সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা কাকাবাবু সিরিজের ৪র্থ বই “ভূপাল রহস্য”।
সিরিজের ১ম বই “ভয়ংকর সুন্দর” ছিল কাশ্মীর এলাকায় একটি মূর্তির মাথা উদ্ধারের কাহিনী নিয়ে লেখা।
২য় বই “সবুজ দ্বীপের রাজা” ছিল আন্দামানে বিদেশী বিজ্ঞানীদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে গল্প।
৩য় বই “পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক” ছিল নেপালের হিমালয়ের পাদদেশে ইয়েতি রহস্য নিয়ে।
আজ কাকাবাবু সিরিজের ৪র্থ বই “ভূপাল রহস্য” কাহিনী সংক্ষেপ লিখবো।
সতর্কতা : কাহিনী সংক্ষেপটি স্পয়লার দোষেদুষ্ট
ভূপাল রহস্য
কাহিনী সংক্ষেপঃ
সন্তুর ছোটদিদির বিয়ে হয়েছে ভূপালে, তার বরের ছোট ভাই নিপু বেরাতে এসেছে সন্তুদের বাসায়। বেরাতে এসে সে জানালো ভূপালে গত কয়েক দিনে তিনটে খুন হয়েছে। কাকাবাবুকে এই সব শোনাতে গেলে তিনি খুব বিরক্ত হলেন, তিনি তো গোয়েন্দা নন।
নিপুদা ভূপাল ফেরার সময় সন্তুকে নিয়ে যেতে চাইলেন, তখন “পাহার চূড়ার আতঙ্কের” গাইড “মিংমা” বেড়াতে এসেছিলো সন্তুদের বাড়িতে, তাই সন্তু আর মিংমা নিপুদার সাথে ভূপালে গেল।
নিপুদাদের পাশেই থাকে ধীরেনদা আর তার পাশের বাড়িতেই থাকতেন অর্জুন শ্রীবাস্তব। কদিন আগে অর্জুন শ্রীবাস্তবের লাশ পাওয়া গেছে পাশের পার্কে গলা কাটা অবস্থায়। অর্জুন সাহেব খুবই নিরীহ টাইপ বই পড়ুয়া মানুষ ছিলেন। ধিরেনদার সাথে অর্জুন সাহেবের বাড়িতে গিয়ে সন্তু দেখল সেখানে প্রচুর বই রয়েছে। তার মৃত্যুর পর থেকে তার পোষা কুকুরটি সারাক্ষণই কেঁদে চলেছে জোর গলায়।
পরদিন সন্তুরা বেরাতে যাবে পাঁচমারি, সেদিনই ওরা রেডিওতে খবর শুনল যে ভূপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অধ্যাপক ডঃ চিরঞ্জীব শাকসেনাকে ২৪ ঘণ্টা যাবত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পাঁচমারিতে এসে সন্তুর জামাই বাবুর অফিস কলিগ বিজয় সাকশেনার সাথে দেখা হল, তিনি ডঃ সাকশেনার ভাতিজা। তার চাচা যে নিখোঁজ সেটা তিনি জানেই না।
পাঁচমারিতে রাতের বেলা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পরে তাই রাতে সন্তুরা সবাই আগুনের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। তখনই তারা হঠাত করে দুটি গুলির শব্দ শুনল। সকালে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো সার্কিট হাউসে থাকা বিজয়কে কে বা কারা রাতে এসে গুলি করেছে। তার উড়ুতে গুলি লেগেছে, এখন হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
