বেশ কয়েক বছর আগে কথা। আমি ও আমার এক বন্ধুস্থানীয় কলিগ সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা দার্জিলিং যাব। কোলকাতা হয়ে যাব, সূতরাং কোলকাতা ও দেখা হয়ে যাবে। ছোট বেলা থেকেই দার্জিলিং দেখার একটা শখ ছিল। তো পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিসা ও বাসের টিকিট কাটা হল। আমরা বাসে করে আমরা গেলাম বেনাপোল, ইমিগ্রেসন পার করে আবার একই কম্পানির বাসে কোলকাতা।
কোলকাতা বা ইন্ডিয়া আমাদের কাছে বিদেশ মনে হয় না ঠিক। একই রকম মানুষ, ভাষা, প্রকৃতি। আলাদা করার যায় শুধু রাস্তার পাশের সাইনবোর্ড দেখলে। আজ এই সফরের বিরম্বনার ঘটনা নিয়ে লিখব।
ঘটনা ১ঃ
আমরা বাস থেকে নেমে শিয়ালদহ স্টেশনে গেলাম শিলিগুড়ির টিকিট কাটতে। ইনফরমেশন সেন্টারে খোজ নিলাম কিভাবে বিদেশিরা টিকিট কাটতে পারে। ইনিফরমেশন সেন্টারে যে মহিলা বসা ছিলেন তাকে খুব হেল্পফুল মনে হল, ভাবছিলাম বাংলাদেশে কোন সরকারী ইনফরমেশন সেন্টারে লোক পয়া যায় কিনা আর পেলেও তার কোন সাহায্য পাওয়া যায় কিনা কখনো।
যাই হোক মহিলা আমাদের বললেন পাসপোর্টের ফটোকপি লাগবে। ফটোকপি কোথায় করা যাবে জানতে চাইলে তিনি পিছনের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন ওদিকে ফটো কপির দোকান আছে। তো আমরা ওনার পরামর্শ অনিয়াযী অই দিকে গিয়ে ফটোকপি করে আবার একই পথ দিয়ে ভিতরে টিকিট কাউন্টারের দিকে আসছিলাম। হঠাত সাদা শাড়ি (ইউনিফর্ম হবে কোন) এক বেটে মত মহিলা আমাদের পাকড়াও করলেন এবং হাত ধরে টেনে একটা রুমের ভিতর নয়ে আসলেন। আমরা বার বার জানতে চাচ্ছিলাম কি হচ্ছে? আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আপনি কে? সে কোন কথার জবাব দিচ্ছিল না। এক এ তো আমরা মাত্র ২০ মিনিট আগে নতুন একটা দেশে এসে নামলাম, ২য় তো উনি একটা মহিলা। তো আমরা একটু ভরকে গেছিলাম।
মহিলা আমাদের রুমের ভেতর ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে রেখে চলে গেলেন। কিছুই বললেন না। রুমের ভিতর ঢুকে দেখি রুম ভর্তি অনেক লোক আর এক কোন একটা লোহার শিকের গাড়দ। তার মধ্যে উদোম গায়ে কিছু লোক। আমরা রুমের ভিতর থাকা অন্য লোকলের জিজ্ঞেস করলাম ভাই এখানে কেন নিয়ে এসেছে, ঐ মহিলা কে? ওনারা বললেন, ওই মহিলা পুলিশ, আপনারা স্টেশনে হয়ত কোন আইন ভেঙ্গেছেন তাই এখানে নিয়ে এসেছে। আমরা তো আরো ঘাবরে গেলাম, নতুন একতা দেশে এসেই কি আইন ভাংলাম? এমন সময় আর এক পুরুষ পুলিস সম্ভবত এস আই র্যাংকের, রুমে ধুকলেন। তো আমরা তাকে বললাম ভাই আমরা বাংলাদেশি, মাত্র ১০ মিনিট আগে বাস থেকে নেমে এখানে এসেছি টিকিট কাটতে, হঠাত এক মহিলা আমাদের এখানে ধরে নিয়ে এলেন। কেন এনেছেন কিছু বুঝতে পারেন নি। তো আমাদের কথা শুনে মনে হল তিনি নরম হলেন একটু, আমাদের পাসপোর্ট দেখতে চাইলেন, দেখালাম। এর পর তিনি আমারদের ছেড়ে দিলেন। আমরা ছাড়া পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আবার যাচ্ছিলাম টিকিট কাউন্টারের দিকে।
পথে সেই মহিলার সাথে আবার দেখা। আমাদের দেখে মনে হল তিনি প্রচন্ড ক্ষেপে গেলেন। প্রায় উরে এসে আবার আমাদের ধরে ফেললেন। বললেন আপনারা কেন বের হয়েছেন? আমরা তাকে বললাম আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। তিনি আমাদের কোন কোন কথাই শুনবেন না, আবার টানতে টানতে নিয়ে সেই ঘরে ঢুকালেন। আমাদের ভাগ্য ভাল সেই এস আই তখনো সেখানে ছিলেন। আমাদের দেখতে পেয়ে মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন ওদের কেন ধরেছ? মহিলা বলল ওরা উলটো পথ দিয়ে ভেতরে ঢুকেছে। এতক্ষনে বুঝলাম আমাদের অপরাধ। আমরা যে গেট দিয়ে ফটোকপি করার পর ঢুকেছি, সেটা এক্সিট। আমরা বললাম আমরা তো নতুন, কোনটা উলটো পথ তা তো আমরা চিনি না, ইনফরমেশন ডেস্ক থেকে আমাদের এই রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। এস আই তখন বলল এরা বিদেশি, ধরার আগে দেখবে না? মহিলা মনে হল রাগে তখন আমাদের চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। রাগে গজগজ করতে করতে রুমের দরজা খুলে আমাদের যেতে দিল। আমরাঅ হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
পরের পর্বে অন্য একটি ঘটনা লিখব একই ষ্টেশনের।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২২ সকাল ১১:৩৫