃ
রাহিকুল ইসলাম চৌধুরী
প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষক
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
যুব রেড ক্রিসেন্ট,সিলেট ইউনিট
ও
সদস্য
জাতীয় দূর্যোগ প্রস্তুতি দল(ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স টিম)
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।