দুদিন সেখানে বেরিয়ে সন্তুরা ফিরে আসে ভূপালে। পরদিনই ধীরেনদারা সপরিবারে কাছাকাছি ভীমবেঠকাতে বেরাতে গেলেন সন্তুকে নিয়ে। ভীমবেঠকাতে আছে বড় বড় পাথরের চাই আর অনেকগুলি গুহা। প্রতিটা গুহাতেই পাথুড়ে যুগের গুহামানবদের আঁকা অনেক ছবি আছে। ডঃ চিরঞ্জীব প্রথম এটার কথা ধীরেনদাকে জানান। তিনি এই গুহার ছবিগুলির ফটো তুলতেন, এগুলি নিয়ে গবেষণা করতেন। এখানকার একটা বড় গুহায় একজন সাধু আস্তানা গেড়েছেন। কিছুদিন আগে ভূপালে মনমোহন সাহেবের হত্যার পরে তার চাকরকে এখানেই জিভ কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। এখানে ১৩০টা গুহা আছে, সন্তুরা ঘুরে ঘুরে তা দেখতে লাগলো। হঠাতই সন্তু লক্ষ্য করলো বেশ বড় একটা গুহাতে কোন ছবি নেই, তবে মনে হচ্ছে বেশ কয়েক যায়গায় ছবি ছিল সেগুলি ঘসে ঘসে মুছে ফেলা হয়েছে। তখন গুহাতে ছিল সন্তু, ধীরেনদার ছেলে দীপ্ত আর মিংমা। হঠাত করে বাইরে একটা বিকট চিৎকার শুনে মিংমা দৌড়ে বাইরে গেল, আর ওরা ভিতর থেকে একটা আর্তনাদ শুনতে পেল মিংমার। বাইরে বেরিয়ে সন্তুরা দেখে মিংমা মাটিতে পরে আছে আর তার সামনে দাড়িয়ে আছে আদিম এক গুহামানব, হাতে পাথরের মুগুর নিয়ে। মিংমার কানের কাছে কেটে গেছে আঘাতের কারণে, রক্ত ঝরছে।
ধীরেনদা আক্রমণের কথা শুনে ভাবলেন কোন পাগলের কাজ, তাই কোন পাগল এখানে আছে কিনা সেটা জানার জন্য তারা সবাই গেল সাধুজীর কাছে। সেখানে গিয়ে তো সবার চোখ ছানা ভরা। সন্তু অবাক হয়ে দেখল কাকাবাবু বসে আছেন সন্ন্যাসীর আস্তানায়। কাকাবাবু জানালেন যে তিনজন খুন হয়েছেন তারা তিন জনই ছিলে ইতিহাসের গবেষক ও পণ্ডিত। আবার তাদের একজনের সাথে কাকাবাবুর ব্যক্তিগত পরিচয়ও ছিল। এরপর আবার ইতিহাসের আরেক পণ্ডিত নিখোঁজ হয়ে গেলেন। তাছাড়া প্রথম যে তিনজন খুন হয়েছেন তারা পরস্পরকে চিনতেন। তাই বাধ্য হয়েই তিনি ভূপালে এসেছেন।
কাকাবাবু জানালেন আগামী দু তিন রাত তিনি, মিংমা আর সন্তু এই গুহা গুলিতে থাকবেন, এর আগেও তিনি চিরঞ্জীব সাকশেনার সাথে এখানে রাত কাটিয়েছিলেন। সবাই মিলে এবার আবার শহরে ফিরে এলেন কিছু কেনাকাটা আর কাকাবাবু কয়েকজনের সাথে আলাপ করার জন্য। কয়েক যায়গায় দেখা করে শেষে কাকাবাবু গেলেন চিরঞ্জিবদের বাড়িতে সেখানে গিয়ে তার স্ত্রীর সাথে আলাপ করে জানা গেল মৃত তিন ইতিহাসবিদ প্রয়ই এই বাড়িতে আসতেন, তারা গুহার সাংকেতিক লিপির পাঠ উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন, কিছুটার উদ্ধারও করতে পেরেছিলে।
