কেষ্টরেই কথাগুলাে কইল কুসুম কলি। কিন্তু কুসুম কলির কথা কেউ কর্ণপাত করলনা, কেউ কোন কথাও কইলনা। “কুসুম কলিদের কথা কেউ কর্ণপাত করেনা”। কুসুম কলিদের কড়ই কাঠের কুঠিরে, কাঁঠাল কাঠের কপাটে কেউনা কেউ কটুক করছে। কটুক কটু করে করছে। করছেতাে করছেই।
উপরের গদ্যাংশের প্রতিটি শব্দের শুরু হয়েছে ক বর্ণটি দিয়ে। এমন অনেক আছে আমাদের জানা। এমন ছোটখাটো লেখা আপনার আমার প্রায় সকলের পক্ষেই ধৈর্য আর সময় ব্যয় করলে তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু যদি বলি ১০ পাতার একটি গদ্যাংশ লিখুন এমনি করে। কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন ১০ পাতা নয় বরং অর্ধশত পাতার উপন্যাস লিখেছেন একজন শুধু ক দিয়ে শুরু শুব্দ ব্যবহার করে। আরো অবাক হবেন এটা যেনে যে তিনি ১টি নয়, বরং ৩টি উপন্যাস লিখেন এইভাবে।
সরদার মোঃ নাজমুল কবির ইকবাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই লেখক ইসমোনাক ছদ্মনামে লিখেছেন এই ৩টি উপন্যাস। তিনটি বইতে মোট ২৭,০০০ শব্দ রয়েছে, যার প্রতিটি শব্দ শুরু হয়েছে ক বর্ণ দিয়ে। উপন্যাসের শেষে প্রধান চরিত্রের মৃত্যু হবার শব্দটি ‘ক’ দিয়ে মেলাতে না পরে শেষ পর্যন্ত কুপোকাত শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
বইটি এখনো আমার পড়ার সুযোগ যদি, ফলে এর ভালো মন্দ কিছুই বলতে পারছি না। কাহিনী সম্পর্কে কোনোই ধারনা না থাকলেও শুধু ক দিয়ে শুরু শব্দ ব্যবহার করে এমন সাহিত্য রচনা বাংলায় এই প্রথম। এই ধরনের সাহিত্যকে বলে টটোগ্রাম। বাংলা সাহিত্যে টটোগ্রাম উপন্যাসের এটাই দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। তার প্রথম বই কেষ্ট কবির কষ্টগুলো প্রকাশিত হয়েছিলো ২০১০ সালে।
২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় ইসমোনাকের দ্বিতীয় বই। ‘ক’ বর্ণের দশ হাজার শব্দ দিয়ে লিখেছেন তিনি এই বইটি।
বইয়ের নাম : কেষ্ট কবির কনফারেন্স
প্রথম প্রকাশ : ২০১৩ ইং
প্রকাশক : প্রজন্ম পাবলিকেশন
শব্দ সংখ্যা : ১০,০০০ টি
বইটির প্রথম কয়েক পতার নমুনা-
কে...?
কেরে...?
কথা কস্না কেন?
