পদ্মা সেতু দুর্নীতি ও দশ মাস ধরে চলে আসা শেয়ার-বাজারের অস্থীরতাকে বাদ দিলে, হাল সময়ে পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সর্বাধীক আলোচিত বিষয় সম্ভবত নারায়ণগন্জ্ঞ সিটিকর্পোরেসন নির্বাচন। এই সিটিকর্পোরেসনের এক জন অধিবাসী ও ভোটার হিসেবে স্বভাবতই নির্বাচন সংক্রান্ত প্রায় সব কিছুই যথাসম্ভব ফলো করছি।
আজ আনুষ্ঠনিক ভাবে সমাপ্ত হল প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারনা তাই ১৫-২০ দিন ধরে চলে আসা নির্বাচনী ডামাডোলে হটাৎ ছেদ পড়ায় কেমন যেন প্রাণহীন হয়ে গেছে আজকের সন্ধা। নিস্তরঙ্গ সন্ধায় তাই ভাবছিলাম আগামী রবিবার যখন ভোটিং বুথে বেলট পেপার হাতে ঢুকব, তখন আমার ভোটটি ঠিক কোন কোন প্রার্থির প্রতীকে পড়বে ?
কাউন্সিলর: ৯ জনের মধ্য থেকে বেছে নিতে হবে মাত্র ১ জন। এদের মধ্যে যে ৩ জনকে চিনি তাদেরকে ভোট দেয়ার প্রশ্নই উঠে না, কারন গত ১৬ বছর ধরে কোন ভাল কাজেই তাদেরকে দেখিনি বরং স্থানীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে তারা রীতিমত আইকন। বাকি ৬ জন যেহেতু অপরিচিত সেহেতু তাদের শিক্ষাগতযোগত্যা, কর্মক্ষেত্র ও গনসংযোগ থেকে পাওয়া ধারনাই নির্ধারন করবে তাদের সম্ভাব্যতা। এই বিবেচনায় শর্টলিস্টেড ৩ জনের এক জন ব্যবসায়ী, ইউরোপ ফেরত প্রবাসী ও অবসর প্রাপ্ত সরকারী প্রকৌশলী। ষাটোর্ধ প্রবাসী ও চল্লিশ ছুইছুই ব্যবসায়ী বোধগোম্য কারনেই এই পদের জন্য অটমেটিক চয়েস নয় তারন তাদের কর্মক্ষত্র থেকে পাওয়া অভিগ্যতা খুব কমক্ষেত্রেই শহরবাসীর জন্য প্রনীত উন্নয়ণ পরিকল্পনা প্রনয়নে কাজে আসবে। এক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত এলজিইডি প্রকৌশলীই অনেকদূর এগিয়ে আছে। অথচ এই এস্ক-ইন্জিনিয়ার এখন শুনছি স্থানীয় রাজনীতিতে জামায়াত-পন্থী, তাই সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত নয়। আগামী ৩৬ ঘন্টায় মনস্থীর করতে হবে ঠিক কাকে ভোট বেদ।
সংরক্ষীত মহিলা কাউন্সীলর: নির্বাচন করতে হবে মাত্র ১ জন অথচ এই শেষ সময়ে এসেও নিশ্চিত নই ঠিক কয় জন প্রতিদ্বদ্ধিতা করছে। এদের প্রচারনা ও লিফফেট দেখে বোঝার উপায় নেই কার কী যোগ্যতা

পাঠকগন ইতীমধ্যেই বুঝতে পারছেন যে এই নির্বাচনে প্রার্থিদের প্রচার-প্রচারনার কী দুঃরাবস্হা। সব প্রার্থীই ফুলের মত পবিত্রতার দাবীদার হলেও নূন্যতম তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ না থাকায় শিক্ষিত, সচেতন ভোটারদের পক্ষেও কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে যোগপ্রার্থী খুঁজে বের করা। এমতাবস্থায় বলার অপেক্ষা রাখে না যে অশিক্ষিত/সল্পশিক্ষিত খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষগুল শুধুমাত্র