আসলে ঢাকাতে রাতের আকাশ দেখার সুযোগ অতিঅল্প। আমারতো নেই বললেই চলে। যাদের বাসায় খোলা ছাদ আছে তারা ইচ্ছে করলে রাতের কালো আকাশের দিকে তাকাতে পারেন সত্যি, তবে খুব একটা কিছু দেখতে পান না। আমার সেই সুযোগও নাই। ঢাকার আকাশে সবচেয়ে বেশী হচ্ছে আলোক দূষণ (Light pollution)। চারপাশে এতো আলোর কারণে আকাশের তারাদের দেখতে পাওয়ার সুযোগ গেছে কমে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে অল্পো কিছু বড় বা উজ্জ্বল তারাদের দেখতে পাওয়া যায়। আলোক দুষণ ছাড়াও রয়েছে ধুলা আর ধোঁয়ার দুষণ। পাতি কথায় আলো-ধুলা-ধোঁয়ার কারণে ঢাকায় রাতের আকাশে তারা দেখার সুযোগ একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে।
আপনারা হয়তো ভাবছেন হঠাৎ করে রাতের আকাশ-আলো-ধুলা-ধোঁয়া নিয়ে পড়লাম কেনো!
আসলে এখন এই সময়ে পৃথিবী থেকে ভোরের আগে শেষ রাতের আকাশে পাঁচটি গ্রহকে এক সাথে প্রায় একই সরল রেখায় দেখতে পাওয়া যাবে। এবং এটি দেখা যাবে পৃথিবীর প্রায় সব যায়গা থেকেই। সেই সাথে এটি দেখার সুযোগ মোটামুটি এখন থেকে এই মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রইবে।
অর্থাৎ আপনি যেখানেই থাকেন সেখানে যদি পূর্বদিগন্ত উন্মুক্ত ও আলোহীন থাকে তাহলে শেষ রাতে বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনি এই পাঁচটি গ্রহকে খালি চোখেই দেখতে পাবেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এরা আকাশ জুড়ে প্রায় সোজা একটি সারিতে সারিবদ্ধ হয়ে দেখা দিবে। যদিও এখন থেকেই এদের দেখার সুযোগ আছে তবে জুনের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে।
রাতের আকাশে একসাথে পাঁচটি গ্রহ দেখার সেরা সুযোগের জন্য, সকালের গোধূলির আগে দক্ষিণ-পূর্ব দিগন্তের দিকে তাঁকাতে হবে আপনাকে। সেই সময় শুক্র এবং বৃহস্পতি আকাশের উজ্জ্বলতম খ-বস্তু হিসেবে সহজেই আপনার চোখে পড়বে। অন্যান্য গ্রহগুলি সনাক্ত করতে আপনাকে হয়তো মোবাইলে স্টার চার্টের কোনো একটি অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু এরা মোটামুটি একটি সোজা রেখা বরাবর অবস্থান করবে তাই অন্য সময়ের তুলনায় এদের খুঁজে পাওয়া বেশ সহজ হবে। এছাড়া অন্য গ্রহগুলিকে দেখতে টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে হবে।
ভেরের আকাশের পূর্ব দিগন্তে বুধ গ্রহ থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে দক্ষিণে উঁচুর দিকে শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং দূরে শনি গ্রহ দেখা যাবে। যদিও বার বার বলছি ৫টি গ্রহকে খালি চোখে দেখা যাবে। তবুও ধরে নেন আপনি বুধ গ্রহটিকে দেখতে পাবেন না বা সনাক্ত করতে পারবেন না। বুধ গ্রহ খুঁজে পাওয়া খুবই শক্ত। যদিও বুধ গ্রহকে খুঁজে পাওয়ার এটাই সবচেয়ে ভালো সময়, তবুও আমরা কেউই এটিকে সনাক্ত করতে পারবো না বলেই আমার বিশ্বাস। অন্যগ্রহগুলিকেও খুঁজে পাওয়া খুব সহজ হবে তা না। আগেই বলেছি শুক্র আর বৃহস্পতি সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখা যাবে।
