ছবিঃ গুগল
১)
মঙ্গলে ঘাটি গেড়েছে এক এলিয়েন সপ্রদায়। পৃথিবী থেকে প্রায় ৪২ আলোকবর্ষ দূরের ক্যানিস গ্যালাক্সিতে এদের উদ্ভিব। এর পর এরা ছড়িয়ে পড়ছে সারা মহাবিশ্বে। এদের শরীর গঠন মানুষের সাথে তুলনীয় নয়। এরা মানুষের চোখে অদৃশ্য। পৃথিবীতে কিছু প্রানী শুধু এদের অস্তিত্ব বুঝতে পারে। এদের জীবনকাল মিলিয়ন বছরের উপরে। এদের কোনো আকার বা রঙ নেই। এরা অদৃশ্য, অস্পর্শনীয় হলেও এদের ভর অত্যন্ত বেশি। প্রতি কিউবিক মিলিমিটার এ এদের ভর প্রায় ৩৫০০ টন। যার ফলে এরা প্রচন্ড শক্তিশালী। এরা চুম্বকিয় ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে আলোর গতিপথ ও পরিবর্তন করতে পারে। এরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে অনেকটা টেলিপ্যাথি পদ্ধতির মাধ্যমে। কোন বাহন ছাড়াই এরা আলোর গতিতে চলাচল করেতে পারে। এরা নিজেদের সিটা বলে।
আজ মঙ্গলে অবস্থানরত সিটা দলের বৈঠক।
আমাদের সৌর জগতে এদের আগমনের মূল কারন মানুষ সম্পর্কে ধারনা লাভ ও মানুষের সাথে যোগাযোগ। বৈঠকে পৃথিবী থেকে ঘুরে আসা একজন স্কাউট জানালো পৃথিবীতে অনেক ধরনের প্রানী আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান যে প্রানী তারা নিজেদের মানুষ বলে। তারাই পৃথিবীর সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে এবং তারাই সবচেয়ে ক্ষমতাবান। যদিও মানুষ সিটাদের তুলনায় খুব দুর্বল। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হল মানুষ সিটাদের দেখতে পায় না বা তাদের উপস্থিতি বুঝতে পারে না। মানুষ যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন ধরনের ধ্বনি ব্যবহার করে, সিটাদের মত টেলিপ্যাথিক পদ্ধতি ব্যবহার করে না। যা মানুষের সাথে যোগাযোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল আবার একজন স্কাউট যাবে পৃথিবীতে। সে চেষ্টা করবে কোন একজন মানুষের উপর ভর করে তার নিয়ন্ত্রন নিতে। যদি তা সম্ভব হয় তবে তার মাধ্যমে অন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ করা হবে। আজকের বৈঠক এখানেই শেষ। দায়িত্বপ্রাপ্ত সিটা পৃথিবীর উদ্দেশ্য চলে গেল।
২)
বাংলাদেশের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম কাকচিরা। সে গ্রামে আজ হুলস্থুল। মোল্লা বাড়ির আজাহার মোল্লার মেয়ে ফাতেমাকে গত রাতে জ্বিনে ধরেছে। গতরাতে সে বাইরে বের হয়েছিল টয়লেট সারতে, তখন ই এই ঘটনা। এর পর থেকে সে পুরুষের কন্ঠে কি সব আবল তাবল বলছে। তার নাম নাকি সিটা। সে কোন দেশ থেকে যেন এসেছে। কেউ বলছে ক্যানাডা কেউ বলছে ক্যালিফোর্নিয়া।
জ্বিন ছাড়াতে মঠবাড়িয়া থেকে নাম করা একজন হুজুর আনা হয়েছে। ফাতেমাকে হাত পা বেধে উঠানে হুজুরের সামনে বসানো হয়েছে। বাড়ির উঠান লোকে লোকারন্য। সবাই জ্বিন দেখতে এসেছে। হুজুর দোয়া দুরুদ পড়ে ফাতেমার মাথায় ফু দিচ্ছে। সামনে আগর বাতি জ্বালানো হয়েছে। প্রচুর শুকনো মরিচ পোড়া হচ্ছে ফাতেমার মুখের সামনে, সাথে হলুদ মরিচের গুড়া ছিটানো হচ্ছে চারদিকে। দোয়া দুরুদ আর ঝারফুকের মাঝে মাঝে চিকন একটা লাঠি দিয়ে সপাৎ সপাৎ আঘাত করছে ফাতেমার শরীরে। মরিচের ঘন্ধে ফাতেমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, হার্টবিট পালস বেড়ে গেছে মাত্রাতিরিক্ত। শারিরিক অবস্থা খুব দ্রুত অবনতি হচ্ছে।
