somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নমস্য ইউজার - গুগল, ইয়াহু!, আর আন্তর্জালের দূরদর্শিতা

০৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বব্যাপী জনসাধারনের আয়ত্বে ইন্টারনেটের আগমন যখন ঘটে ১৯৯২-৯৩ সালের দিকে, তখন থেকেই দিনে দিনে ওয়েবসাইট নির্মান সহজ থেকে সহজতর হয়ে উঠেছে। এর সাথে সাথে তৈরী হয়েছে নানা বিজনেস মডেল বা ব্যবসায়িক কৌশলের।

সফটওয়ার কোম্পানিগুলো আগে ব্যবসা করতো সফটওয়ারকে পণ্যের মতো কেনা বেচা করে। কিন্তু ইন্টারনেট আসার সাথে সাথে নতুন কৌশল আসে - ওয়েবসাইটভিত্তিক সার্ভিস। ব্রাউজারের মাধ্যমে ওয়েবমেইল, মেসেঞ্জারের মাধ্যমে চ্যাট - এসবের পাশাপাশি হালে শুরু হয়েছে ওয়ার্ড প্রসেসর, স্প্রেডশীট, প্রেজেন্টেশন - এই সবগুলোকেই ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হাতের নাগালে এনে দেয়া।

প্রথম দিকে এরকম সেবাদাতা সাইটগুলো নগদ পয়সা ছাড়া সেবা দিতে নারাজ ছিলো। মনে আছে, এক সময়ে ইয়াহু মেইলে ফ্রি দিতো ৬ মেগাবাইট, আর পয়সা দিলে ২০ মেগাবাইট। এর বেশি অল্প গেলেই মেইল বাউন্স শুরু করতো। কোম্পানীগুলো প্রথমে ভেবেছিলো, "ফেলো কড়ি, মাখো তেল" - এই পদ্ধতি ওয়েবদুনিয়াতেও কাজ করবে।

কিন্তু দেখা গেলো, প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিনা মূল্যে অনেক সার্ভিস দিতে শুরু করেছে। আম-জনতাও বোকা না - সার্ভিস পেতে হলে টাকা দিতে হবে, টাকা না দিলে মুখ বন্ধ করে সার্ভিস দাতা কোম্পানির হম্বি তম্বি স্বৈরাচারী আচরণ সব সইতে হবে - সে যুগ আর নেই। ইয়াহুর পয়সা নেয়া ইমেইলের প্রতিদ্বন্দ্বী সার্ভিস হিসাবে এলো গুগলের জিমেইল, বিনা মূল্যে বিপুল জায়গা দিলো। "দাও টাকা, নইলে ইমেইল মুছে দিলাম", "টাকা দাওনা তো সার্ভিস চাও কেনো" - এরকম মানসিকতার সব সাইট রাতারাতি ধরা খেলো।

২০০০ সালের দিকের ডট কম বিপর্যয়ের পরে এখন সব কোম্পানিই সাবধানী হয়ে গেছে। ইউজারেরাই এখন নমস্য - তাদের খুশি রাখতে পারলেই যে আয় হবে কোনো না কোনো ভাবে, সেটা এখন সবাই বোঝে। তাই এখন খোদ মাইক্রোসফটও অফিস লাইভের মাধ্যমে তাদের অনেক সার্ভিস দিচ্ছে বিনা মূল্যেই।

