Blue Moon বা নীল চাঁদ বা নীল চন্দ্র মোটেই নীল না। বরং স্বাভাবিক পূর্ণিমার চাঁদের জোছনার সাথে এর কোনোই পার্থক্য নেই। পার্থক্য কেবল এর নামকরণে। ইদানিংং দেখা যায় অনলাইনে নিউজ পোর্টালগুলিতে অনেক রং মাখিয়ে তথ্যের ভুল উপস্থাপনে Blue Moon কে এক বিরল মহাযাগতিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে। আসলে Blue Moon এতোটা বিরল না।
প্রথমে জেনে নেয়ার চেষ্টা করি Blue Moon আসলে কি?
Blue Moon দুই ভাবে নির্নয় করা হয়। একটি Seasonal Blue Moon এবং অন্যটি Monthly Blue Moon.
প্রথমটি Seasonal Blue Moon যাকে আমরা মৌসুমী নীল চন্দ্র বলতে পারি।
আমরা জানি (না জানলে এখন জানলেন) astronomical season এর দৈর্ঘ্য ৩ মাস এবং চন্দ্রমাসের দৈর্ঘ্য কমবেশী ২৯.৫ দিন। ফলে সাধারনতো প্রতি astronomical season-এ ৩টি পূর্ণিমা হয়। তবে কোনো astronomical season এ যদি ৪টি পূর্ণিমা হয় তাহলে তাদের তৃতীয় পূর্ণিমাটিকে বলা হয় Blue Moon বা নীল চন্দ্র।
অন্যদিকে দ্বিতীয় আরেক ভাবেও Blue Moon নির্নয় করা হয়। তাকে বলে Monthly Blue Moon, যাকে আমরা মাসভিত্তিক নীল চন্দ্র বলতে পারি।
আমরা জানি আমাদের ক্যালেন্ডারের মাসগুলির সর্বচ্চো দৈর্ঘ্য ৩১ দিন আর চন্দ্রমাসের দৈর্ঘ্য কমবেশী ২৯.৫ দিন। ফলে সাধারনতো প্রতি মাসে একটি করে পূর্ণিমা হয়। তবে ৩১ দিনের মাসগুলির ঠিক প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে যদি পূর্ণিমা হয় তাহলে সেই মাসের শেষ দিনেও আর একটি পূর্ণিমা হতে পারে। এই একই মাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমাটিকে বলে Blue Moon বা নীল চন্দ্র।
এবার নিশ্চই বুঝতে পারছেন Blue Moon বা নীল চন্দ্রটি Seasonal Blue Moon অথবা Monthly Blue Moon যেটাই হোক না কেনো কোনোটির সাথেই নীল রং এর কোনো সম্পর্ক নেই। শুধুমাত্র এর নামে নীল আছে, অন্য কোথাও না। তাই আমি শিরনামেই বলেছি “নীল চন্দ্র নীল নহে”।
Blue Moon বা নীল চন্দ্র নমকরণের দরকার কি ছিলো?
সাধারনত প্রতি মাসে একটি করে পূর্ণিমা হয়, এবং প্রতি বছর হয় ১২টি পূর্ণিমা। কিন্তু কোনো কোনো বছর ১২টির যায়গায় ১৩টি পূর্ণিমা দেখা যায়। তখনই দেখা দেয় সমস্যা। সেই সমস্যা দূর করার জন্যই Blue Moon বা নীল চন্দ্র নমকরণের দরকার পরেছিলো।
এবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে দুই ধরনের Blue Moon কেনো রাখা হলো?
এই দুই ধরনের Blue Moon-এর মধ্যে আসল Blue Moon কোনটি?
উত্তর হচ্ছে Seasonal Blue Moon বা মৌসুমী নীল চন্দ্রটিই হচ্ছে অরজিনাল Blue Moon. আর দ্বিতীয় Monthly Blue Moon টি হচ্ছে অপেশাদার জ্যোতির্বিদ James Hugh Pruett এর ভুলের সফল।
Seasonal Blue Moon এর গণনার ভিত্তিকে ভুল বুঝে ১৯৪৮ সালে স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে মাসের দ্বিতীয় পূর্ণচন্দ্রকে James Hugh Pruett সাহেব Blue Moon হিসেবে উল্লেখ করেন। এই ভ্রান্ত সংজ্ঞাটি ছড়িয়ে পড়ে এবং এটিই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আজ, এই ভুলটিকে আর ভুল হিসেবে ধরা হয় না, বরং এই ভুলটি Blue Moon এর দ্বিতীয় সংজ্ঞা হিসাবে বিবেচিত হয়।
এবছর ২০২৩ সালের আগষ্ট মাসের ৩১ তারিখে Blue Moon দেখা যাবে রাতের আকাশে।
গত ১৫৫০ সাল থেকে আগামী ২৬৫০ সাল পর্যন্ত ১,১০০ বছরে
Seasonal Blue Moon এর মোট সংখ্যা ৪০৮ টি।
Monthly Blue Moon এর মোট সংখ্যা ৪৫৬ টি।
অর্থাৎ গড়ে প্রতি আড়াই থেকে তিন বছরে Blue Moon বা নীল চন্দ্র পৃথিবীবাসী দেখে।
আগামী কয়েকটি Monthly Blue Moon এর চার্ট নিচে দেয়া হলো।
২০২৬ সালের ৩১শে মে
২০২৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বর
২০৩১ সালের ৩১শে সেপ্টেম্বর
২০৩৪ সালের ৩১শে জুলাই
২০৩৭ সালের ৩১শে জানুয়ারি
২০৩৭ সালের ৩১শে মার্চ
২০৩৯ সালের ৩১শে অক্টোবর (Halloween Blue Moon)
এবার কয়েকটি Seasonal Blue Moon এর চার্ট নিচে দেয়া হলো।
২০১৬ সালের ২১শে মে
২০১৯ সালের ১৮ই মে
২০২১ সালের ২২শে আগষ্ট
২০২৪ সালের ১৯শে আগষ্ট
উপরের চার্ট দুটি থেকে খুব সহজেই বুঝতে পারছে Blue Moon খুব বিরল কোনো ঘটনা নয়।
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী আগামী ৩১শে আগষ্ট রাত ৭টা ৩৫ মিনিটে পূর্ণিমা হবে, যদিও সন্ধ্যা থেকেই মেঘমুক্ত আকাশে চাঁদের দেখা মিলবে। সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আকাশে চাঁদ উঠবে এবং পরদিন ভোর ৫টা ৩৬ মিনিটে চাঁদ অস্ত যাবে।
তথ্যসূত্র ও ছবি : অন্তর্জাল
বি.দ্র. কেবল প্রথম ছবিটি আমার তোলা এবং এই লেখার জন্য বিশেষ ভাবে নীল রং করা।
=======================================================================
চাঁদ নিয়ে কিছু পুরনো লেখা
চাঁদের বুকে হেঁটে আসা চন্দ্র-মানবেরা
আজ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ
পূর্ণগ্রাস চন্দগ্রহণ ২০১৮
পূর্ণিমা কথন
পুষ্প পূর্ণিমা
বুদ্ধ পূর্ণিমা ও চন্দ্র পূর্ণিমা
আষাঢ়ী পূর্ণিমা
সুপার মুন ২০১৩
সুপার মুন ২০১৫
Blue Moon বা নীল চন্দ্র নীল নহে
হ্যালোইনের নীল চাঁদ
দ্বৈত নীল চন্দ্র