নির্বাচনের মাত্র ৭ ঘন্টা আগে প্রতিদ্বন্দিতা থেকে সরে দাড়িয়ে প্রধান বিরোধী-দল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থি তৈমুর খন্দকার মূলত ভোটের আগেই সব উৎকন্ঠা ও উত্যেজনায় পানি ঢেলে দিয়েছেন। ফলে ৩০ শে অক্টোবরের সকালেই নসিক মেয়র নির্বাচন মূলত এক দলিয় নির্বাচনে পরিনত হয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শামিম- আইভি আওয়ামী সমর্থক হলেও এই নির্বাচন পরিনত হয় কেন্দ্রের আ-লীগ বনাম নারায়ণগন্জ্ঞ আ-লীগ ভোটযুদ্ধে। দুই-মেয়াদে প্রায় ৮ বছর দায়ীত্ব পালন করে ও সন্ত্রাস-দূর্নীতি মূক্ত ইমেজের ( বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা প্রায় অভাবনীয়) অধীকারি আইভিকে প্রত্যাখ্যান করে কেন্দ্রীয় আ-লীগ স্পষ্টতই নারায়ণগন্জ্ঞবাসি ও স্থানীয় আ-লীগের আশা-আকাঙ্খাকে দুমড়ে-মুচড়ে সন্ত্রাস ও পেশী শক্তির পক্ষে তাদের অবস্থান ঘোষনা করে।
কেন্দ্রীয় আ-লীগের সমর্থন এতটাই আকাশ-কুশুম ছিল যে আম সমর্থক থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্য সংখক লীগ নেতা-কর্মী আইভীর পক্ষ নেয়। ঐতিহ্যগত ও বর্তমানে সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল বিএনপি ও তাই লীগের সুস্পষ্ট বিভাজনের ফলে নির্বাচনী বৈতরনী পার হবার সম্ভাবনায় বিভোড় ছিল। যদিও বিএনপির জয় ততটা নিশ্চিত ছিলনা যতটা ছিল আইভীর।
ফলে তৈমুরের প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিশ্চিত ভাবেই শামিমের মিরাকুলাস জয়ের ক্ষীণ সম্ভাবনাও নস্বাত করে দেয়। অবশ্য তৈমুরের প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে বিশ্লেষকগন নানা কথার ফুলঝুরি ফোটাচ্ছেন কিন্তু আমি মনে করি বিএনপি মূলত ইভিএম ও তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে চলমান আন্দলনের নৈতিক অবস্থান ঠিক রাখতেই তাদের প্রার্থিকে প্রত্যাহার করেছে। যার বিরুদ্ধে আন্দোলন ঠিক সেই ব্যবস্থা মেনে নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার মত হিপোক্রেসি বিএনপি অন্তর্ত করেনি।
নির্বাচনে আইভির বিশাল বিজয়কে এখন দলীয়করন করতে সরকারের নিঃলজ্জ মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে লীগের গৃহপালিত কলামিস্টরা পর্যন্ত মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন।
আওয়ামিলীগই ফার্ষ্ট আওয়ামিলীগই সেকেন্ড - প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচনে থাকলে তৈমুর তৃতীয়ই হতেন - আনিসুল হক।
নাসিক নির্বাচনের ফলাফল থেকে বিরোধী দলের শিক্ষা নেয়ে উচিত - সুরন্জ্ঞিত।
কাস্ট হওয়া ভোটের ৯৩ শতাংশ পড়েছে আইভি শামিমের পক্ষে, আর এতেই শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সুশিল লীগার আনিসুল হক পর্যন্ত আনন্দে লুটুপুটি খাচ্ছে দিবাসপ্নে এরা এতই বিভোর যে অন্ধ সেজেই তারা প্রলয় বন্ধ করতে চাইছে। আশা করি তারা অতিত দর্শনে বাস্তবতা বুজতে পারবে ....
নসিক নির্বাচন ২০১১
আইভী- ১,৮০,০৪৮ ভোট (৬৫%)
শামিম- ৭৮,৭০৫ ভোট (২৮%)
তৈমুর ও অন্যান্য - ৭%
আর নারায়ণগন্জ্ঞ সিটিকর্পোরেশন যে এলাকাগুরল অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত সেই সংসদিয় আসনগুলর সর্বশেষ নির্বাচনী ফল (২০০৮)
নারায়ণগন্জ্ঞ-৩ [আ-লীগ ৬১%, বিএনপি ৩৫%]
নারায়ণগন্জ্ঞ-৪ [আ-লীগ ৪৮%, বিএনপি ৪৭%]
নারায়ণগন্জ্ঞ-৫ [আ-লীগ ৫৬%, বিএনপি ৪১%]
অর্থাৎ গড়ে ৪১% ভোট ছিল বিএনপির। আর ২০০৮ এর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে এই ৪১% ভোটারই প্রো-বিএনপি; যুক্তির খাতিরে যদি আমরা ধরেও নেই যে এটা ৩৫-৩৮%। যৌক্তিক কারনে এটাও ধরে নেয়া যায় যে প্রো-বিএনপি ভোটের ৯৯% ই আইভির বাক্সে গেছে। আর কট্টর লীগ ও কেনা ভোট মিলিয়ে লীগ তথা শামিমের পকেটে গিয়েছে মাত্র ২৮%।
বিগত পাচ জাতিয় নির্বাচনের ফলাফল থেকে আমরা এটাই জানি যে, হতভাগা এই দেশে প্রো-বিএনপি প্রো-লীগ ভোটার প্রায় ৪২% ও ৪৩% আর বাকি ১৫% সুইং ভোটারই নির্ধারন করে কে যাবে ক্ষমতার মসনদে। এই ১৫% সুইং ভোটার যে আইভীর পক্ষ নিয়ে প্রকারন্তরে লীগ সরকারের বিদাই ঘন্টা ঘোষনা করেছে তা কি হাসিনা-সুরন্জ্ঞিত-হকদের চোখে পড়েছে ? না কি ক্ষমতার রঙ্গিন চশমার জাদুকরী কারিশমায় তারা রাতকেও দিনের মতই উজ্জ্বল দেখছে ?
কতিপয় আওয়ামী সুশিল ও অতিচালাক চশমখোর তৈলবাজ বলার আপ্রান চেষ্টা করছে যে সরকার সেনাবাহিনী ছাড়াই ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুশৃঙ্খল নির্বাচন করতে পরেছে। তাদের কাছে একটাই প্রশ্ন - বিশৃঙ্খলা হওয়ার সুযোগ কী ছিল? লীগের গৃহযুদ্ধে অংশনেয়ার মত স্থানীয় লোকবল ও কিন্তু আদলে শামিমের ছিল না। বরং সামিমের ভারাটে সমর্থকরাও নুন খেয়ে গুন (ভোট) গায়নি। ইভিএম এর ৫৮ কেন্দ্রের (মোট ভোটের ৩৩%) ফলাফল ৩ ঘন্টায় চলে আসায় যে বিশাল ব্যবোধান তৈরী হয় (প্রায় ৫৫,০০০ ভোট) তা হাতে গোনা অবশিষ্ট কেন্দ্রের ফলাফলে ছোট-খাট কারচুপি করে সামাল দেয়া সম্ভব নয় তাই ঐ সকল কেন্দ্রগুলর ফলাফল রাত ৯ টা পর্যন্ত আটকে রেখেও পুকুর চুরি করার সাহস করেনি কারন ভোটারগন ভোট দিয়ে বাড়িতে নয় বরং কেন্দ্রের আশ-পাশেই নিঃশ্বদ্ধ পাহাড়ায় ছিল।