---

এতো কথা মাথায় আসলো আসলে গত সপ্তাহের এক বক্তৃতা শুনে। ইন্টারনেটে অনেক কিছুরই পথিকৃত ইয়াহু!র একটা রিসার্চ সেন্টারও আছে, সেখানে ওয়েব প্রযুক্তি নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলে। সেই ইয়াহু রিসার্চের প্রধান বিজ্ঞানী প্রভাকর রাঘবন গত সপ্তাহে ইয়াহুর ব্যবসায়িক কৌশলে ব্যবহার করা প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করছিলেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে। গুগলের মতো ইয়াহুর মূল আয়টি আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সার্চ করার সময়ে মূল ফলাফল বামে আসে, আর পাতার একেবারে ডানদিকে কিছু সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন দেখা যায়। ১০০ জনে দুই এক জন হয়তো সেখানে ক্লিক করে। তখন বিজ্ঞাপনদাতা কোম্পানি ইয়াহুকে কিছু পয়সা দেয়। অল্প মনে হলেও কোটি কোটি সার্চ দিনে করা হয়, কাজেই মোট হিসাবে পরিমাণটা কম না। বিলিয়ন ডলারের কোঠায় দাঁড়ায় সেটা।

বিজ্ঞাপনগুলো আবার নিলামের মতো, যে কোম্পানী বেশি টাকা দিবে বিজ্ঞাপনে, তাদের বিজ্ঞাপনকেই আগে দেখাবে।

তো, একজন প্রশ্ন করলো ডঃ রাঘবনকে, বিজ্ঞাপনে ক্লিক করাতে যদি পয়সা পাওয়া যায়, তাহলে ইয়াহু! বামদিকের সার্চ রেজাল্টের সাথে বিজ্ঞাপন মেশাচ্ছেনা কেনো? ওখানে সার্চের ফলাফল হিসাবে খোঁজ করা শব্দগুলোর সাথে সম্পর্কিত সাইটের লিংক না দেখিয়ে, যারা টাকা দিচ্ছে বিজ্ঞাপনে, তাদের লিংক দেখালেই তো চলে। ইউজারেরা তো মাগনা মাগনা সার্চ করছে, ওদের পাত্তা দেয়ার দরকার কী? এমনি এমনি ফ্রি রেজাল্ট পাচ্ছে, সেই রেজাল্ট কোম্পানির বিজ্ঞাপন না আসল রেজাল্ট, তা নিয়ে ইউজারেরা কথা বলার অধিকার রাখবে কেনো!! না পোষালে অন্য সাইটে যেতেই পারে। ইয়াহু নিজের যাতে লাভ, তা করলেই পারে।

জবাবে ডঃ রাঘবন বললেন, এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রস্তাব আসেনি তা না। কিন্তু ব্যাপারটাকে এভাবে দেখা যাক - ইউজারদের জন্যই তো বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন দেবে। সেই ইউজারেরা যদি সন্তুষ্ট না হয়, তাদের কাংক্ষিত সার্চ ফলাফলের বদলে যদি বিজ্ঞাপন পান, তাহলে ইয়াহু হয়তো আজকে কিছু বিজ্ঞাপনের পয়সা পাবে। কিন্তু এই অতৃপ্ত ও অসন্তুষ্ট ইউজার ইয়াহু দিয়ে আর পরে সার্চ করবে না। ফলে আখেরে ক্ষতিটা হবে ইয়াহুরই ... ইউজারেরা না আসলে বিজ্ঞাপন দাতারাও চলে যাবে।

কাজেই ইয়াহুর (এবং গুগলেরও) নীতি হলো, ইউজারদের নমস্য বলে জ্ঞান করা, তাদের খুশি রাখা। ইউজারদের খুশি রাখলে বিজ্ঞাপন দাতারা সেই ইউজারদের টানেই আসতে থাকবে।

তাই আজকের ওয়েব দুনিয়াতে ইউজাররাই হলো নমস্য - ওয়েবসাইটের প্রাণই হলো ইউজারেরা। বিনা মূল্যে সার্ভিস নিলেও তাদের মনোযোগ ধরে রাখার জন্যেই ওয়েবসাইটগুলো করে চলে প্রাণপণ চেষ্টা, তা হয়তোবা অনেকটা নিজেদের স্বার্থেই।



----
বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখাটির সাথে এই ব্লগ সাইট বা অন্য কোনো সাইটের আচরণের বা ব্যবসা-কৌশলের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো মিল খুঁজে পেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়, ও তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:৫৩
৪৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×