পূর্বাকাশে এমন কোনো পরিচিত তারা বা তারা মন্ডল থাকবেনা যা থেকে সহজে গ্রহগুলিকে নির্দিষ্ট করে সনাক্ত করা যাবে। তবে সম্ভবতো একটু ভালো করে খেয়াল করলে প্যাগাসাস তারামন্ডলের (Pegasus Constellation) চারটি বড় তারা মিলে তৈরি হওয়া বড় চতুর্ভুজটি খুঁজে পাবেন। এই চতুর্ভুজের ঠিক নিচেই পাবেন বৃহস্পতি ও মঙ্গল গ্রহ দুটিকে।
যাইহোক, যদিও বর্তমাণে চাঁদ মামাকে সন্ধ্যার পরথেকেই আকাশে দেখা যাবে এবং মাঝ রাতের ঘন্টাখানে পরেই পশ্চিমাকাশে অস্ত যাবে, কিন্তু এই মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে ক্ষয়প্রাপ্ত অর্ধচন্দ্রের দেখা পাবেন রাতের আকাশে গ্রহগুলির কাছাকাছি। ১৯ তারিখ রাতে চাঁদকে দেখা যাবে শনি গ্রহর কাছে। ২২ তারিখ রাতে চাঁদ থাকবে বৃহস্পতি গ্রহের কাছে এবং ২৩ তারিখ ভোর রাতে চাঁদকে দেখতে পাবেন মঙ্গল গ্রহের নিচে বসে থাকতে।
সম্ভবতো আগামী সপ্তাহে আমি নাগরির আশ্রমে ২ রাত কাটাবো এই গ্রহের মেলা দেখতে।
এই লেখাটি পড়ে কোনো একজনেরও যদি আগ্রহ জাগে আকাশের দিকে তাকাতে, তাতেই আমি তুষ্ট।
ছবি : stellarium থেকে স্কিনশট নেয়া।
বি.দ্র. : আমি সাধারণত প্রথম পাতায় একাধিক পোস্ট করি না। কিন্তু ইদানিং দেখতে পাচ্ছি তারিখ ঘুরে গেলেও পোস্ট প্রথম পাতা থেকে সরছে না। এই লেখাটি তৈরি করতে শুরু করেছি গতকাল থেকে। আজকে সন্ধ্যার পরে তৈরি করা হয়ে গেছে পুরপুরি। কিন্তু প্রথম পাতায় একটি পোস্ট থাকার কারণে এটি পোস্ট করিনি। রাত ১২টা পেরিয়ে গেছে বলে এখন এই পোস্টটি করছি।
=======================================================================
আরো কিছু পুরনো লেখা
রাতের আকাশ ও তারা পরিচিতি
বুধ গ্রহ
শুক্র গ্রহের আদি-অন্ত
বৃহস্পতি গ্রহ
জুপিটার ও ভেনাস ২০১৭
এবার শনি গ্রহ দেখুন
আকাশে গ্রহের হাট
চাঁদের বুকে হেঁটে আসা চন্দ্র-মানবেরা
আজ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ
পূর্ণগ্রাস চন্দগ্রহণ ২০১৮
পূর্ণিমা কথন
পুষ্প পূর্ণিমা
বুদ্ধ পূর্ণিমা ও চন্দ্র পূর্ণিমা
আষাঢ়ী পূর্ণিমা
সুপার মুন ২০১৫
Blue Moon বা নীল চন্দ্র নীল নহে
হ্যালোইনের নীল চাঁদ
দ্বৈত নীল চন্দ্র
২২ ডিগ্রী সৌর বর্ণবলয়
ক্রপ সারর্কেল
ধূমকেতু নিওওয়াইজ / Comet NEOWISE
অধিবর্ষের আদি-অন্ত
=======================================================================
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২২ রাত ১:১৭