এর সবই হলো জনমানুষের বিচরণ, জনমানুষের প্রচেষ্টার ক্ষেত্র। দুনিয়ার অনেক মানুষকে দূরত্ব ঘুঁচিয়ে একসাথে এনেছে এই ধরণের সব প্রকল্প। মানুষের মাঝে সহযোগিতা করার মনোভাবটা সহজাত, আর একটু সুযোগ দিলেই আম-জনতা অনেক বড়ো কিছু গড়ে দেখাতে পারে।
এভাবেই গড়ে উঠেছে ২৫০ এর ও বেশি ভাষায় দুনিয়ার বৃহত্তম তথ্যভান্ডার উইকিপিডিয়া। নানান ভাষায় মোট নিবন্ধের সংখ্যা পৌছেছে ৫০ লাখের উপরে। ইংরেজি উইকিটি বৃহত্তম, তাতে আছে ২০ লাখেরও বেশি নিবন্ধ।
হাঁটি-হাঁটি, পা পা করে এগোনো বাংলা উইকিপিডিয়াও পিছিয়ে নেই। গত বছর খানেক ধরে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং আমেরিকা, জাপান সহ দুনিয়ার বিভিন্ন কোনে বাস করা বাংলাভাষীরা কাজ করেছে অনেক ভুক্তির উপরে। এখন ভুক্তির মোট সংখ্যা ১৬,৭০০ এর মতো, এর মধ্যে পূর্ণ আকারের ভুক্তি আছে অনেক। উদ্যমী অল্প কিছু তরুণের লেগে থাকা যে কতো বড়ো পরিবর্তন আনতে পারে, এটা তারই প্রমাণ।
বাংলা উইকিপিডিয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল অঙ্গনে দেশের কথা তুলে ধরা, আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যকে পৌছে দেয়া - এর জন্য চলছে মহাপ্রয়াস । আর এই মহাপ্রয়াসের জন্য দরকার ... আপনাকেই!! সারা দিনে দশটি মিনিট কি ইন্টারনেটে ঢুকে থাকেন? যদি থাকেন, তাহলে একটু উইকিপিডিয়ার একটা দুইটা নিবন্ধে একটা দুইটা বাক্য যোগ করুন না ... কতটুকুই বা সময় লাগবে? দশজনে মিলে যদি একটা করে বাক্য যোগ করে, তাহলেই কিন্তু একটা পুরো প্যারাগ্রাফ লেখা হয়ে যায়। দুই মিলিয়ন নিবন্ধের ইংরেজি উইকিপিডিয়া লেখা হয়েছে এভাবেই, আর বাংলা উইকিপিডিয়াতেও এভাবেই কাজ চলছে।
এখানে লিখতে হলে কি "বিশেষজ্ঞ" হতে হবে? না ভাই, এরকম "বিশেষজ্ঞ"দের গালভরা বুলি দিয়ে আমাদের কাজ নেই। আম-জনতার হাতে বিশ্বমানের জ্ঞানকোষ লেখা সম্ভব, ইংরেজি উইকিপিডিয়ার চমৎকার সব নিবন্ধ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। উইকিপিডিয়াতে লিখতে গেলে আঁতেল, জ্ঞানী এসব কিচ্ছু হবার দরকার নেই- দেশের জন্য, ভাষার জন্য ভালোবাসাই প্রথম ও প্রধান যোগ্যতা।
আমরা বাঙালিরা সব সময় "বিদেশী বিশেষজ্ঞ"দের জন্য চাতকের মত অপেক্ষা করে বসে থাকি ... কবে সভা সেমিনার করে এইসব বিজ্ঞজনেরা কিছু আইসিটি, আইটি বা ICT4D জাতীয় কিছু জিনিষ আমাদের গিলিয়ে দিবেন (বিনিময়ে কাড়ি কাড়ি ডলার সাথে নিয়ে যাবেন ভারতে বা আমেরিকাতে)। কিন্তু এই বিদেশীরা কি আর আমাদের দেশের কথা আমাদের মতো করে জানবে? তারা কি কোনোদিন লিখতে পারবে পহেলা বৈশাখে কেনো বাঙালিরা নববর্ষের আনন্দে মাতোয়ারা হয়, কিংবা বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কিশোর দেহটি ৩৬ বছর পর দেশে ফিরলে কেনো আমাদের নয়নে আসে আনন্দাশ্রু? অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একাত্তর সালের বোমার ক্ষতচিহ্ন আজো রয়েছে, তা কি তারা কেউ জানাবে? বা জানালেও ঠিক ভাবে জানাবে?
আমাদের দেশের কথা বলতে এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরকেই। আপনি, আমি, আমরা - যে কেউ এই কাজে যতটুকু সম্ভব ভূমিকা রাখতে পারে। তাই, বিজয়ের এই মাসে, বাংলা উইকিপিডিয়া খুঁজছে, আপনাকেই!
দরকারী লিংক
যা নিয়ে লিখতে পারেন, সেরকম নিবন্ধের তালিকা (লাল লিংক গুলোতে ক্লিক করে শুরু করতে পারেন, পাশেই ইংরেজি উইকির নিবন্ধটির লিংক দেয়া, তা থেকে ১টা হলেও বাক্য অনুবাদ করে দেন। ভাষা, ব্যকরণ কোনো সমস্যা না, ঠিক করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে)
উইকিপিডিয়ার সংক্ষিপ্ত টিউটোরিয়াল
(শহীদ মিনারের ছবিটি উইকিপিডিয়ার জন্য দান করেছেন ডঃ কার্ল রোহেল)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১২:৩৫