কেষ্টরেই কথাগুলাে কইল কুসুম কলি। কিন্তু কুসুম কলির কথা কেউ কর্ণপাত করলনা, কেউ কোন কথাও কইলনা। “কুসুম কলিদের কথা কেউ কর্ণপাত করেনা”। কুসুম কলিদের কড়ই কাঠের কুঠিরে, কাঁঠাল কাঠের কপাটে কেউনা কেউ কটুক করছে। কটুক কটু করে করছে। করছেতাে করছেই। কেষ্টদের কাঠের কুঠিরের কাছে কদমতলার কুয়ার কিনারায় কুসুম কলি কয়েকটা কাপড় কাঁচ্ছিল। কাপড় কাঁচবেনা কেন? করবেটা কী? কাপড় কাঁচবে কে? কেষ্টর “কাজিন” কোমলমতি কিশােরী কন্যা কংকনা কিযে কুৎসিত করেছে কাপড়গুলাে। কিন্তু কংকনাতাে কাপড় কাঁচেনা। কাপড় কাঁচা কিশােরী কংকনার কাছে কতইনা কষ্টের কাজ। কাপড় কাঁচার কঠিন কাজটি কংকনা করবে কেমন করে? কংকনারে কাপড় কাঁচার কথা কইলে, কাপড়তাে কাঁচবেইনা, কেবল ক্যাক্কড় ক্যাক্কড় করে কতক্ষণ কাঁদবে। ক্যাক্কড় ক্যাক্কড় করে কংকনা কাঁদলেই কেষ্টর কনিষ্ঠ কাকিমা কুসুম কলি কইবে—কাঁদিসনে, কাঁদিসনে কংকনা কাঁদিসনে। কাপড় কাঁচার কথা কইলেই কেবল কান্না-কাটি করিস। কাপড়ও কাঁচবিনা, কান্না-কাটিও করবিনা। কান্না-কাটি করলে কিন্তু কিলামু।
কৃপাময়ীর কৃপায় কংকনা কাঁদলনা, কাপড়ও কাঁচলনা। কিন্তু কংকনার কুৎসিত কদাকার কাপড়গুলাে কাঁচবে কে? কাপড় কাঁচবে কেবল কেষ্টর কনিষ্ঠ কাকিমা কুসুম কলিই। কেষ্টর কনিষ্ট কাকু কবি কালিপদ কার্তিকের কুড়িতে কালিকচ্ছের কৃষ্ণ কুঠিরের কর্ণধার কালিদাসের কনিষ্ঠ কন্যা কোমলমতি কালাে-কেশী কুমারী কুসুম কলিরে কাবিন করেছিল।
কলকাতার কোর্ট-কাচারির কাছে “কবি কেষ্ট কুমার কমার্শিয়াল কলেজের” কর্মকর্তা কিনা কালিপদ। কত কাজ কর্মকর্তার, কলেজে কাজ করার কারণে কেষ্ঠর কাকু কালিপদ কলকাতার কেষ্ট কুমার কমার্শিয়াল কলেজের কলােনীতেই কালাতিপাত করছিলেন। কিন্তু কেষ্ট, কেষ্টর “কাজিন” কংকনা, কেষ্টর কাকিমা কুসুম কলি কালিকচ্ছের কবি কুঠিরেই কাল কাটাচ্ছেন। কালিকচ্ছে “কবি কটেজের” কড়ই কাঠের কুঠিরে কোনক্রমে কায়-ক্লেশে কাল কাটাচ্ছে কেষ্টরা। কার্তিকের কুড়িতে কাঠের কুঠিরের কুয়ার কিনারায় কংকনার কয়েকটা কাপড় কাঁচছিল কুসুম কলি। কংকনা কিযে কুৎসিৎ কদাকার করেছে।
কাপড়গুলাে। কুসুম কলির কপালও কেমনতর কাপড় কাঁচারই। কত কিসিমের কাপড় কাঁচে কুসুম কলি ক্লিনিকের কাপড়, কল কারখানার কাপড়, কলেজের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাপড় কাঁচে কুসুম কলি, কাপড় কেঁচে কেঁচে কোন ক্রমে কালাতিপাত করে। কাপড় কেঁচে কালাতিপাত করা কুসুম কলির কাছে কতইনা কঠিন কষ্টের। কিন্তু কষ্টের কথা কুসুম কলি কারে কইব। কী করে কইব, কইয়া কাম কী? “কেউরে কইলেই কেবল করুণা করব, কটাক্ষ করে কথা কইব”। কুসুম কলির কষ্টের কথা কখনাে কাউরে কয়না। কালিপদেরও কয়না, কেষ্টরেও কয়না; কয়না কুমারী কন্যা কংকনারেও। কিন্তু কষ্টে কখনও কখনও কাঁদে কুসুম কলি: কুঁকিয়ে কুঁকিয়ে কাঁদে। কাপড় কাঁচে কষ্ট করে। “কাপড় কাঁচা কেবল কুসুম কলির কাজ”। কালে কালে কত কসুম কলিরা কেবল কাঁদে, কেবলি কাপড় কাঁচে, কেবলি কর্তাদের কলিজার কোমল কুঠরির কাঙ্ক্ষিত কামনাগুলােকে কামিয়াবি করে, কেবলই কর্তাদের করুণায় কালাতিপাত করে। কুসুম কলিদের কপালে কেবলই কষ্ট। কুয়ার কিনারায় কাপড় কাঁচতে কাঁচতে কুসুম কলি কর্ণপাত করল, কেবা কারা কাঠের কপাটে কট কট করছে। কুসুম কলি কিছুটা কঠিন কিছুটা কর্কশ কণ্ঠে কইল; কেষ্ট কইরে, কেষ্ট...। কেষ্ট কথা কনা ক্যান...করছিস কী? কসনা কেন, কে কপাটে কটকট করছে? কেষ্টটাও কেমনতর, কখন কী করেনা করে, কী কমু। কেষ্ট...কেষ্টরে.... |
কুঠিরের কোণায় কাঁঠাল কাঠের কেদারায় কেষ্ট কাশছিল। কেক্কড় কেক্কড় করে কাশছিল। কেষ্ট কাশে, কঠিন কণ্ঠে কেক্কড় কেক্কড় করে কাশে, কার্তিকের কুড়িতে কিনা কিছুটা কম কাশে। কাশবেনা কেন? কাশবেইতাে, কারণ কেষ্টর কণ্ঠেত কফের কুন্ডলি করেছে। কেষ্টর কলিজার কোমল কুঠরিতেও কঠিন কঠিন কষ্ট, কলিজার কষ্ট, কফের কুন্ডলিইতাে কাশের কারণ। কাকিমার কথা কর্ণপাত করে কেষ্ট কাশতে কাশতেই কইল, কী কও কাকিমা?