ফাতেমার শরীরের এই অবস্থায় ওর শরীরে ভর করা সিটার অবস্থানের জন্য প্রতিকূল হয়ে পড়েছে। সে উপস্থিত সবাইকে বোঝাতে চাইছে যে সে কোন ক্ষতি করবে না, শুধু তাদের সাথে কথা বলতে চায়। কিন্তু প্রচন্ড ঝাড়ফুক আর মারের মধ্যে ফাতেমার গলা থেকে পরিষ্কার কোন কথা বের হচ্ছে না। শুধু পুরুষালী কন্ঠে গড়্গড় করে কিছু বলছে। একসময় প্রচন্ড শক্তি দিয়ে তাকে যে খুটির সাথে বেধে রাখা হয়েছিল তা উপড়ে ফেলে। কোন মতে সাত আটজন মিলে তাকে ধরে রাখে। উপস্থিত জনতা ফাতেমার এমন শক্তি দেখে জ্বিনের অস্তিত্ব এর প্রমান আরো একবার পেল।
৩)
গ্রামের একমাত্র মাধ্যমিক স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক তালেব স্যার বাড়ির দিকে স্কুলে যাচ্ছেন। পথে দেখা হল তার প্রাক্তন ছাত্র মতি হাওলাদার এর সাথে। সে জানালো আজাহার মোল্লার মেয়েকে জ্বিনে ধরেছে, হুজুর আসছে জ্বিন ছাড়াতে। সেখানেই যাচ্ছেন দেখতে। তালেব স্যার বললেন; কি বল, ওরা মেয়েটাকে তো মেরে ফেলবে, জ্বিন বলে আছে নাকি কিছু। ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে। চল আমিও যাব তোমার সাথে।
৪)
প্রচন্ড মার আর ঝাড়ফুকে ফাতেমার অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়ে চলছে। ওর উপর ভর করে থাকা সিটার জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। ফাতেমা হটাত পুরুষ কন্ঠে বলে উঠল আমাকে ছেড়ে দাও, আমি চলে যাচ্ছি। উপস্থিত জনতার মধ্যে স্বস্তির গুঞ্জন উঠল। হুজুর বললেন তুই যে চলে যাবি তা বুঝব কিভাবে? তিনি উঠোনের কোনায় দাঁড়ানো আম গাছ দেখিয়ে বললেন যাওয়ার সময় ওই গাছের একটা ডাল ভেঙ্গে রেখে যাবি। ফাতেমা বলল জ্বি, তাই করব। হঠাত ফাতেমা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল আর আম গাছের মোটা একটি ডাল ভেঙে পড়ল।
৫)
এমন সময় তালেব স্যার মোল্লা বাড়ির উঠানে এসে উপস্থিত হলেন। ফাতেমার এ অবস্থা দেখে তিনি ফাতেমার বাবাকে বকাঝকা করতে লাগলেন। ফাতেমার বাবা বলল স্যার জ্বিন চলে গেছে। স্যার বললেন মেয়েটাকে মেরে যে অবস্থা করেছ, এখন ই হাসপাতালে নিতে হবে। সবাই ধরা ধরি করে ফাতেমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। তিনদিন পর ফাতেমা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল কিন্তু তার সাথে কি হয়েছিল তার কিছুই তার মনে নেই।
৬)
মঙ্গলে আবারো পৃথিবী ফেরত সিটা স্কাউটকে নিয়ে বৈঠকে বসেছে সিটা দল। অভিজানের বিস্তারিত বিবরন সে সবাইকে বলছে। ব্যর্থতার কারন ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলাপ চলছে। শীঘ্রই আবার নতুন অভিজান পাঠানো হবে পৃথিবীতে।
নোটঃ সব চরিত্র কাল্পনিক
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২২ রাত ৮:৪১