আমাদের এক বন্ধু ছিলো নাম দিদার। ওর জীবন নিয়ে একটি আলাদা কাহিনী লেখা চলে। নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে একটা সময় ও ছোট একটি চায়ের দোকান দেয়। দেখতে দেখতে ওর চায়ের নাম ছড়িয়ে পরে। এলাকার সবাই সেখানে চা পান করতে যেতো। দিদার বিক্রি করতো দুধ চা। গরুর দুধের দুধ চা। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে ও গরুর দুধের সাথে পানি, চিনি, সামান্য কনডেন্সড মিল্ক, বিসকিটের গুরা, ডিম ইত্যাদি দিয়ে একটি আলাদা দুধ তৈরি করে নিতো। ওর দোকানে দুধ চায়ে প্রসংসা করতো সবাই, গরুর দুধের দুধ চা। একদিন দিদার ঠিক করলো দুধের সাথে আর ঐসব মিশাবে না। গরুর খাঁটি দুধ দিয়েই চা তৈরি করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। খাঁটি দুধের চা তৈরি হলো। কিন্তু তখন দেখা গেলো ওর কাস্টমারেরা অভিযোগ করতে শুরু করলো। দিদার নাকি দুধে ভেজাল করছে! চায়ে আগের মতো টেস্ট নাই, পানসা হয়ে গেছে। দিদার চটজলদি খাঁটি দুধ বাদ দিয়ে তার আগের রেসিপিতে ফিরে গেলো।
প্রায় ২০ বছর আগের কথা হবে। আমরা ৪ বন্ধু গেছি মাধবকুণ্ড ঝর্ণায়। তখন ঝর্ণাটা এমন খাঁচায় বন্দি ছিলো না। আমরা ঝর্ণার উপরেও উঠে গিয়েছিলাম। ফেরার সময় সদ্য নির্মান হওয়া পর্যটন রেস্তরায় বসেছি। সিলেটে এসে চা না খেলে চলে!! সকলেই চায়ের অর্ডার দিলো, শুধু আমি সেভেন আপ দিতে বললাম। কিছুক্ষণ পরে চা আসলো। টিপটে গরম পানি, দুধের পট, চিনি আর টি-প্যাক। টি-প্যাক দেখে সবার মাথা গরম। তার উপরে ওয়েটার বলে গেলো সব দুধ যেনো শেষ না করে ফেলি। বেচারাতো জানে না, পাগলদের সাঁকো নাড়ানোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে গেছে। দুধ-চিনি এক ফোটাও অবশিষ্ট ছিলো না।
কলকাতায় এখনো মাটির ভাড়ে দুধ চা পাওয়া যায়। ছোট ছোট ভাড়ে দুধ চা। পথের ধারেই দাঁড়ি ছোট ছোট চুমুকে সেই চা পান করা শেষ হলে পাত্রটি ফেলে দেয়, দ্বিতীয়বার ব্যবহার হয় না। আমি কখনো সখনো চা পান করি বলেই যখন পান করি তখন বেশ কাপ ভরে বেশী করেই পান করি। অল্পতে আমার প্রাণ ভরে না। তাই এই মিনি সাইজের ভাড়ের চা আমাকে খুব একটা টানে না। তারপরেও একবার ট্রাই করেছিলাম, পোড়া মাটির আলাদা একটা গন্ধ আছে। আমার খুব একটা ভালো লাগেনি।
মাস কয়েক আগে আমারা কয়েক বন্ধ নাগরি যাবার সময় পথেই মাটির ঘর রেস্টরেন্টে থেমে ছিলাম। তখনও ওদের কোনো খাবার তৈরি হয়নি, আছে শুধু চা। বেশ দামী সব চা। চা এলো মাটির নকশাদার কাপে। তাতেই যা শান্তি, স্বাদ আহামরি কিছু না। এতো লোক ওদের এই ছোট্ট রেস্তরায় খেতে আসে যে দুইবার আমরা সিরিয়াল না পেয়ে অন্যখানে চলে গিয়েছিলাম। তাদের চায়ের এমন মেরমেরা স্বাদ হবে সেটা আশা করি নাই।
উৎসর্গ - নূর মোহাম্মদ নূরু
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৩৪