কাকিমা: কপাটে কট কট করছে কে?
কেষ্ট: কেমনে কমু কাকিমা?
: কসনা ক্যান কারা কপাটে কট কট করছে, কেনইবা করছে। কাকিমার কথায় কেষ্ট কপাটের কাছে কাউকে কইল;
: কে? কে কপাটের কাছে? কে কট কট করছেন? কেষ্টর কথায় কোমল কণ্ঠে কাঙ্গাল কানাই কইল;
: “করুণা করে কর্ণপাত করবেন কি”? কয়টা কথা কমু।
: কন কী কথা?
: কর্তা কোথায়?
: কোন কর্তা?
: কবি কুঞ্জের কর্ণধার কবি কালিপদ কোথায়?
: কেন? কবি কালিপদকে কেন? কবি কালিপদের কাছে কীসের কাজ?
: কয়টা কথা কমু।
: কী কথা?
: কিছু করণীয় কাজের কথা কমু। কোথায় কবি কালিপদ?
: কিন্তু..
: কিন্তু কী?
: কবি কালিপদ কথা কইবেনা।
: কেন? কেন? কথা কইবেনা কেন? কারণটা কী?
: কার্তিকের কুড়িতে কবি কালিপদ কোন কথা কয়না।
: কী কন, কথা কইবেনা কেন?
: কেমনে কমু।
: কিন্তু কথাগুলাে কবি কালিপদরেই কওয়ার কাম। কীভাবে কমু। কনতাে?
: কানাই কাঙ্গালের কথায় কিছুটা কর্কশ, কিছুটা কঠিন কণ্ঠে কেষ্ট কইল; কথা কইবে কেন? কইয়া কাম কী? কথা কইলে কেবল ক্যাচাল করে।।
কিছু কইলেই করে কাপ-কাপ। কারাে কাছে কোমল করে কোন কষ্টের কথা কইলেই কেবল করবে করুণা। কটাক্ষ করে কথা কইবে কেউ কেউ, কলংকিত করবে ক্যারিয়ার। কথা কইয়াইবা কাম কী? কষ্টতাে করবে কেবল কেষ্টই। “কেষ্টদের কাজই কেবল কষ্ট করা”। কথাগুলাে কইতে কইতে কেষ্ট কয়েকবার কাশলাে। কেক্কর কেক্কর করে কাশলাে।।
কাশতে কাশতেই কাঁদ কাঁদ্ কণ্ঠে কেষ্ট কইল...
কইবেনা, কইবেনা, কবি কালিপদ কখনােই কথা কইবেনা, কিছু। কইলে কুয়ার কিনারে কাকিমা কাপড় কাঁচছে, কাকিমারে কওগে, কেমন।
কেক্কর কেক্কর করে কাশছেই। কথাহীন কিছুক্ষণ কাটল। কাঙ্গাল কানাই কুর্ণিশ কদমবুচি করে কুয়ার কিনারায় কেষ্টর কাকিমা কুসুম কলিরে কইল; কাকিমা...
: কী? : কয়টা কথা কমু।
: কও কী কথা কইবা।
: কষ্ট করে কথাগুলাে কর্ণপাত করবেন কিন্তু কাকিমা...
