somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রশীদ হলের চিড়িয়াখানা

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুয়েটের ডঃ এম এ রশীদ হলে আমি আসি ১৯৯৭ সালে, বুয়েটে ভর্তির শুরুতেই। অন্য সব হলের চেয়ে এটা নতুন, মাত্র বছর বিশেক আগে তৈরী। কিন্তু অন্য সব হলের চাইতে এটার রুমগুলোর আকার অনেক ছোট। চারটা বিছানা আর চারটা টেবিল গায়ে গায়ে লাগানো, বারান্দা শুধু সামনে (অন্য হলের রুমগুলোতে দুই দিকে থাকতো)। গুজব চালু আছে, এই হলের দক্ষিণ দিকের পিছনেই আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থাকাতে নাকি এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, হলের হাভাতে ছেলেপেলেদের টাংকিবাজি বন্ধ করতে।

কথা অবশ্য মিথ্যা না। আমাদের ফ্লোরে, চার তলাতে, থাকতেন এক ভাই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই উনার কাজ ছিলো বারান্দাতে হাঁটাহাটি আর হাত নাড়ানাড়ি স্কুলের যেটুকু দেখা যায়, তার দিকে।

হলের বাসিন্দারা বেশ বিচিত্র রকমের। ক্লাস শেষে অনেকেই টিউশনিতে গিয়ে রাত দশটায় হলে ফিরতো। তার পর খাওয়া দাওয়া আর আড্ডাবাজি। বুয়েট মনে হলেই যে আঁতেল ছেলের দল ছবিটা আসে, যে কারো এই ধারণা পাল্টাতে রাতের দিকে রশীদ হলে একদিন গেলেই চলবে। অবশ্য আঁতেল ছেলে কিছু আছে। পাশের রুমের বিশিষ্ট আঁতেল এক ভাই থাকতেন, টোফেল পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য জোরেশোরে "ফাইট" দিচ্ছিলেন। একদিন দেখি রুমে হেডফোন লাগিয়ে বসে আছেন, আর সামনে বিশাল সাইনবোর্ড টাঙ্গানোঃ "এখানে টোফেল পরীক্ষার লিসেনিং এর প্রেক্টিস চলিতেছে। দয়া করিয়া ডাকাডাকি করিয়া বিরক্ত করিবেন না" (হুবুহু)। পরে একদিন এই আঁতেলকে দেখি গজগজ করতে আর জানালা দিয়ে ঢিল ছুড়তে। উনি সকালে উঠে পড়া শুরু করেন, কিন্তু কাক ও অন্যান্য পাখির ডাকে নাকি উনার পড়াতে বিঘ্ন ঘটে।

রশীদ হলের অনেক কথা গল্প করার মতো, রীতিমত একটা বই লেখা যাবে। যাহোক, বুয়েটের অন্য সব হলের চাইতে এর ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হলোঃ এটাই একমাত্র হল যেখানে বিয়ে ও মৃত্যু - এরকম দুইটি বড় ঘটনা ঘটেছে।

মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। মরহুম সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ছেলে সুবর্ণ আমাদের হলে থাকতেন। একদিন হঠাৎ সন্ধ্যায় প্রচন্ড চিৎকার ও চিল্লাচিল্লি শুনে বেরুলাম। জানলাম, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সুবর্ণ ভাই আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর রুমমেট রুমে ঢুকতে না পেরে পিছনের দিকের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে উনাকে ফাঁস দেয়া অবস্থায় দেখে। এই ঘটনার পরে অনেকেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। হলের ছেলেপেলে পরের কয়েক সপ্তাহ ভুত দেখতো প্রায়ই।

আর বিয়ের ঘটনা? হলের এক ভাই তার ছাত্রীর সাথে বিশাল প্রেম করে, পরে কেটে পড়েছিলেন। মেয়ের বাবা মা ইঞ্জিনিয়ার জামাইকে ছাড়তে চাননি। তাই একদিন দল বেঁধে হলে এসে হাজির। ঐ ছেলেকে রুম থেকে ধরে এনে গেস্ট রুমে বিশাল আলাপ আলোচনা, অবশেষে কাজী ডেকে গেস্ট রুমেই বিয়ে পড়ানো। হলের সব ছেলেপেলে রাত ৩টার সময় ঘুম থেকে উঠে এসে বিয়ে দেখা ও মিষ্টি খেয়ে গিয়েছিলো।

এরকম হাজারো অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হয়েছি আমার রশীদ হল জীবনে। আমার দুই রুমমেট মিলে মেসের চোর ম্যানেজারের বিছানা পুড়ানো, সনি হত্যার পরে হলে পুলিশী রেইড, বিভিন্ন ধরণের চোরের উৎপাৎ - আরো কত কি। ঐযে বললাম, পুরা একটা বই লেখা যাবে এর উপরে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×