কাকাবাবুরা প্রথম রাত র্নিবিগ্নে কাটিয়ে দিলেন, শুধু রাতে জিভ কাটা একজন লোককে দেখতে পেলেন, এর মনিবকে হত্যা করে এর জিভ কেটে দিয়েছিলো হত্যাকারীরা। এদিকে পরদিন সকালেই চিরঞ্জীব সাহেব কাকাবাবুর আস্তানায় হাজির হলেন। তিনি জানালেন বিদেশ থেকে এসেই যখন তিনি দেখলেন তার তিন ইতিহাসবিদ বন্ধ খুন হয়ে গেছে তখন বুঝতে পারলেন তার উপরেও হামলা হতে পারে, তাই তিনি চুপচাপ লুকিয়ে পরলেন পাঁচমারি তে গিয়ে তার ভাতিজাকে নিয়ে। কিন্তু সেখানে গিয়েও রেহায় পান নি, তার উপরে হামলা হয়ে ছিল, গুলি লেগেছিল তার ভাতিজার। তার স্ত্রীর কাছে কাকাবাবুর কথা শুনেই তিনি এখানে এসেছেন।
চিরঞ্জীব সাহেব জানালেন তাদের এক বন্ধু গুহার চিত্রের মধ্যে কিছু প্যাটান দেখতে পেয়ে সেগুলি থেকে পাঠ উদ্ধার করেন। সেই লেখার নির্দেশ মত তারা একটা গুহায় একটা কঙ্কাল আর দামি কটা পাথর পেলেন। পত্রিকায় সেই খবর না জানিয়ে তারা তা মিউজিয়ামে দিয়ে দিলেন। সমস্ত চিত্রগুলির মধ্যে আর পাঁচ যায়গার ছবিগুলিতে আরও কিছু লেখা আছে বলে তারা বুঝতে পারলেন। সেগুলি অন্য ছবিগুলির মত ততো পুরনো নয়। যে সময় এই ছবিগুলি আঁকা হয়েছিল তখন কিন্তু লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো। তবুও তারা যা উদ্ধার করলেন সেখান থেকে তেমন কিছু বুঝতে পারলেন না। তবে এটা বুঝা গেলো যে কোন একটা গুপ্তধনের ইঙ্গিত রয়েছে সেগুলির মধ্যে।
রাতের বেলা আবার কাকাবাবু, ধিরেনদা, সন্তু আর মিংমা গেলো গুহাগুলিতে। কাকাবাবু বললেন তিনি ছবির সংকেত বুঝতে পেরেছেন। সেই সংকেত ধরে সবাই মিলে দুটি গুহা খুঁজে বের করলো। গুহার ভেতরে মেঝে অল্পএকটু খুড়তেই ওরা সেখানে একটা একহাত লম্বা সোনার মূর্তি পেলো। তখনই বাইরে দূরে পায়ের শব্দ শুনতে পেলো। ওরা তাড়াকাড়ি করে মূর্তিটা নিয়ে বেরিয়ে চলে এলো। গাড়ির কাছে ফিরে এসে কাকাবাবু বললেন এখনই যাবেন না, অপেক্ষা করবেন। তার কিছুক্ষণ পরেই ধুম ধুম করে দুটি বোমা ফাটল। কাকাবাবু বললেন ওরা যেটি পেয়েছে সেটি আসলে সোনার না, সামান্য লোহার মূর্তি। তাছাড়া এই মূর্তিটা কাকাবাবুই সাথে করে ঝোলায় ভরে নিয়ে এসেছিলেন। আর গুহার গর্তে দুটি গ্যাস বোমা রেখে এসেছিলেন। বোমাগুলিতে লোহার আঘাত লাগলেই ফেটে যাবে আর এর আশেপাশের সবাই অজ্ঞান হয়ে যাবে।
ডাকাতেরা তাদের কাজ করতে গিয়ে সেই বোমা ফাটিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো। কাকাবাবুর আগে থেকেই পুলিশের কাছে খবর দিয়ে রেখে ছিল, তাঁরাও একটু দূরে লুকিয়ে ছিল। বোমা ফাটার পরে পলিশরা গিয়ে অজ্ঞান ডাকাতদের তুলে নিয়ে আসে। এভাবেই শেষ হয় ভূপাল রহস্যের।
পর্যবেক্ষণ - বিজয় আসলে চিরঞ্জীবের ভাতিজা, কিন্তু এক যায়গায় তাকে ভাই বলা হয়ে ছিল।
এপিগ্রাম :
১। কোন বড় শিল্পীকে যদি সিনেমার পোস্টার আঁকতে বলা হয় তাহলে তিনি নিশ্চয় চটে যাবেন।
২। বিপদের মধ্যে না পরলে বিপদকে জয় করা যায় না।
৩। ডাকাতরা সব একই জাতের পাখি।[/sb
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