প্রার্থীদের মিষ্টি কথা অথবা শ-পাচেক টাকার বিনিময়ে তার মূল্যবান ভোটটি দিয়ে দেবে কারন তাদের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব নয় সবার যোগ্যতা-সামর্থের তুলনামূলক বিচার করা (মূল কারন তথ্য প্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা)। এই কাউন্সিলররাই ওয়ার্ড পর্যায়ে আমাদের প্রতিনিধীত্ব করবে যদিও তথ্যের অপ্রতুলতার কারনে আমরা অনেকেই হয়ত ভুল প্রার্থিকে বেছে নেব।
মেয়র: কাগজে কলমে প্রার্থী ৬ জন হলেও মাঠ পর্যায়ে ৩ জন অস্তিত্বহীন। ডাঃ আইভী, শামিম ও তৈমুরের ক্ষেত্রে ভোটারগন তুলনামূলক ভাবে কিছুটা ভাল অবস্থানে কারন মিডিয়ার কল্যানে আমরা এখন জানি তাদের আর্থীক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ও অতীত কর্মকান্ড।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে শামিম ওসমানের মত এক জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী গডফাদারকে নারায়গন্জ্ঞবাসী হাড়ে-হাড়ে চেনে। ৯৬-২০০১ তিনি স্বীয় কার্যকলাপে এমনই নাম কামিয়েছেন যে শুধু নারায়ন্জ্ঞ নয় বরং জাতিয় পর্যায়েই তিনি দুঃশ্চিন্তার কারন হয়ে দাড়ান। শোনা বা পত্রিকার রিপোর্ট বাদ দিয়ে বরং নিজের অভিগ্যতাই বলি, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার রোড-মার্চ কর্মসূচী আটকে দেয়ার জন্য আগের দিন মধ্য রাত থেকেই ঢাকা-চট্রগ্রাম রোডে এলোপাথারী ভাবে খালি ট্রাক ফেলে ৪ লেন রাস্তার উভয় পাশ আটকে দেয়া হয়। রাতের হাইওয়েতে আটকে যাওয়া শত শত আন্তজেলা কোচ ও মালবাহী ট্রাকে চলে নির্বিচার ভাংচুর, লুট, ডাকাতি; এমন কি নারী ধর্ষনের কাহিনী ও বাতাসে চাউর হয় পরদিন সকালে। স্কুলে এসএসসি টেস্ট পরীক্ষা থাকায় পায়ে হেটেই ৮ কিলো রাস্তা পার দেবার সময় দেখেছি ভাংচুর-লুটের ভয়াবহতা ও আটকে যাওয়া মানুষের অবর্ননীয় কষ্ট। বিকেলে পরীক্ষা শেষেও ফিরতি পথে ও সেই একই চিন্ত্র। কিশোর বয়সে ১৬ কিলো রাস্তা হাটার কষ্ট ও ভংচুর-লুটের ভয়াবহতা এতটাই তাজা যে, সুস্হ কারো পক্ষে শামিম ওসমানকে আবার ক্ষমতায় দেখার দঃস্বপ্ন কল্পনায় আনা সম্ভব নয়। মনে প্রশ্ন যাগে যোগ্য বিকল্প থাকা সত্যেও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর অবস্থা কী এতটাই খারাপ যে জনসেবায় ওনার লাঠিয়াল বাহিনীর প্রয়োজন পরে গেছে।