: করমু।
: করবেন কইছেনতাে?
: কইলামতাে করমু। কও কী কথা কইবা।
: কাকিমা।
: কী?
: কবি কালিপদ কাকু কোথায়?
: কেন? কালিপদকে কেন?
: কয়টা কথা কমু।
: কও।
: কালিপদ কাকুরে কমু।
: কেন? কালিপদরে কেন?
: কারণ কর্তাযে কালিপদরেই কথাগুলাে কইতে কইছে।
: কোন কর্তা?
: কবি কর্তা।
: কবি কর্তা কে?
: কেন? কালিকচ্ছের “করিমুদ্দিন কমার্শিয়াল কলেজের কর্মকর্তা কবি কায়কোবাদ।
: কে....কে! কার কথা কইলা?
: কবিগুরু কায়কোবাদের কথা কইলাম।
: কোন কলেজের কর্মকতা?
: করিমুদ্দিন কমার্শিয়াল কলেজের কর্মকর্তা।
: কী কইলা? কোথাকার?
: কালিকচ্ছের। কালিকচ্ছটা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের কুড়ি ক্রোশের কাছাকাছি কুমিল্লারই কিয়দাংশ, কুন্ডা কাডানিসার, কুট্টাপাড়া, কাজিউড়া কিংবা কালিকচ্ছ। কেউ কেউ কয়, কালিকচ্ছ কিনা কালের কিংবদন্তী। কালে কালে কতনা কাব্যকার কাহিনীকার কবিগণ কালাতিপাত করেছে। কিংবদন্তী কালিকচ্ছে। কালিকচ্ছের কাজী কটেজের কর্ণধার করিম কাজী, কিষাণ কুঠিরের কর্ণধার কৈলাশ কর কলেজের কাছের কদমতলার কাঞ্চন কিংবা করুণারা কেবলই কিংবদন্তী। কালিপদের কথা কী কমু, কতনা কঠিন কোমল, কাব্য কাহিনী কবি কালিপদের। কালিকচ্ছের কেউ কেউ কালিপদরে কইত কিংবদন্তীর কবি। কেউ কেউ কালিপদরে কবিগুরু করেও কয় কবিগুরু কালিপদ। কিন্তু কেষ্ট, কেষ্টইবা কম কীসের? কতনা কাব্য কবিতা, কতনা কিচ্ছা কাহিনীর কাহিনীকার কবি কেষ্ট। কথায় কথায় কতনা কাব্য কবিতা কইত কবি কেষ্ট। কেষ্টর কল্প-কাহিনী কর্ণপাত করেনি কে? কতইনা কোকিল কণ্ঠে করুণাময়ীর কীর্তন করত কবি কেষ্ট।
কার্তিকের কুড়িতে কিষাণ কুমারের কুটিরে কবিগান করার কালে কেষ্ট কত কোমল কণ্ঠে কবিগান করেছে। কুসুম কোমল করে করুণাময়ীর কীর্তন করতে করতে কজনাকে কাঁদিয়েছে কেষ্ট। কেষ্টর কীর্তন কর্ণপাত করে কাঁদেনি কে? কালে কালে কতজনাই কেঁদেছে, কুঁকিয়ে কুঁকিয়ে কেঁদেছে। কাঁদবেনা কেন? কবিগানে কিংবা কীর্তনেতাে কেষ্ট কেবল কথাই কয়না। কলিজার কোমল কুঠরির কষ্টের কথাগুলােই কইত। “কষ্টের কথায় কাঁদেনা কে”? কালিকচ্ছের কবিগণ কয় কেষ্ট কিনা কালের কণ্ঠ, কথায় কথায় কাব্য, কথায় কথায় কবিগান, কথায় কথায় কীর্তন কওয়াই কিনা কবি কেষ্টর কৃতিত্ব। কৃতিত্বের কারণেই কালিকচ্ছের কবিগণ কেউ কেউ কয় কালের কণ্ঠ কেষ্ট।
লেখক ঠিক এভাবেই লিখেছেন ১০,০০০ শব্দের এই বইটি। সুযোগ হলে পড়ে দেখার ইচ্ছে রইলো আমার। আপনাদের কারো কাছে বইটির পিডিএফ কপি থাকলে শেয়ার করতে পারেন।
কেষ্ট কবির কষ্টে কথা - ১
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৯