আমাদের সুস্থ শরীরের জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সুষম খাদ্য চাই। শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেলের চাহিদা পুরনের জন্য তাই আমরা নৈমিত্তিক খাবারে সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করি। তবে আমরা অনেকেই জানিনা যে নৈমিত্তিক খাদ্যতালিকায় থাকা এদের মধ্যে অনেকগুলোই হয়ে থাকে বিষাক্ত। যদি আমরা তা ওয়েল প্রসেসে না রান্না করে বা নিয়ম না মেনে খাই, তা হতে পারে আমাদের জন্য মারাত্মক যন্ত্রণাদায়ক এবং সর্বোপরি তা আমাদের জন্য মৃত্যুর কারণ। চাইলে পুরো পোস্টের ডকুমেন্টারিই দেখতে পারেন।
নাম্বার ১। আপেল।
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফল আপেল। যা আমাদের অনেকেরই পছন্দের একটি ফল। তবে তাদের বীজের মধ্যেই লুকিয়ে অ্যামিগাডলিন। যা আমাদের শরীরের এনজাইমের সংস্পর্শে এসে সায়ানাইড উৎপন্ন করে। সায়ানাইড হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বিষের অন্যতম একটি। শরীরের সুগারের সাথে মিশে তা হাইড্রো-সায়ানাইডে রূপান্তরিত হয়। যার ফলে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত ০.৫ থেকে ৩.৫ মিলিগ্রাম সায়ানাইডই মানুষের শরীরের জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। এরফলে হার্টঅ্যাটাক, দম বন্ধ হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিয়ে আপনার মৃত্যু হতে পারে। তবে পরিমাণে কম হলে মাথা ধরা, বমি, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। উল্লেখ্য যে, ১ গ্রাম আপেলের বীজে ০.০৬-০.২৪ মিলিগ্রাম সায়ানাইড থাকে। তাই যদি কখনো ভুল করে হলেও মুখে আপেলের বীজ বা কাণ্ড ঢুকে যায়, তৎক্ষণাৎ তা ফেলেদিন। এপ্রিকট, চেরি, পিচের মতো ফলের বীজে সায়ানাইড এক্সিস্ট করে। অবশ্যই এরপর যখনই এই ফলগুলো গ্রহণ করবেন, তখন সম্পূর্ণ সচেতন থাকবেন।
নাম্বার ২। আলু।
সহজলভ্য সবজি আলু। যা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও চিপ্সের মতো খাবারের জন্য আমার কাছে পছন্দের। এছাড়াও আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আলু রোজই দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে আলুর চাহিদা ব্যাপক তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে সবুজ দাগযুক্ত এবং গ্যাজ হয়ে যাওয়া আলু শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সময়ের পূর্বে উত্তোলনের কারণে সবুজ দাগযুক্ত হয় আলুতে। এতে থাকা সোলানাইন নামক বিষাক্ত পদার্থ রান্নার পরেও থেকে যায়। অন্যদিকে গ্যাঁজযুক্ত আলুতে গ্লাইকো অ্যাল্কালয়েড থাকে। তাই সবুজ বা গ্যাঁজ হওয়া আলু খেলে ডায়রিয়া, মাথাব্যাথা হওয়া, এমনকি আপনি কোমায় পর্যন্ত চলে যেতে পারেন। তখন আপনার মৃত্যুও হতে পারে। উল্লেখ্য যে, আলুর সবুজ অংশ কেটে ফেলে রান্না করা কোন সমাধান নয় বলেই জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
৩. শিম বিচি
সবজি তালিকায় শিম পছন্দ নয় এমন মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এই শিমের বিচিতে থাকে উচ্চমানের ফাইবার প্রোটিন। আমাদের শরীরের জন্য ফাইবার প্রোটিন কতোটা প্রয়োজনীয় তাতে প্রশ্ন থাকার কোনো জো নেই। শরীরের শক্তির জন্য শিমে রয়েছে ২০ ভাগ প্রোটিন এবং মস্তিষ্কের জন্য রয়েছে উচ্চমানের কার্বোহাইড্রেড। তবে সমস্যা এখানেই যে, শিমের বিচিতে থাকে ফাইটোহিমাগ্লুটানিন নামক বিষাক্ত রাসায়নিক। যদি আপনি ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় অন্তত ১০ মিনিট সেদ্ধ না করে রান্না করেন, তা আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। উল্লেখ্য যে, যদি আপনি ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার নিচে রান্না করেন, তা ফাইটোহিমাগ্লুটানিন পূর্বের তুলনায় পাঁচগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই শিম রান্নার আগে অন্তত ১০ মিনিট উচ্চ আচে সেদ্ধ করে তার পড়ে রান্না করুন।
নাম্বার ৪। কাজুবাদাম।
সাধারণত মিষ্টি কাজুবাদাম ও তেতো কাজুবাদাম, এই দুই ধরণের কাজুবাদাম পাওয়া যায়। অনেকেই মিষ্টি কাজুবাদামের চেয়ে তিতা কাজুবাদাম বেশি পছন্দ করে। কেননা তিতা কাজুবাদামের গন্ধ আর স্বাদ বেশি। তবে তুলনামূলক ভাবে তেতো কাজুবাদাম এ প্রচুর হাইড্রোজেন সায়ানাইড থাকে। পূর্বেই আমরা বলেছি, সায়ানাইড হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বিষের অন্যতম একটি। ঠিক প্রসেসিং করে যদি আপনি কাজুবাদাম না খান, তা হবে আপনার প্রাণের জন্য হুমকি। যদি আপনি সাত থেকে দশটা তেতো কাজু বাদাম কাঁচা খেয়ে ফেলেন, তো তা হয়ে দাঁড়াতে পারে আপনার প্রাণনাশের কারণ। উল্লেখ্য যে, নিউজিলেন্ড এবং এমেরিকাতে তেতো কাজুবাদাম বিক্রি নিষিদ্ধ।
নাম্বার ৫। লেবু, কমলা।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল কমলা এবং লেবু। লেবুতে সাইট্রিক এসিড এবং কমলায় এসকরবিক এসিড পাওয়া যায় তা আমরা জানি। তবে এই ফল সম্পর্কে যা আমরা জানি তা হলো, এই ফল এবং এর পুরো গাছের কোন অংশ যদি কুকুর বা বেড়াল খেয়ে ফেলে, তা তাদের জন্য হয়ে যেতে পারে মারাত্মক বিষাক্ত। কমলা এবং লেবুতে পাওয়া এরোমেটিক ওয়েল কুকুর, বেড়াল এবং অন্যান্য জন্তু সহ্য করতে পারেনা। তাই কুকুর বা বেড়ালকে কখনো এই ফল খাওয়াতে যাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৩১