বিএনপি সমর্থিত মিঃ তৈমূর সাহেবের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের তেমন অভিযোগ না থাকলেও ( যদিও তিনি নারায়ণগন্জ্ঞ বোমা হামলার মূল আসামি। অবশ্য বোমা হামলার শিকার শামিম ওসমান তার সংশ্লিষ্টতার ব্যপারে সন্ধিহান ফলে ধরে নেয়া যায় যে ঐ অভিযোগের পেছনে রয়েছে স্হানীয় রাজনীতি) রয়েছে দশের অধিক দূর্নীতির মামলা। এই দশ মামলার অন্যতম হল বিআরটিসি -এর চেয়ারম্যান থাকাবস্তায় লক্ষাধীক টাকার বিনিময়ে হাজার খানেক নারায়ণগন্জ্ঞবাসিকে সরকারী সংস্থাটিতে চাকরী দেয়া। সাম্প্রতীক প্রচারিত এক টিভি টকশোতে তিনি এই অভিযোগ শুধু স্বীকারই করেন নি বরং ভবিস্যতে ক্ষমতা পেলে তিনি আবার ও নারায়গন্জ্ঞবাসীর জন্য একই অপকর্ম করার ঘোষনা দিয়েছেন। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে তিনি কোন আর্থিক সুবিধা নেন নি তবু শুধু স্ব-জেলার অধীবাসি হওয়ায় তিনি যদি জাতীয় পর্যায়ে নিয়োগ প্রকৃয়ায় পক্ষপাতীত্ব করতে পারেন তবে, নবগঠিত এই সিটিকর্পোরেশনের কোটি কোটি টাকায় টেন্ডার প্রকৃয়াগুল যে নিরপেক্ষ হবে না তা নির্দিধায় বলা যায়।
সব শেষে বাকি রইলেন ডাঃ আইভি, যিনি মূলত স্থানীয় জনসমর্থন, অতীত রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও দূর্নীতিমুক্ত তথা ক্লিন ইমেজকে পুজি করে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন। তার বিরুদ্ধে কোন কেস না থাকলেও জনাব শামিম ওসলান বেশ কিছু দূর্নীতির অভিযোগ মিডিয়ায় ও পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। আর অবধারিত ভাবেই অভিযোগসমূহের যে ব্যাখ্যা ডাঃ আইভি দিয়েছেন তা পূর্নমাত্রায় সন্ধেহ দূর করতে না পারলেও প্রতিপক্ষকে চুপ করাতে সমর্থ হয়েছে। এই প্রার্থি আবার রাজনৈতিক ভাবে বর্তমান সরকারের সমর্থক। বর্তমান সরকারের কোন সাফল্য নেই - এটা যেমন সত্য নয় ঠিক তেমনি ভাবে এটাও ঠিক ক্রমবর্ধমান দব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা, শেয়ার-বাজার, আদালত, মন্ত্রীদের নির্লজ্জ ব্যর্থতা সত্যেও চেয়ার আকড়ে থাকা ও তাদের রক্ষার্তে প্রধান মন্ত্রীর বিরামহীন সমর্থন যে অস্বস্তিকর অবস্তা তৈরী করেছে তাতে সরকার সমর্থক কাউকে ভোট দেয়া কতটা যৌক্তিক তা বিবেচনা করা উচিত। তবে সুখবর এই যে সরকার পরিবর্তনের জন্যে ভোট দেয়ার সুযোগ আর মাত্র ২৪ মাস দূরে ....................।
অবস্থদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রর্থিদের সততা-যোগত্যার পাশাপাশি তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ও আমাকে যথেষ্ট বেকায়দায় ফেলেছে টার্গেট ঠিক করতে। স্হানীয় সরকারের এই নির্বাচনে সম্ভবত রাজনৈতিক পরিচয়ের চাইতে ব্যক্তিগত সততা-যোগ্যতাই অধিক গুরুত্বপূর্ন অতএব আরো কিছু চুল-চেড়া বিচার-বিশ্লেষণ করেই ৩৬ ঘন্টা পড় চূড়ান্ত সীদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০০৮ এর নির্বাচনে নিজের ভোট নষ্ট করে এখন যেমন হাত কামড়াচ্ছি ঠিক একই কান্ড আবার ঘটুক নিশ্চিত ভাবেই তা চাই না ................
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:০৫